দু বছর আগে ২০১৭ সালের গুজরাট বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ৭৭টি আসনে জিতে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। বিজেপি জিতেছিল ৯৯টি আসনে। গুজরাটে বিধানসভার মোট আসন ১৮২টি। ১৯৯৫ সালে গুজরাটে কংগ্রেসকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এটাই ছিল বিজেপির সবচেয়ে খারাপ এবং কংগ্রেসের সবচেয়ে ভাল ফল।
এ বছরের গোড়ায় লোকসভা ভোটে ব্যাপক হারের পর এবারের উপনির্বাচনে ৬টির মধ্যে তিনটি আসনে জয় নেতৃত্বের সংকটে ভোগা কংগ্রেসের কাছে উৎসাহবর্ধক হবে।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের ঠিক আগে চারজন কংগ্রেস বিধায়ক পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। লোকসভা ভোটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি চার কংত্যাগী বিধায়কদের নিয়ে চারটি আসনে জিতে যায়, তাদের বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৪-এ। এঁদের মধ্যে একজন বিধায়ক গুজরাট মন্ত্রিসভার মন্ত্রীও হন। এবারে লোকসভা ভোটে গুজরাটের ২৬টি আসনের ২৬টিতেই জেতে বিজেপি।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সীমা রয়েছে, দেখাচ্ছে দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল
তবে ২০১৯ সালের শেষে যে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হল তা দুই বিখ্যাত বিধায়ক অল্পেশ ঠাকুর এবং ধবলসিং জালার কাছে শিক্ষণীয় হয়ে রইল। এঁরা সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। দুজনেই পরাজিত হয়েছেন। উত্তর গুজরাটে এক নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনার পর প্রকাশ্যে উত্তর ভারতীয়দের সম্পর্কে মন্তব্য করার পর অল্পেশ ঠাকুরকে নিয়ে বিপাকে পড়েছিল কংগ্রেস। তিনি দল ছাড়ায় তারা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে, যদিও তিনি এআইসিসির বিহারের দায়িত্বেও ছিলেন।
রাধানপুর আসনে অল্পেশ ঠাকোর রঘু দেসাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন। ধবলসিং জালা বাভাড আসনে কংগ্রেসের শিবা প্যাটেলের কাছে হেরে গিয়েছেন। ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৬টি আসনের উপনির্বাচনে তিনটিতে জিতেছে কংগ্রেস।
সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে দেখলে, এ ভোটের ফল কংগ্রেসের পক্ষে গুজরাটে বিশাল জয় নয়, তবে সব মিলিয়ে দেখলে বাভাড ও রাধানপুরে জয়ের ফলে বিরোধীরা বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকবে এবং ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তারা নিজেদের গুছিয়ে নিতে সক্ষম হবে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ক্রান্তিকালীন এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস প্রত্যাশার চেয়ে যে ভাল ফল করল, তার একটি কারণ হল গত ২ অক্টোবরে গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে ডান্ডি ও পোরবন্দর থেকে আমেদাবাদের সবরমতী আশ্রম পর্যন্ত তাদের এক সপ্তাহের যাত্রা, যে যাত্রাপথে তারা ২০টি শহর অতিক্রম করে, ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেরোজগারি, আর্থিক পরিস্থিতি এবং মোটর ভেহিকেল আইন নিয়ে প্রচার করে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: মহারাষ্ট্রের ভোটে শিবসেনার উত্থানে বিজেপির চাপ
বেআইনি মদের ইস্যুকে সামনে রেখে অল্পেশ ঠাকোর রাজনীতিতে উঠে এসেছিলেন। উপনির্বাচনের কয়েকদিন আগে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণিকে এক হাত নিয়ে বলেন, মদ্যপান নিষিদ্ধ এমন রাজ্যগুলিই বেআইনি মদের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। বিজয় রূপাণি একে গুজরাটিদের অপমান বলে দাবি করেন।
বিজেপির তারকা প্রচারকারী বিজয় রূপাণি তাঁর বক্তব্যের কেন্দ্রে রেখেছিলেন ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি, তিন তালাক বিল এবং ৫৬ ইঞ্চি মর্দ সরকারকে। কংগ্রেস তাদের প্রচারে কাশ্মীর প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছিল।
উত্তর গুজরাটের বনসকণ্ঠের রাধানপুর এবং বাভাড আসন কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হলেও অল্পোশ ঠাকোরকে হারানো কংগ্রে প্রার্থী রঘু দেসাইয়ের পক্ষে সহজ ছিল না।
গুজরাট প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অমিত চাভডা বলেছেন, "রাত দিন নিঃস্বার্থ পরিশ্রম করেছেন যে কংগ্রেস কর্মীরা, এ জয় তাঁদেরই। আমি মনে করিয়ে গদিতে চাই যে গুজরাট হল গান্ধী প্যাটেলের ভূমি, এখানে একনায়কত্ব এবং লোভের রাজনীতি বেশিদিন চলে না। বিজেপি আমাদের বিধায়কদের ভয় দেখানো এবং ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে, আমাদের দল ভাঙার সমস্ত রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।"
Read the Full Story in English