Advertisment

Explained: স্থলপথে ইজরায়েলের আক্রমণ আসন্ন, কী প্রভাব পড়েছে গাজা, হামাস এবং প্যালেস্তাইন আন্দোলনে?

গাজা সীমান্তে মোতায়েন হয়েছে ইজরায়েলের ট্যাংক। ইজরায়েল সেনা ১০ লক্ষেরও বেশি গাজাবাসীকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হামাস, ইসলাম এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক খালেদ আল হরুব এখন কী ঘটছে তা ব্যাখ্যা করেছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
On left, Israeli military vehicles drive near the border with the Gaza Strip, in southern Israel, on October 15, 2023. On right, Palestinians flee their houses amid Israeli strikes after Israel's call for more than 1 million civilians in northern Gaza to move south, in Khan Younis in the southern Gaza Strip, October 14, 2023.

২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর, দক্ষিণ ইসরায়েলের গাজা স্ট্রিপে সীমান্তের কাছে ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী অভিযান চালায়। উত্তর গাজায় ১০ লক্ষেরও বেশি সাধারণ নাগরিককে ইজরায়েলি সেনা দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে। ইজরায়েলের আহ্বানের পর প্যালেস্তিনীয়রা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণ গাজা স্ট্রিপের খান ইউনিসে পালিয়েছেন। (REUTERS/Ronen Zvulun এবং Mohammad Salem)

শনিবার (১৪ অক্টোবর), প্যালেস্তিনীয়দের উত্তর গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী। এজন্য তিন ঘণ্টার সময়সীমাও তারা ঠিক করে দিয়েছে। একইসঙ্গে ইজরায়েল সেনা জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার একটি প্রধান হাইওয়েকে বিমান থেকে বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু হবে না। দক্ষিণ গাজাকে ইজরায়েলের ছাড় দেওয়ার কারণ, তাদের লক্ষ্য প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। এই হামাস গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজরায়েলে হামলা চালায়। প্রায় ১,৩০০ ইজরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে। যার ফলে, যুদ্ধ এখন আসন্ন বলে মনে হচ্ছে। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছেন কাতারে পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞ খালেদ আল হরুব, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে হামাস এবং গাজার বিরুদ্ধে ইজরায়েলি অভিযানের পরবর্তী পর্যায়ের পরিণতি সম্পর্কে জানিয়েছেন।

Advertisment

স্থলপথে ইজরায়েলের আক্রমণের প্রভাব কী হতে চলেছে?

যদি সেটা ঘটে, তবে তা ২১ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে যাবে। গাজা স্ট্রিপ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি। খুব ঘিঞ্জি এলাকা। অসংখ্য নিরীহ সাধারণ নাগরিককে এর জন্য সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হবে। হামাসের সামরিক ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর, ইজরায়েলের লক্ষ্য হবে গাজার সাধারণ নাগরিকরা। যেমনটি, আমরা গত কয়েক দিনে ইজরায়েলের ব্যাপক প্রতিশোধের সময় দেখেছি। রাজনৈতিক এবং কৌশলগতভাবে, হামাসকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ইজরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ এখনও পরিষ্কার নয়। তার মধ্যেই ইজরায়েলের গাজা পুনরুদ্ধারের অর্থই হল, উভয়পক্ষের আরও বেশি প্রাণহানি। ছোট জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে প্রতিরোধে আরও বেশি উৎসাহিত করা। যা হামাসের স্প্লিন্টার হয়ে উঠবে।

কোনও স্থল আগ্রাসন না-থাকলেও, ইজরায়েল গাজায় বিদ্যুৎ, খাদ্য, জল এবং জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, তীব্রভাবে বোমা বর্ষণ করেছে এবং উত্তরের ১০ লক্ষ মানুষকে চলে যেতে বলেছে। এই পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যেতে পারে?

ইজরায়েলিরা প্যালেস্তিনীয়দের গাজা উপত্যকা থেকে মিশর এবং সিনাই মরুভূমিতে তাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা গাজা স্ট্রিপের উত্তর অংশের দিকে নজর দিয়েছে। সম্ভবত এটিকে তারা পুনরায় দখল করতে চায় এবং গাজা স্ট্রিপের উত্তর অংশকে একটি বাফার জোনে পরিণত করতে চায়। কিন্তু, এর অর্থ হল ১০ লক্ষেরও বেশি প্যালেস্তিনীয়কে জাতিগতভাবে নির্মূল করা। মিশর ইজরায়েলের পরিকল্পনা মানতে চায়নি। মিশর বলেছে যে তারা গণ উচ্ছেদের জন্য সীমানা খুলবে না। এই অবস্থায় গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে ১০ লক্ষ লোককে স্থানান্তর করা কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। উলটে এটি ব্যাপক সমস্যা তৈরি করবে। একটি সবচেয়ে আশ্চর্যজনক দিক যা আমরা দেখছি, তা হল- পশ্চিমী দুনিয়া, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের ইজরায়েলকে নিঃশর্ত সমর্থন। ইজরায়েলি অভিযানের বর্বরতা যুদ্ধাপরাধের সমান। যেমনটি আজকাল অনেক পশ্চিমী মানবাধিকার গোষ্ঠী বলে। সেই অপরাধে গাজা উপত্যকায় ১০ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় আক্ষরিক অর্থে একটি ধীরে মৃত্যু এবং দ্রুত মৃত্যুর মধ্যে যেন আটকা পড়েছেন।

ইজরায়েলে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হামাস সংবাদ শিরোনাম উঠে এসেছে, এটি একটি ধর্মীয় আন্দোলন এবং একটি রাজনৈতিক দলও। প্যালেস্তিনীয়দের দৈনন্দিন জীবনে হামাস কোন ভূমিকা পালন করে?

হামাসকে প্যালেস্তিনীয়রা একটি বহুমুখী সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং সামরিক সংগঠন হিসেবে দেখে। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন প্রান্তিক গোষ্ঠী নয়, যাকে সামরিক অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করা যেতে পারে। হামাসের আন্দোলনের ইতিহাস তাকে তার মাতৃ সংগঠনের কাছে নিয়ে যায়। প্যালেস্তাইনে মুসলিম ব্রাদারহুড, ১৯৪০-এর দশকে ব্রিটিশ শাসনকালে তৈরি হয়েছিল। এমনকী, ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল তৈরির পর সেখানেও এই সংগঠন চালু ছিল। তবে, এটি অন্যান্য জাতীয়তাবাদী বা মার্কসবাদী প্যালেস্তিনীয় সংগঠনের মতো ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বা সংঘাতে জড়িত ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবা, মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মান্তরিতকরণ ইত্যাদি। ১৯৮৭ সালে, এই সংগঠন তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। আর, প্রতিরোধকে তাদের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়। ২০০০ সালের পর, যখন ইজরায়েল এবং পিএলও (প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন)-এর মধ্যে শান্তি আলোচনা নিষ্ফল হয়ে যায়, হামাসের প্রতিরোধের কৌশল প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে আরও জনপ্রিয়তা লাভ করে। যার ফলে এটি ২০০৬ সালে প্যালেস্তাইন আইনসভা নির্বাচনে জয়ী হয়। তারপর থেকে, হামাস গাজা উপত্যকায় ২০ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়র সঙ্গে আটকে আছে। প্যালেস্তিনীয়দের অনেকেই হামাসের আন্দোলনকে ইজরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পথ হিসেবে দেখেন।

খালেদ আল হরুব, কাতারের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির লিবারেল আর্ট বিভাগের প্রফেসর। তিনি পশ্চিম এশিয়ার অধ্যয়ন এবং রাজনীতির ওপর গবেষণা করেন। ইসলাম ও রাজনীতি, আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব এবং আরব মিডিয়া স্টাডিতে তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তিনি হামাসের ওপর দুটি বই লিখেছেন, Hamas: A Beginners Guide (2006/2010), এবং Hamas: Political Thought and Practice (2000)।

israel palestine war israeli-embassy Israel-Palestine clash
Advertisment