Advertisment

Explained: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা, ভারতের মাথাব্যথার প্রধান কারণ, কে এই পান্নুন?

হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সতর্ক করেছে বলে অভিযোগ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Gurpatwant Singh Pannun

এসএফজে ভারতে নিষিদ্ধ। (ফাইল)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আমেরিকার মাটিতে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসের নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারত সরকারকেও সতর্ক করেছে। এমনটাই দাবি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের।

Advertisment

মোদীর সফরে বিক্ষোভ

গত জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওয়াশিংটনে একটি উচ্চস্তরের রাষ্ট্রীয় সফর করেন। তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। এমনটাই দাবি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের। ওই সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভের কারণে চক্রান্তকারীরা সেই সময় তাদের পরিকল্পনা বাতিল করেছিল কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যেমন অস্পষ্ট, মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবারের হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে হস্তক্ষেপ করেছে কি না। পাশাপাশি, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের দাবি, মার্কিন ফেডারেল প্রসিকিউটররা নিউ ইয়র্ক জেলা আদালতে পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে একজনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সিলমোহর ভরা খামে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, 'ভারত-মার্কিন নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংগঠিত অপরাধী, বন্দুকধারী, সন্ত্রাসবাদী এবং অন্যান্যদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে কিছু তথ্য ভাগ করে নিয়েছে। সেই সব তথ্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। উভয় দেশ ওই সব তথ্যগুলোর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ফলোআপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরই ভারত এই সব তথ্যকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। কারণ, ওই তথ্যগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্যগুলো ইতিমধ্যেই প্রাসঙ্গিক বিভাগের সাহায্যে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'

কানাডার অভিযোগ

কানাডার সারের বাসিন্দা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জারকে চলতি বছরের জুনেই গুলি করে হত্যা করার পর পান্নুনের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। সেপ্টেম্বরেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেছিলেন যে নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরকার যুক্ত, একথা 'বিশ্বাস' করার যথেষ্ট কারণ আছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।

আইনজীবী পান্নুন

গুরপতবন্ত সিং পান্নুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। একজন খালিস্তানপন্থী আইনজীবী। পান্নুন, পঞ্জাবের অমৃতসরের উপকণ্ঠে খানকোট গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা মহিন্দর সিং ছিলেন পঞ্জাব রাজ্য কৃষি বিপণন বোর্ডের প্রাক্তন কর্মচারী। মহিন্দর সিংয়ের তিন সন্তানের মধ্যে গুরুপতবন্ত সিং পান্নুন অন্যতম। তিনি ১৯৯০-এর দশকে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন অ্যাটর্নি। তাঁকে প্রায়শই কানাডায় দেখা যায়। তিনি হামেশাই খালিস্তানপন্থী অনুষ্ঠান এবং সমাবেশে যোগ দেন। পান্নুন নিউইয়র্কে খালিস্তানপন্থী আইনজীবী সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসের নেতা এবং প্রতিষ্ঠাতা বলেও পরিচিত।

কেন এসএফজে তৈরি হয়েছিল?

এসএফজে বা শিখস ফর জাস্টিস ২০০৭ সালে পঞ্জাবে শিখদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে তৈরি হয়েছিল। এই সংগঠন যে রাষ্ট্র তৈরির কথা বলে, তার নাম 'খালিস্তান'। কানাডার সাংবাদিক টেরি মিলুস্কি, 'ব্লাড ফর ব্লাড: ফিফটি ইয়ারস অফ দ্য গ্লোবাল খালিস্তান প্রজেক্ট' (২০২১)-এর লেখক। তিনি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'দিল্লিতে ৮৪-র শিখদাঙ্গা ভারতের রাষ্ট্রীয় জীবনে কালো দাগ হয়ে আছে। যেমন, ৮৫-র এয়ার ইন্ডিয়া বোমা হামলা খালিস্তানিদের জন্য একটি দাগ হয়ে আছে।' পান্নুন, 'ব্যালট নয় বুলেট' নীতি নিয়েই এসএফজে শুরু করেছিলেন। এসএফজের সবচেয়ে বড় কাজ হল, '২০২০ সালের গণভোট' আয়োজন। যা বিশ্বের বিভিন্ন শহরে প্রবাসী শিখদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করেছে। অবশ্য এই গণভোটের প্রক্রিয়া এবং ফলাফল নিয়ে মিলুস্কি রীতিমতো উপহাস করেছেন। তিনি বলেন, 'লন্ডনে আমার এক বন্ধু আছেন। যিনি ভোট দেওয়ার অনলাইনে লগ ইন করেন। নিজের নাম দিয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। আর, সফলভাবে ভোট দিয়েছেন। আর, তারই ভিত্তিতে পান্নুন ও তাঁর লোকজন গণভোটের সাফল্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। আর, যাচাইযোগ্য সংখ্যা প্রকাশ করেছেন।' শুধু তাই নয়। এই গণভোটের মত নানা বিষয়কে কাজে লাগিয়েই পান্নুন, এসএফজে ভারতের বিরুদ্ধে এবং খালিস্তানের সমর্থনে পর্যায়ক্রমে বিবৃতি দিয়ে প্রচারে থাকেন।

এসএফজে হিংসার সমর্থক

মিলুস্কি বলেন, 'পান্নুন কানাডায় গণভোটের প্রচারাভিযানের সদর দফতরের নাম দিয়েছিলেন শহিদ তালবিন্দর সিং পারমার ভোটার কেন্দ্র। পারমার, ১৯৮৫-র এয়ার ইন্ডিয়া বোমা হামলার মাস্টারমাইন্ড। ওই বিস্ফোরণে ৩২৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। এটি কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা।' পান্নুন চলতি মাসে অনলাইনে প্রকাশিত এক ভিডিও ক্লিপে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে শিখদের ১৯ নভেম্বরের পরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান চড়া উচিত হবে না। কারণ, তাতে তাঁদের জীবন সংশয় হতে পারে। তিনি অ-শিখ প্রবাসী ভারতীয়দের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা ছাড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- ১৯৬২-র ২১ নভেম্বর, ভারতের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েও যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চিন, কেন?

পান্নুন এবং এসএফজে সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়া

পান্নুন এবং এসএফজের বিরুদ্ধে পঞ্জাবে তিনটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে উভয়ের বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক মামলা আছে। পঞ্জাব পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়াতে এসএফজের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন পোস্টের তালিকা বানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, পুলওয়ামা হামলায় কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের কৃষক আন্দোলনের সময়ও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) পান্নুনের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেছিল। কৃষক আন্দোলনকারীদের আর্থিক উত্স জানতে বিভিন্ন কৃষক নেতা ও কর্মীদের সমন পাঠিয়েছিল। তাঁর সাম্প্রতিক ভিডিওতে, 'এয়ার ইন্ডিয়া ১৯৮৫-র পুনরাবৃত্তি' ঘটানোর হুমকি দেওয়ার পরে, এনআইএ পান্নুনের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন, ১৯৬৭-র অধীনে মামলা করেছে। এনআইএ এবং কেন্দ্রীয় সরকার পান্নুনকে 'জঙ্গি' বলে উল্লেখ করেছে। বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে এসএফজেকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'শিখদের জন্য তথাকথিত গণভোটের আড়ালে, এসএফজে আসলে পঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং জঙ্গি মতাদর্শকে সমর্থন করছে। তারা, বিদেশের মাটিতে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে কাজ করছে। অন্যান্য দেশের শত্রু শক্তি তাদের সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে।'

Khalisthan Khalistan separatist Gurpatwant Singh Pannun interpol NIA India Air India Sikh For Justice
Advertisment