আমেরিকার মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্ন দেশে 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলন শুরু হয়েছে। তারই জেরে দৈনন্দিন জীবনে বর্ণবাদ নিয়ে বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়েছে, সামনে এসেছে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে কালো মানুষদের প্রদর্শন সম্পর্কিত বিষয়টিও।
এ সপ্তাহেই এইচবিও ম্যাক্স ঘোষণা করেছে তারা ১৯৩৯ সালের ছবি 'গন ইউথ দ্য উইন্ড' তাদের সংগ্রহ থেকে আপাতত সরিয়ে দিয়েছে। এই ছবিতে বর্ণবাদ প্রদর্শিত হয়েছিল বলে অভিযোগ।
এক বিবৃতিতে এইচবিও ম্যাক্সের মুখপাত্র বলেছেন “গন উইথ দ্য উইন্ড একটা সময়ের ছবি এবং তাতে কিছু জাতিগত ও বর্ণগত সংস্কার দেখানো হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে যা মার্কিন সমাজে স্বাভাবিক ছিল... এই বর্ণবাদী রূপায়ণ তখনও ভুল ছিল, এখনও ভুল, এবং আমরা মনে করেছি কোনও ব্যাখ্যা ছাড়া এই ছবি রেখে দেওয়া এবং এই রূপায়ণের নিন্দা না করা দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে।”
এ ছবি কী নিয়ে?
১৯৩৬ সালে একই নামের মার্গারেট মিশেলের উপন্যাস নিয়ে তৈরি ছবি 'গন উইথ দ্য উইন্ড' মার্কিন দেশের দক্ষিণভাগের এক প্ল্যান্টেশন মালিকের মেয়ে স্কারলেট ওহারার গল্প। ১৮৬১-৬৫-র গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি এ ছবিতে স্কারলেট এবং রেট বাটলারের রোম্যান্স দেখানো হয়েছে, যে রোম্যান্স মাঝে মাঝে দীর্ণ হয়, ফের জোড়া লাগে।
কে এই রহস্যময়ী মার্কিন নারী?
১৯৩৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি দ্বাদশ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে একগুচ্ছ পুরস্কার পায়, যার মধ্যে ছিল সেরা ছবির খেতাবও। মোট ৯ টি অস্কার খেতাবের মধ্যে ছিল সেরা সহ অভিনেত্রীর পুরস্কার, যা দেওয়া হয়েছিল হ্যাটি ম্যাকড্যানিয়েলকে। তিনিই প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলা, যিনি অস্কার পান। ম্যাকড্যানিয়েল অভিনয় করেছিলেন ম্যামি নামের একটি ক্রীতদাসীর চরিত্রে, যে ছিল স্কারলেট ওহারার খুব কাছের মানুষ। এই ছবির জেরে ওহারা চরিত্রে অভিনেত্রী ভিভিয়ান লে ও রেট বাটলারের ভূমিকাভিনেতা ক্লার্ক গেবল আজীবনের জন্য তারকা হয়ে যান।
ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি আয়ের এই ছবি বহুবার নতুন করে মুক্তি পেয়েছে। ১৯৮৯ সালে এই ছবিকে আমেরিকার ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
এ ছবিতে সমস্যা কোথায়?
গন ইউথ দ্য উইন্ড নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই সমালোচকরা গৃহযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে ক্রীতদাস প্রথাকে সুন্দর হিসেবে রূপায়ণ করা এবং তার ভয়াবহ দিকগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার নিন্দা করেছেন। ক্রীতদাসরা তাঁদের মালিকের বশংবদ হয়ে খুশি রয়েছেন বলে যেভাবে ছবিতে দেখানো হয়েছে তার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তাঁরা। তাঁরা একইসঙ্গে কালো মানুষদের সরল সাদাসিধে হিসেবে দেখানো এবং ক্রীতদাসদের জীবনে যে বর্বরতা সইতে হত তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যেভাবে বর্ণবাদ নিয়ে টেনশন বাড়ছে, তারই মধ্যে এ ছবি ফের একবার বর্ণবাদ নিয়ে আলোচনায় সামনে উঠে এসেছে। লস এঞ্জেলস টাইমসে সোমবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে অস্কারজয়ী পরিচালক জন রিডলে এ ছবি সরিয়ে নেওয়ার জন্য এইচবিও ম্যাক্সের কাছে অনুরোধ করেন। পরের দিনই ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হয়।