ইজরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বোমাবর্ষণ করে চলেছে। এমনটা আগে কখনও হয়নি। এর ফলে, ক্ষুদ্র প্যালেস্তিনীয় ছিটমহলে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইজরায়েল গাজা সীমান্ত সিল করে দেওয়ায়, হতাহতের সংখ্যা জানার একমাত্র সরকারি উৎস গাজার স্বাস্থ্য দফতর। এই স্বাস্থ্য দফতর, হামাস সরকারের একটি এজেন্সি। এই এজেন্সিই গাজায় স্বাস্থ্য পরিষেবার তদারকি করে। সংবাদ সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন এবং রাষ্ট্রসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক দুনিয়া এই এজেন্সির থেকেই হতাহতের পরিসংখ্যান নিচ্ছে।
কারা এই দফতর নিয়ন্ত্রণ করে?
গাজার হামাস প্রশাসন সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু, এর কার্যপদ্ধতি হামাসের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর চেয়ে আলাদা। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ (পিএ)-এর প্যালেস্তাইন লেজিসলেটিভ কাউন্সিল (পিএলসি) নির্বাচনে হামাস জয়ী হওয়ার আগেই গাজার স্বাস্থ্য-শিক্ষা পরিষেবা চালাত হামাসের স্বাস্থ্য বিভাগ। প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ বর্তমানে পশ্চিম তীরের (ওয়েস্ট ব্যাংক) কিছু অংশ পরিচালনা করে। রামাল্লায় তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য বিভাগ আছে। সেই স্বাস্থ্য বিভাগ এখনও গাজার স্বাস্থ্য দফতরকে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে। চিকিৎসা বিভাগের কর্মীদের বেতন দেয়। অবরুদ্ধ গাজা থেকে ইজরায়েলি হাসপাতালে রোগীদের স্থানান্তর করে। রামাল্লার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা এই দফতরের দেখভাল করেন। হাসপাতালগুলি সেই দফতরের কাছেই তথ্য দেয়। কাইলার ডেপুটি গাজায় দেখভাল করেন। এপি জানিয়েছে, গাজার স্বাস্থ্য দফতর হামাসের নিয়োগ এবং সেকুলার জাতীয়তাবাদী সংগঠন ফাতাহর সঙ্গে যুক্ত বয়স্ক সাধারণ কর্মচারীদের নিয়ে তৈরি।
কীভাবে মৃত্যুর গণনা হয়?
গাজা হাসপাতালের প্রশাসকরা সংবাদসংস্থা এপিকে বলেছেন যে তাঁরা প্রতিটি আহত ব্যক্তিকে একটি শয্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর, প্রতিটি মৃতদেহ মর্গে রেখে আসার রেকর্ড রাখেন। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র আশরফ আল-কিদরা জানিয়েছেন, তাঁরা এই সব তথ্যগুলো কমপিউটারে তোলেন। তারপর মিডিয়া এবং অন্যান্য সংস্থাকে তথ্য দেন। কিদরা জানিয়েছেন যে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা সীমান্ত বন্ধ থাকায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তার মধ্যেই তারা সংখ্যাগুলি দু'বার পরীক্ষা করে নিচ্ছেন। গাজার স্বাস্থ্য দফতর আরও জানিয়েছে যে প্যালেস্তিনীয় রেড ক্রিসেন্টের মত সংস্থাও তাদের তথ্য দেয়। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতি কয়েক ঘণ্টায় আপডেট দেয়। আহত পুরুষ, মহিলা, নাবালকদের সংখ্যা, মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করে। তবে, গাজার স্বাস্থ্য দফতর সাধারণত নিহতদের নাম, বয়স বা কোথায় তারা মারা গিয়েছেন, তা জানায় না। ব্যতিক্রম ঘটেছিল ২৭ অক্টোবর। ২১২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য দফতর যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত নিহত প্রতিটি প্যালেস্তিনীয়র নাম, পরিচয়পত্রের নম্বর, বয়স এবং লিঙ্গপরিচয় প্রকাশ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজার স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের পর এভাবেই নিজেদের প্রমাণ করেছিল গাজার স্বাস্থ্য দফতর। এই স্বাস্থ্য দফতর কখনও সাধারণ নাগরিক এবং জঙ্গিদের মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে রাষ্ট্রসংঘ, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর তদন্তের পর এবং জঙ্গি সংগঠনগুলো নিহত সদস্যদের পরিসংখ্যান দেওয়ার পরই তা পরিষ্কার হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- প্যালেস্তাইনের প্রতি সমবেদনা জানাতে তরমুজের ছবি ব্যবহার, কেন তরমুজকেই প্রতীক বাছা হল?
মন্ত্রকের তথ্য কি নির্ভরযোগ্য?
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, গাজার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান মোটামুটি নির্ভুল। অতীতে গাজায় হতাহতের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করার সময় তারা বড় ধরনের কোনও ত্রুটি খুঁজে পায়নি। ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে অতীতের যুদ্ধগুলোয় রাষ্ট্রসংঘের সংস্থাগুলো নিয়মিত রিপোর্টে মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করেছে। গাজার স্বাস্থ্যবিভাগ ছাড়াও রেড ক্রস এবং প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্টের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাও আহত, নিহতদের পরিসংখ্যান দিয়ে থাকে।
(এপি থেকে ইনপুট -সহ)