গত ২৮ সেপ্টেম্বর, প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথন (১৯২৫-২০২৩) মারা গিয়েছেন। তাঁর কর্মজীবনের প্রথম দিকে, তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরিবার মনে করেছিল যে তিনি তাঁর বাবার মত একজন চিকিৎসক হবেন। কিন্তু, তিনি চিকিৎসা পেশার দিকে ঝোঁকেননি। বরং, বেছে নিয়েছিলেন কৃষিক্ষেত্রকে। পরবর্তী সময়ে স্বামীনাথন জানিয়েছেন, ছাত্রাবস্থায় তিনি কীভাবে মহাত্মা গান্ধীর ১৯৪২ সালের 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন' দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। সেই আন্দোলন তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল।
গান্ধীজির যে বক্তব্যে প্রভাবিত
গান্ধীজির কোন বক্তব্যের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন, সেকথাও জানিয়েছেন স্বামীনাথন। তাঁকে পরিবর্তনের দিশা দেখানো গান্ধীজির বিখ্যাত উক্তিটি হল, 'যে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে দিনে দু'বেলা খাবার জোটে না, তাঁদের কাছে ঈশ্বর একমাত্র রুটি রূপেই দেখা দিতে পারেন।' স্বামীনাথন জানিয়েছেন, গান্ধীজির সেই উক্তিকে পাথেয় করে তিনি কৃষির অগ্রগতিতে নিজেকে নিয়োগ করেছিলেন। এই আত্মনিয়োগই তাঁকে, ভারতে 'সবুজ বিপ্লবের জনক' খেতাব এনে দিয়েছে।
গান্ধী কেন ক্ষুধার কথা বলেছিলেন?
যদিও গান্ধী কখন এই কথা বলেছিলেন তা জানা যায়নি। তবে, এটা তাঁর বৃহত্তর দর্শনের সাথে খাপ খায়। গান্ধী ছিলেন স্বশাসন (স্বরাজ) এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রবক্তা। তাঁর আদর্শ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মডেল হল- ভারতের গ্রামগুলোকে পোশাকের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা। নিজস্ব সুতা কাটার মাধ্যমে এবং স্থানীয়ভাবে কৃষিকে উন্নীত করার ওপর নজর দেওয়া। গান্ধীর বৃহত্তর মতাদর্শ হল, সর্বোদয় (সকলের জন্য অগ্রগতি) এবং অন্ত্যোদয় যোজনা। তিনি সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ব্যক্তির উন্নতির ওপরও দৃষ্টি রেখেছিলেন। এক্ষেত্রে ক্ষুধা সমস্যা বড় বাধা হয়ে উঠেছিল। কারণ, পর্যাপ্ত উৎপাদনের অভাব বাধা সৃষ্টি করেছিল।
আরও পড়ুন- আধুনিক চিনের জন্মের আগেই বারবার বিদেশিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কীভাবে রক্তাক্ত হয়েছিল চিন?
ক্ষুধার সমস্যা মেটানোয় নজর
স্বাধীনতার সময় ঔপনিবেশিকতা, কৃষি এবং জমি বণ্টনের পূর্বে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা ভারতের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। সেই কারণে গান্ধীজির মত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা, দেশের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনে বিশেষ জোর দেওয়ার ওপর সওয়াল করেছেন। সেই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হয়েছে স্বামীনাথনের বিশেষ চেষ্টায়। ভারত পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পেরেছে। এমনকী আজও, এদেশ বছরের পর বছর ধরে 'গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স'-এর তালিকায় ক্ষুধার সমস্যা মিটিয়ে রীতিমতো রেকর্ড করে চলেছে। এমনকী, করোনা পরবর্তীতে ২০২২ সালেও ভারত ক্ষুধার সমস্যা মেটানোর তালিকায় বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে ১০৭ নম্বরে রয়েছে।