ক্রমশ বাড়ছে সোনার দাম! সোনা কিনে রাখা কতটা যুক্তিপূর্ণ?

মার্চ মাসে লকডাউন শুরুর সময় দাম কিছুটা পড়ে গেলেও, ফের হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে সোনার দাম। বুধবারে যে দাম ছুঁয়েছে সোনা গত ন'বছরের ইতিহাসে তা সর্বোচ্চ।

মার্চ মাসে লকডাউন শুরুর সময় দাম কিছুটা পড়ে গেলেও, ফের হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে সোনার দাম। বুধবারে যে দাম ছুঁয়েছে সোনা গত ন'বছরের ইতিহাসে তা সর্বোচ্চ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সব রেকর্ড পিছনে ফেলে ভারতের বাজারে অগ্নিমূল্য সোনার দাম। বুধবারই ১০ গ্রাম সোনার দাম পেরিয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বিশ্বের বাজারের নিরিখে চিনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার। কিন্তু লকডাউন আবহে যখন কার্যত বন্ধ হয়েছে সোনা কেনা-বেচা তখন কেন এমন উর্ধ্বমুখী দাম সোনার? বিশেষজ্ঞদের মত করোনা অতিমারীতে বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক টালমাটাল, ডলারের দাম কমে যাওয়া, সুদ হ্রাস ইত্যাদির মতো বিষয়গুলি রয়েছে সোনার দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে।

Advertisment

কেন কেবল সোনার দামই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে?

অর্থনৈতিক ক্ষেত্র কিংবা শেয়ার বাজারের হিসেব বলছে ২০২০ সালে বাজার যদি কেউ মাত করে থাকে তা হল সোনা। চলতি বছরে ২৫ শতাংশ নিজের দাম বৃদ্ধি করেছে এই বহুমূল্যের আকরিক। মার্চ মাসে লকডাউন শুরুর সময় দাম কিছুটা পড়ে গেলেও, ফের হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে সোনার দাম। বুধবারে যে দাম ছুঁয়েছে সোনা, গত ন'বছরের ইতিহাসে তা সর্বোচ্চ। লন্ডনের বাজার বলছে সেখানে প্রতি ট্রয় আউন্সে (ভরির সমতুল্য) দাম বেড়েছে ১ হাজার ৮৫৬.৬০ ডলার। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল সর্বোচ্চ। সেই সময় প্রতি ট্রয় আউন্সে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল ১ হাজার ৯২০ ডলার।

বিশ্বের ইক্যুইটি মার্কেটের অবশ্য মত করোনা অতিমারীর ফলে মার্চ মাসে সোনার বাজারে ধস নেমেছিল। পরবর্তী সুদ কমে যাওয়ায় ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছিল পরিস্থিতি। বাজারের সমতা ফেরাতে তাই হু হু বেড়েছে সোনার দাম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শেয়ার মার্কেট এবং উচ্চমূল্যের বন্ড ফান্ড কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা করোনা আবহে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেদিক থেকে বিচার করলে সোনায় বিনিয়োগে ঝুঁকি অনেকটাই কম। এছাড়াও যেহেতু ভারতে সোনার দাম নির্ধারণ হয় বিশ্ববাজারের মূল্যে, তাই বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে সোনাকেই বেছে নিচ্ছে অনেকে।

Advertisment

কোটাক সিকিউরিটির কমোডিটি রিসার্চের প্রধান রভিন্দ্র রাও বলেন, "বিশ্ববাজারে অনেকটাই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে সোনার। আর সেই প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারেও। ডলারের দাম অনেকটা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সোনার বাজারে বিনিয়োগ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সোনার দামের এমন হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধি।"

কেন সোনায় বিনিয়োগকে সুরক্ষিত মনে করা হচ্ছে?

সোনা এবং বিয়ে। উদাহরণ দিতে হলে এর চেয়ে সরল বিষয় আর কিছু হয় না। বিয়েতে সোনা অপরিহার্য। শুধু বিয়ে কেন অনেক অনুষ্ঠানেই সোনাকে মঙ্গলচিহ্ন রূপেই দেখে ভারতবাসী। সেই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে তাই কে না চাইবে। স্টক মার্কেট, রিয়েল এস্টেট, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড-এর বাজার কতটা নড়বড় তা প্রমাণ করেছে লকডাউন। সেখানে সোনার মূল্যবৃদ্ধিই আশা জাগিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। দেখা গিয়েছে প্রতি বছরই ১.৬ শতাংশ দাম বেড়েই চলেছে সোনার। অন্তত ২০ বছরের রেকর্ড তাই বলছে। এখন বিশ্বের যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সেখানে মুদ্রানীতিকে সমর্থন করতে টাকা ছাপানো যেতে পারে। কিন্তু তা অসীম সংখ্যক নয়। সোনার ক্ষেত্রে সেই বাঁধা নেই। দায়বদ্ধতাও নেই। আর সোনা সেই বস্তু যার ঐতিহাসিক মূল্যও অপরিসীম।

সোনার দাম কি এভাবে বেড়েই চলবে? ভারতের সোনার বাজার কী বলছে?

গোল্ড অ্যানালিস্টদের মত আগামী ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে ১০ গ্রাম সোনার দাম ছুঁতে পারে ৬৫ হাজারের কাছাকাছি। ভারতের সোনার বাজারের চাহিদা বিশ্ববাজারেও জনপ্রিয়। হিসেব করে দেখা হয়েছে ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টন সোনা রয়েছে গৃহস্থের ঘরে। দেশের বিভিন্ন মদিরে সোনা রয়েছে বিপুল সংখ্যক। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে সোনা রয়েছে ৪০.৪৫ টন। যদিও সোনার চাহিদা কিন্তু ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চাহিদার হ্রাস হয়েছে ৯ শতাংশ।

Read the story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

business Gold national news