১৬ বছরের গ্রেটা থুনবার্গ মাত্র এক বছর আগেও স্টকহোমের ক্লাস নাইনের ছাত্রী ছিল। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে অ্যাক্টিভিজম তৈরি হয়েছে, এখন সে তার সবচেয়ে পরিচিত মুখ। রাষ্ট্রসংঘের শীর্ষবৈঠকে দুনিয়ার নেতাদের একহাত নিয়েছে গ্রেটা থুনবার্গ।
সোমবার গ্রেটা থুনবার্গ রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তৈরি হয়েছে তার অনুগামীবৃন্দও, যার মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানরাও রয়েছেন। জলবায়ু নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়েছে সে, তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে অসংখ্য সংবাদমাধ্যম, নিজের একটি বিস্তারিত উইকিপিডিয়া পেজও রয়েছে তার। এ বছরের গোড়ায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের বাছাই তালিকায় নামও উঠেছে তার।
পটভূমি
গ্রেটা থুনবার্গের বাবা অভিনেতা, মা গায়িকা। গত বছর অগাস্টে সুইডেনের পার্লামেন্টের মূল ভবনের বাইরের দেওয়াসে হেলান দিয়ে বসে থাকার সময়েই তার দিকে নজর পড়ে সবার। তখন তার বয়স ১৫। বসে থাকার সময়ে তার হাতে সুইডিশ ভাষায় লেখা থাকত জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট। জলবায়ু বদল নিয়ে দেশের আইনপ্রণেতারা যাতে কার্যকরী ভূমিকা নেন, সে দাবি তুলে তার স্কুলের ক্লাসে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল একেবারেই নিজস্ব। সুইডেনে ওই বয়সের শিশুদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক। সে দিক থেকে দেখলে, স্কুল না গিয়ে সে আইন ভাঙছিল।
আরও পড়ুন, আন্তর্জাতিক জলবায়ু ধর্মঘট আন্দোলন কী ও কেন?
গ্রেটা থুনবার্গ জানিয়েছে সে প্রথম বার জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার কথা যখন শোনে, তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর। তখনই তার মনে বিস্ময় জেগেছিল যে কেন এ নিয়ে কেউ কিছু করছে না। ফসিল থেকে জ্বালানি নিষ্কাশন বেআইনি ঘোষণা করা হচ্ছে না কেন, সে নিয়েও প্রশ্ন জেগেছিল তার মনে। ২০১৮ সালের মে মাসে সুইডেনের এক সংবাদপত্র আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় সে প্রথম হয়। তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হবার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন কয়েকজন জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট। তাঁদের মধ্যে একজনই গ্রেটা থুনবার্গকে স্কুল ধর্মঘটের আইডিয়া দিয়েছিলেন।
এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেটা থুনবার্গ একটি ফেসবুক পোস্টে লেখে, "স্কুল ধর্মঘটের আইডিয়াটা আমার ভাল লেগেছিল। ফলে সেটা নিয়ে আমি আরও ভাবতে থাকি এবং ছোটদের বলি আমার সঙ্গে যোগ দিতে, কিন্তু কেউই উৎসাহী হয়নি। তখন আমি একা একাই স্কুল স্ট্রাইক করার ব্যাপারে পরিকল্পনা করি।"
গ্রেটা থুনবার্গের বার্তা
গ্রেটা থুনবার্গ এমন কিছু বলছে না যা পৃথিবীর মানুষ আগে জানত না, বা সে কথা প্রথমবার বলা হচ্ছে। নিজের সাজানো ভাষণে তার অনেক কথাই অলংকারের মত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, গ্রেটা এমন একটা প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকরতম দিক প্রত্যক্ষ করবে। সে অবস্থায় দাঁড়িয়ে এই বিতর্কে সে একটি নৈতিক শক্তি নিয়ে আসছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কঠোর মুখে কার কথা বলা দেখে বোঝা যায় যে সে অসহায়ভাবে নিজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হতে দেখছে।
একটি ভাষণে গ্রেটা থুনবার্গ বলেছিল, "যদি নিষ্কাশন থামাতে হয়, তাহলে তা থামাতেই হবে। আমার কাছে বিষয়টা সাদা-কালো। টিকে থাকাই যখন বিষয়, তখন কোনও ধূসরতার জায়গা নেই।"
আরও পড়ুন, কেন গ্রেটা থুনবার্গের নাম লোকের মুখে মুখে?
ফেব্রুয়ারি মাসের ফেসবুক পোস্টে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছে গ্রেটা থুনবার্গ। "আমি যখন দেখি জলবায়ু সংকট সাদা কালো একটি বিষয়, (অথবা) গ্রিনহাউস গ্যাস নিষ্কাশন যখন বন্ধ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমি চাই আপনারা সন্ত্রস্ত হন। হ্যাঁ, জলবায়ু সংকট আমাদের সামনের সবচেয় জটিল বিষয়, এবং একে ঠেকানোর জন্য সবকিছু দিতে হবে আমাদের। কিন্তু এর সমাধান সাদায় কালোয়। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিষ্কাশন আমাদের বন্ধ করতে হবে।"
প্রভাব
ব্যাপক সংখ্যক অনুগামী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে থেকে সমর্থন পাওয়ার সুবাদে গ্রেটা থুনবার্গ বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, বিশেষ করে অল্পবয়সীদের মধ্যে। স্কুল ধর্মঘট এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে, ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ধর্মঘটে শামিল হচ্ছে অল্পদিনের জন্য, জলবায়ু নিয়ে তৎপর না হবার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে।
গ্রেটা থুনবার্গ এক জায়গায় বলেছিল, "যে ভবিষ্যৎ থাকবেই না, যে ভবিষ্যত রক্ষার জন্য কেউ কিছু করছে না, সে ভবিষ্যতের জন্য কেন আমি পড়াশোনা করব। স্কুলে সত্যি শিখে কী হবে, যখন সবচেয়ে ভাল বিজ্ঞানীরা অতি গুরুত্বপূর্ণ যে সব সত্যি বলছেন সেসবের কোনও অর্থই আমাদের রাজনীতিবিদ, আমাদের সমাজের কাছে নেই।"
তবে তার এই প্রচার নীতি পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছে কিনা বা কোনও দেশকে জলবায়ু নিয়ে আলাদা করে কোনও ঘোষণা করতে বাধ্য করেছে কিনা তা বিতর্কসাপেক্ষ। আন্তর্জাতিক স্তরে সিদ্ধান্তগ্রহণের বিষয়টি একেবারেই রাজনীতির বিষয়। সেখানে নৈতিক শক্তি বা বিবেকের ডাকের কোনও জায়গা নেই।
Read the Full Story in English