সারা পৃথিবীর ২০০০ -এর বেশি শহর জুড়ে #FridaysforFuture আন্দোলনে শামিল হয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে তাঁদের এই আন্দোলন। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন প্রাপ্তবয়স্করাও, লাখে লাখে, তাঁদের আন্দোলন #ClimateStrike। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসরুম ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন, প্রাপ্তবয়সকরা কর্মক্ষেত্র ও বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসবেন। শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ আন্দোলন চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু ধর্মঘট কী?
#FridaysforFuture আন্দোলন বা জলবায়ু আন্দোলনের জন্য যুব ধর্মঘট শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে, যখন গ্রেটা থুনবার্গ তিন সপ্তাহ ধরে তার স্কুলের দিনগুলিকে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে বসে থাকত। তার এই কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে এবং সরকারের কার্যকারী পদক্ষেপের দাবিতে।
এর পর, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে থুনবার্গ প্রতিশুক্রবার ধর্মঘটের ডাক দিতে থাকে। এর জেরে সুইডিশ পার্লামেন্ট জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তাদের নীতি পরিবর্তন করে। এর পর ধীরে ধীরে ছাত্র ও প্রাপ্তবয়স্করা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংসদের সামনে, স্থানীয় সিটি হলগুলির সামনে এ ইস্যুতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তৈরি হয় দুনিয়াভর আন্দোলন, যা একই সঙ্গে স্থানিকও বটে।
#FFF ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে সপ্তাহভরের এ আন্দোলনে শামিল হবেন ১৮৫টি দেশের ছাত্রছাত্রী ও প্রাপ্তবয়স্করা। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, "সেপ্টেম্বরের ২০ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে হাজার হাজার ইভেন্ট হবে, আমরা লাখে লাখে মানুষ ক্লাসরুম ছেড়ে, কাজের জায়গা ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে রাস্তায় নেমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত পদক্ষেপের দাবি তুলব, দাবি তুলব পরিবেশ নিয়ে ন্যায়বিচারের।"
ভারতে দিল্লি, চেন্নাই, পুনে বা মুম্বইয়ের মত শহর ছাড়া ধর্মঘটে শামিল পাঞ্জাবের ফাগওয়ারা, তামিলনাড়ুর নাগের কয়েল, রাজস্থানের কিষাণগড়, মহারাষ্ট্রের শোলাপুর, কেরালার আলুভা, কর্নাটকের হোন্নালি, উত্তর প্রদেশের গৌরীগঞ্জ, ছত্তিসগড়ের অম্বিকাপুর, মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়, এবং আসামের মঙ্গলদইও।
গত মার্চে যুব পরিবেশ ধর্মঘটে ১০০র বেশি শহরের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী শামিল হয়েছিলেন। এর পরই অস্ট্রেলিয়া প্রত্যক্ষ করে এ যাবৎকালের প্রখরতম গ্রীষ্ম। মে মাসে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ধর্মঘট হয়।
এই পর্যায়ের ধর্মঘটে ছাত্রছাত্রীদের দাবি, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রির কম রাখার জন্য দ্রুত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুনিয়া জোড়া এই ধর্মঘটের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে রাষ্ট্রসংঘের ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট, ২০১৯। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে গ্রেটা থুনবার্গকেও।
বিশ্বজোড়া ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরাও। মার্চ মাসে বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপ খোলা চিঠি লিখে ছাত্রছাত্রীদের ও তাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি ঘোষণা করেন। "ছাত্রছাত্রীরা দৃঢ় ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ চায় যা সমর্থন করছে এ যাবতের সেরা বিজ্ঞান। ওরা আমাদের সমর্থন চায়, কিন্তু তার চেয়েও বেশি ওরা চায় আমাদের কার্যকরী ভূমিকা। ওদের ভবিষ্যৎ এর উপর দাঁড়িয়ে, আমাদেরও তাই।" এ চিঠিতে পিটার কালমুস, কেট মার্ভেল, মাইকেল মান সহ বিভিন্ন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা স্বাক্ষর করেছিলেন।
অন্যদের মধ্যে থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছিল। ব্রিটেনে লেবার পার্টির মেতা জেরেমি করবিন অল্ববয়সী ছেলেমেয়েদের এ উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন টুইট করে। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের সমালোচনা করে বলেছিলেন এ সমস্যা সমাধানের যোগ্য পেশাদার হয়ে ওঠার ব্যাপারে তাদের মনোনিবেশ করা উচিত।
দুনিয়া জুড়ে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন শুরু হল কেন?
২০১৫ সালে বিশ্বজোড়া স্কুল আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে জলবায়ু ধর্মঘট সংগঠিত হয়, যার ধারণা এসেছিল ২০১৫ সালের গ্লোবাল ইয়ুথ সামিটের সংগঠকদের কাছ থেকে। এই ধর্মঘটে ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ছেড়ে অন্য সংগঠকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেবার আহ্বান জানানো হয়েছিল। যুবসমাজের কাছে ওই ধর্মঘট ছিল ওয়েক আপ কল। সে সময়ে দাবি ছিল ফসিল থেকে জ্বালানি নিষ্কাশন বন্ধ করতে হবে এবং ১০০ শতাংশ দূষণমুক্ত শক্তিতে রূপান্তর ঘটাতে হবে।
এখন ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে শামিল কেন?
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সকলকে সামলাতে হলেও, আগামী দশকগুলিতে ভুক্তভোগী হতে চলেছে এখন যারা ছোট, তারা। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের পিছনে যে আবেগ সবচেয়ে বেশি কাজ করছেস তা হল পুরনো প্রজন্মের ব্যর্থ প্রতিশ্রুতি- যারা এখনও ফসিল থেকে জ্বালানি নিষ্কাশন করে চলেছে, যার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রাও।
#GlobalClimateStrike 20-27sep????????✊
Walk out of our workplaces and homes to join young climate strikers!
Our house is on fire — let’s act like it. We demand #ClimateJustice for everyone.#Tiredearth #FridaysForFuture #20Sep #ClimateStrike #ClimateEmergency #FFF #ClimateAction pic.twitter.com/poBojrabmP
— Tired Earth (@Tiredearth) September 19, 2019
রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আস্থার অভাবও তরুণ প্রজন্মকে বিষয়টি নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য করেছে। প্যারিসে আয়োজিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে জুলাই মাসে থুনবার্গের বক্তব্য ছিল, "নির্বাচিত আধিকারিকরা, সংসদ সদস্যরা, ব্যবসায়ীরা, সাংবাদিকরা আমাদের নিয়ে মজা করছেন, মিথ্যা বলছেন।"
কেউ কেউ অবশ্য আইনের পথ নিয়েছে। ২০১৫ সালে ২১ জন তরুণতরুণী মামলা করেছেন। জুলিয়ানা বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মামলায় মার্কিন সরকারকে বিপজ্জনক নির্গমনকে অনুমোদন দেবার জন্য সংবিধান লঙ্ঘনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সে মামলার সাম্প্রতিকতম শুনানি হয়েছে ৪ জুন।
কে এই গ্রেটা থুনবার্গ?
থুনবার্গের নিজের কথায়, সে ১৬ বছর বয়সী একজন জলবায়ু কর্মী। আট বছর বয়সে সে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কথা শোনে।
২০১৮ সালে স্কুলে ক্লাস বাদ দিয়ে আন্দোলনের সময় থেকে আজকের জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম সৈনিক হয়ে ওঠা পথে তাকে বহু রাস্তা অতিক্রম করতে হয়েছে। সে বক্তব্য রেথেছে দাভোসের ওয়ার্লড ইকোনমিক ফোরামে, ইউরোপিয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে, এবং এমনকি রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুট্টেরেজের সামনেও।
আন্তোনিও গুট্টেরেজকে গ্রেটা থুনবার্গ বলেছিল, "আমাদের মত দেশ, যাদের সব রয়েছে, তারাও যদি প্যারিস চুক্তিতে আমাদের অঙ্গীকার না রাখি, তাহলে কী করে আমরা আশা করব ভারত, কলাম্বিয়া বা নাইজেরিয়ার মত দেশ জলবায়ু সংকটের ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখাবে!"
রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু বৈঠকে যোগ দেবার জন্য অগাস্ট মাসে ইংল্যান্ডের মেফ্লাওয়ার অ্যারিনা থেকে মালিজিয়া ২-তে চেপে জলপথে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল থুনবার্গ। আকাশপথে ভ্রমণ করলে কার্বন ফুটপ্রিন্ট হয় বলে উড়ান নিতে রাজি হয়নি থুনবার্গ, জানিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস। একটি প্রতিবেদন অনুসারে প্রাণিজ প্রোটিনের সঙ্গে নির্গমন যুক্ত বলে কয়েক বছর আগে সে মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়। গ্রেটা থুনবার্গের আটলান্টিকের জলভ্রমণ সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছিল।
২০১৮ সালের একটি রিপোর্টের উল্লেখ করে বুধবার মার্কিন কংগ্রেসকে বিজ্ঞানীদের কথা শোনার পরামর্শ দিয়েছে গ্রেটা।
এ বছরের গোড়ায় ২০১৯ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনীতদের তালিকায় ঢুকেছে তার নামও। অক্টোবরে ঘোষিত হবে বিজয়ীর নাম।