Advertisment

মানহানি মামলায় দু’বছরের কারাদণ্ড রাহুলের, অভিযোগটা কী, ভবিষ্যতে কোন পথে মোকাবিলা?  

একটিতে শাস্তি, বাকি চারটি মামলায় কী হবে?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rahul gandhi, defamation case, modi, surname, disqualified, RPA, what is defamation, explained, express explained, india news, gujarat,

মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর ২ বছরের সাজা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মানহানি মামলায় সুরাটের একটি আদালত রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে। পাশাপাশি রাহুলের মন্তব্যের জন্য ১৫ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করে আদালত। এই মামলায় রাহুল গান্ধীকে ২ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সুরাটের একটি আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জামিনের আবেদন করেন রাহুল গান্ধী। এরপর কংগ্রেস সাংসদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। যদিও কংগ্রেস নেতাদের দাবি আদালতের এমন রায় কার্যত নজিরবিহীন।

Advertisment

আদালত তার রায়ের ওপর আগামী ৩০ দিন স্থগিতাদেশ জারি করে। এর মাঝে উচ্চতর আদালতে আবেদনের সুযোগ পাবেন কংগ্রেস সাংসদ। অভিযোগকারী গুজরাটের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদী দাবি করেছেন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে একটি সমাবেশে বিতর্কিত মন্তব্য সমগ্র মোদী সম্প্রদায়ের মানহানি করেছে।

২০১৯সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী কর্ণাটকের কোলারে অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর পদবী নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। বৃহস্পতিবার সুরাট জেলা আদালত কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘পদবী নিয়ে মন্তব্য’ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। রাহুল গান্ধীকে ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সুরাটের আদালত। যদিও কিছুসময় পরে আদালত কংগ্রেস নেতার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। আগামী ৩০ দিনের জন্য আদালত তার রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে করে যাতে রাহুল গান্ধী সুরাট আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। তবে আদালত রাহুল গান্ধীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারার অধীনে দায়ের করা মামলায় রাহুল গান্ধী শেষবার ২০২১ সালের অক্টোবরে তার বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য সুরাট আদালতে হাজির হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সংসদের বাইরে আদালতের আদেশে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন “রাহুল গান্ধী যাই বলুক না কেন তা সর্বদা কংগ্রেস দল এবং সমগ্র জাতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে”।

রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে IPC-এর ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ মামলায় আজ তৃতীয়বারের মতো আদালতে হাজিরা দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএইচ ভার্মার ডিভিশন গত সপ্তাহে উভয় পক্ষের যুক্তি শুনেছিল এবং রায় ঘোষণার জন্য ২৩ শে মার্চ তারিখ নির্ধারণ করে। আজ শুনানি শেষে আদালত রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আদালত রাহুল গান্ধীকে ইন্ডিয়ান পেনাল কোর্ট (IPC) ৫০৪ নং ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেছে। রায়ের আগে রাহুল গান্ধী আদালতকে জানায়, ‘আমার বক্তব্যে কারও ক্ষতি হয়নি, আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না’। এর জেরে রাহুলের সদস্যপদ বাতিলের সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইন কী?

জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫১-এর ৮ (১) এবং (২) ধারা অনুসারে, যদি কোনও সংসদ সদস্য বা বিধায়ক হত্যা, ধর্ষণ, ধর্ম, ভাষা বা অঞ্চলের ভিত্তিতে শত্রুতা সৃষ্টি করেন তবে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করা হবে। এছাড়াও, একই আইনের ৮(৩) ধারায় একটি শাস্তির বিধান রয়েছে যে দু বছরের সাজা হলেই একজন বিধায়ক বা সংসদের সদস্যপদ বাতিল করা হতে পারে।

এই আইনের ভিত্তিতে, কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ বাতিল হতে পারে। তবে এখানে একটি বিষয় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে "তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে" সেটি কার্যকর হয়৷ সেই সময়ের মধ্যে, রাহুল গান্ধী হাইকোর্টে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন। সেক্ষেত্রে উচ্চাদালতের রায়ের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে রাহুলের সদস্যপদ বাতিলের প্রশ্ন।

রাহুল গান্ধীকে নিয়ে সুরাট আদালতের রায়ে বেজায় চটেছেন রাহুল অনুগামীরা। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক সিএম গেহলট বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ চাপের মধ্যে কাজ করছে”। তিনি বলেন, ‘রাহুল গান্ধীর মন্তব্য সাধারণ একটি রাজনৈতিক মন্তব্য। আগেও এমন অনেক বিবৃতির নজির রয়েছে’।

'মোদী পদবীকে নিয়ে রাহুলের মন্তব্যের প্রেক্ষিপ্তে' দায়ের করা ফৌজদারি মানহানির মামলায়, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে গুজরাটের সুরাটের একটি  আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং ২ বছরের সাজা ঘোষণা করেছে। যদিও পরে জামিন পান রাহুল। রাহুলের 'মোদী উপাধি' নিয়ে মন্তব্য করার জন্য তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অন্যদিকে, আদালতের এমন রায়কে ঘিরে, কংগ্রেস নেতাদের প্রতিক্রিয়া এখন সামনে আসছে যেখানে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেছেন যে আমাদের গণতন্ত্র হুমকির মুখে কারণ বিচার বিভাগ, ইডি এবং তাদের অপব্যবহার করা হচ্ছে। .

অন্যদিকে, রাহুল গান্ধীকে নিয়ে রায়ের পর রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসারা বলেছেন, কংগ্রেস দল তার সঙ্গে রয়েছে। সারা দেশের কংগ্রেস কর্মীরা রাহুল গান্ধী এবং তার আদর্শের পাশে রয়েছে’। গেহলট বলেন, 'অটল বিহারী বাজপেয়ী, আদবাণী সবাই এ ধরনের বক্তব্য পেশ করেছেন, কিন্তু সেই সময় এ ধরনের বক্তব্য্র জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে রাহুল গান্ধীর বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্পর্কে নয়, এটি একটি রাজনৈতিক অভিযোগ যা জনসাধারণের কাছে একটি সাধারণ বার্তা’।  

একই সময়ে, জয়পুরে কংগ্রেসের বিক্ষোভের সময় কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসারা বলেছিলেন যে দেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার করে মানুষকে ভয় দেখানোর কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে এইসব এজেন্সি ব্যবহার করে ভয় দেখানোর কাজ চলছে।

একটিতে শাস্তি, বাকি চারটি মামলায় কী হবে? এই রাজ্যগুলিতেও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা চলছে

মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর ২ বছরের সাজা হয়েছে। তবে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির এই প্রথম মামলা নয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে এই ধরনের একই মামলা চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) একটি সুরাট আদালত কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে তার 'মোদী পদবীকে নিয়ে করা' মন্তব্যের জেরে ২০১৯ সালে দায়ের করা একটি ফৌজদারি মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে। আদালত রাহুল গান্ধীকে ২ বছরের কারাদণ্ডও দেয়। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এইচ ভার্মার আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারা ৫০৪ এর অধীনে গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তবে সাজা পাওয়ার পরই জামিন পান রাহুল গান্ধী।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির প্রথম মামলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্ডি আদালতে এই মামলা চলছে। IPC-এর ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিওয়ান্ডিতে বক্তৃতার সময় রাহুল গান্ধী মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার জন্য সংঘের (আরএসএস) বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সংঘের এক কর্মী।

এর পরে, ২০১৬ সালে, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে গুয়াহাটিতে ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগকারীর মতে, রাহুল গান্ধী বলেছিলেন যে সংঘের সদস্যরা তাকে অসমের ১৬ শতকের বৈষ্ণব মঠ বারপেটা সাতরাতে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাঁর অভিযোগে সংঘের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ বিষয়টিও আদালতে বিচারাধীন।  

২০১৮সালে, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। রাঁচির সাব-ডিভিশনাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই মামলা চলছে। আইপিসির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় রাহুলের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে রাহুলের বক্তব্যে আপত্তি জানানো হয়েছে, যাতে তিনি বলেছিলেন 'মোদী একজন চোর'।

একই বছর রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আরেকটি মানহানির মামলা দায়ের করা হয় মহারাষ্ট্রে। আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সেখানেও IPC-এর ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের শ্রমিক মামলা করেন। রাহুলের বিরুদ্ধে গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডকে বিজেপি ও সংঘের আদর্শের সঙ্গে যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে কংগ্রেস সাংসদের বিরুদ্ধে। তবে আদালতের এই নির্দেশ বাতিলের বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল করেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছে নেতৃত্ব।

rahul gandhi
Advertisment