Advertisment

বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে চাকরির সংখ্যা কমার কী সম্পর্ক?

উষ্ণায়নের ফলে বাড়বে "হিট স্ট্রেস" অথবা 'উষ্ণতাজনিত চাপ'। পৃথিবী জুড়ে এই চাপের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ কোটি, অর্থাৎ ৮০ মিলিয়ন, ফুল-টাইম চাকরির সমতুল্য উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে, যার মধ্যে ৩.৪ কোটি চাকরির সমতুল্য উৎপাদনশীলতা খোয়াবে ভারত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
india employment

বেশিদিন নয়, ২০৩০ সাল। তার মধ্যেই বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রকোপে ভারত খোয়াতে চলেছে আন্দাজ ৩৪ মিলিয়ন (৩.৪ কোটি) চাকরি। এমনটাই বলছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন-এর দ্বারা প্রকাশিত একটি রিপোর্ট, যার শীর্ষক হলো 'ওয়ার্কিং অন আ ওয়ার্মার প্ল্যানেট: দ্য ইমপ্যাক্ট অফ হিট স্ট্রেস অন লেবার প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক'। এই রিপোর্টের বক্তব্য, উষ্ণায়নের ফলে বাড়বে "হিট স্ট্রেস" অথবা 'উষ্ণতাজনিত চাপ'। পৃথিবী জুড়ে এই চাপের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ কোটি, অর্থাৎ ৮০ মিলিয়ন, ফুল-টাইম চাকরির সমতুল্য উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে, যার মধ্যে ৩.৪ কোটি চাকরির সমতুল্য উৎপাদনশীলতা খোয়াবে ভারত।

Advertisment

কীভাবে হলো এই হিসেব?

এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, হিট স্ট্রেসের অর্থ হলো শরীরের ক্ষতি করে এমন মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণতা। সাধারণভাবে ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতার ফলে তৈরি হয় এই চাপ। অতিরিক্ত গরমের মধ্যে কাজ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর্মক্ষমতা, কারণ যিনি কাজ করছেন, তাঁর শারীরিক সামর্থ্য ব্যাহত হচ্ছে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমছে উৎপাদনশীলতা।

রিপোর্টের ভবিষ্যদ্বাণীর ভিত্তি হলো পৃথিবীর বাড়তে থাকা তাপমাত্রা, যা এই শতাব্দীর শেষাশেষি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাবে। এছাড়াও রয়েছে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে কিছু দৃশ্যমান প্রবণতা। এই ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, "২০৩০ সালে বিশ্ব জুড়ে কাজের সময়ের ২.২ শতাংশ বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারণে খোয়া যাবে, যা ৮০ মিলিয়ন ফুল-টাইম চাকরির সমতুল্য। এই ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২,৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।"

কিন্তু বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়লে এই ভবিষ্যদ্বাণী আর প্রাসঙ্গিক থাকছে না, জানিয়েছে খোদ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা।

ভারতের ভবিষ্যৎ

যে অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা বা ওয়ার্কিং আওয়ারস নষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে, তা হলো দক্ষিণ এশিয়া, যেখানে ২০৩০-এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ বা ৪৩ মিলিয়ন (৪.৩ কোটি) চাকরি নাশ হবে। দক্ষিণ এশিয়ার এক তৃতীয়াংশ দেশে ইতিমধ্যেই চার শতাংশ চাকরি খোয়া গেছে বলে জানিয়েছে ওই রিপোর্ট।

ভারতে ১৯৯৫ সালে তাপমাত্রার কারণে নষ্ট হয় ৪.৩ শতাংশ কর্মঘন্টা, যা ২০৩০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৫.৮ শতাংশ, অথবা ৩.৪ কোটি চাকরি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কৃষিক্ষেত্রে ৯.০৪ শতাংশ, শিল্পে ৫.২৯ শতাংশ, নির্মাণে ৯.০৪ শতাংশ, এবং পরিষেবায় ১.৪৮ শতাংশ কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, "ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব যদিও কৃষিক্ষেত্রেই পড়বে, কর্মঘণ্টা ক্রমশ খোয়া যাবে নির্মাণ ক্ষেত্রেও, যেখানে মহিলা এবং পুরুষকর্মী উভয়েই হিট স্ট্রেসে আক্রান্ত।"

আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাস্টেইনেবল এমপ্লয়মেন্টের অধিকর্তা অমিত বাসোলে বলছেন, যদিও ভারতে এখনও বায়ু পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থানের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করার মতো যথেষ্ট তথ্য নেই, কিছু কিছু প্রভাব ইতিমধ্যেই টের পাওয়া যাচ্ছে। "মূলত দুটি কারণে কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে এবং পরিবর্তন ঘটছে বিগত কয়েক বছরে। প্রথম কারণ বাড়তে থাকা তাপমাত্রা। কিন্তু আরও দৃশ্যমান কারণ হলো জল সংকোচন। অনেক অঞ্চলেই খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার ফলে কৃষিকর্মীরা দলে দলে চলে আসছেন শহরের দিকে - বেশিরভাগই নির্মাণক্ষেত্রে কাজের খোঁজে," বলছেন বাসোলে। তবে তাঁর বক্তব্য, এখনও সরাসরি চাকরি নাশ হয় নি, স্রেফ কোনও এক ক্ষেত্রের কর্মীরা আরেকটি ক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন, যেখানে দুই ক্ষেত্রই বিপন্ন।

সামগ্রিক চিত্র

সারা পৃথিবীতে যে দুটি ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেগুলি হলো কৃষি এবং নির্মাণ, মূলত কৃষি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, বিশ্ব জুড়ে ৯৪০ মিলিয়ন (৯৪ কোটি) মানুষ কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত, যেখান থেকে আসবে ২০৩০-এর মধ্যে মোট খোয়া যাওয়া কর্মঘন্টার ৬০ শতাংশ। নির্মাণ ক্ষেত্রে বিশ্ব জুড়ে নষ্ট হবে আনুমানিক ১৯ শতাংশ কর্মঘন্টা।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চিফ অফ ইউনিট তথা রিপোর্টের মূল লেখক ক্যাথরিন স্যাগে লিখেছেন, "হিট স্ট্রেসের বিপুল আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আগামি দিনে আমরা দেখতে চলেছি বেশি এবং কম আয়ের দেশগুলির মধ্যে বাড়তে থাকা বৈষম্য, এবং সমাজের সবচেয়ে নিপীড়িত মানুষের ক্রমশ খারাপ হতে থাকা কর্মের পরিবেশ, এবং স্থানচ্যূতি। এই নতুন বাস্তবের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে গেলে বিভিন্ন সরকার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অতি দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সমাজের সবচেয়ে বিপন্ন শ্রেণীর কথা মাথায় রেখে।"

Explained
Advertisment