Advertisment

Explained: শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, গুরু নানকের জীবন ঠিক কতটা রহস্যময় ছিল?

সূর্যোদয়ের আগে উঠতেন। নদীর ঠান্ডা জলে স্নান করতেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
A fresco of Guru Nanak from Baoli Sahib, Goindwal, in Punjab.

পঞ্জাবের গোইন্দওয়ালের বাওলি সাহেব থেকে গুরু নানকের একটি ফ্রেস্কো। (উইকিমিডিয়া কমন্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত)

শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক। তিনিই শিখ সম্প্রদায়ের প্রথম গুরু। শিখদের আরও নয় জন গুরু আছেন। তার মধ্যে গুরু নানকের জন্মদিন বা নানক জয়ন্তী শিখরা অত্যন্ত ধূমধামের সঙ্গে পালন করেন। এই দিনে শিখরা নগর কীর্তন করেন। শোভাযাত্রা বের করেন। স্তবগান করেন। গুরুদ্ধার পরিদর্শন করেন। কারণ, গুরু নানকের দেওয়া শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই একটি স্বতন্ত্র বিশ্বাসের ওপর ভর দিয়ে গড়ে উঠেছে শিখ ধর্ম। গুরু নানকের অনুগামীদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম, উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনই ছিলেন।

Advertisment

১. গুরু নানক হিন্দু পরিবারে জন্মেছিলেন
গুরু নানক হিন্দু পরিবারে জন্মেছিলেন। ১৪৬৯ সালের ১৫ এপ্রিল, নানকানা সাহেব শহরে তাঁর জন্ম। তাঁর মধ্যে ছিল প্রবল ঈশ্বরচিন্তা এবং নানা জিজ্ঞাসা। নানকানা সাহবে বর্তমানে পাকিস্তানের অংশ। অল্প বয়সেই নানকের বিয়ে হয়। সন্তানের জন্মের পর তাঁর মধ্যে দার্শনিক চিন্তা বাড়তে থাকে। সুলতানপুরে তিনি কিছুকাল হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন। খুশবন্ত সিং-এর, 'এ হিস্ট্রি অফ দ্য শিখস' বই অনুসারে, তিনি মারদানা নামে একটি মুসলিম কবিদলে যোগ দেন। যাঁরা প্রতিরাতে গান গাইত। অতিথিদের ভোজনের ওপর তাঁরা গুরুত্ব দিতেন। সূর্যোদয়ের একঘণ্টা আগে নানক নদীতে স্নান করতে যেতেন।

২. রহস্যময় অভিজ্ঞতা
৩০ বছর বয়সে, ভোরবেলা নদীতে স্নানের সময় গুরু নানকের প্রথম রহস্যময় অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তিনি একে তাঁর ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ বলেই বর্ণনা করেছেন। নানক জানিয়েছেন, ঈশ্বর তাঁকে পান করার জন্য এককাপ অমৃত দিয়েছিলেন। সঙ্গে বলেছিলেন, 'নানক, আমি তোমার সঙ্গে আছি। তোমার মাধ্যমে আমার নাম মহিমান্বিত হবে। যে তোমাকে অনুসরণ করবে, আমি তাঁকে রক্ষা করব। প্রার্থনা করতে পৃথিবীবাসীকে শেখাও। জগতের পথ দেখে বিব্রত হবে না। জীবনে দাতব্য (দান), অজু (পরিচ্ছন্নতা), সেবা (সেবাকার্য) এবং সিমরান (প্রার্থনা)-র ওপর জোর দাও। এটাই হোক তোমার জীবনের লক্ষ্য।' এরপর তিনি তিন দিন এবং রাত ধরে নিখোঁজ ছিলেন। আত্মীয়-প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন যে নানক নদীতে ডুবে গেছেন। কিন্তু, চতুর্থ দিনে নানককে ফের তাঁরা দেখতে পান। নানক এরপরই ফকিরদের দলে গিয়ে যোগ দেন। তিনি বারবার পুনরাবৃত্তি করতে শুরু করেন, 'হিন্দু নেই, মুসলমান নেই।'

৩. হেঁটে ভ্রমণ
নানক তাঁর বার্তা ছড়িয়ে দিতে হেঁটে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি তাঁর শিক্ষা প্রচারের জন্য শ্রীলঙ্কা, বাগদাদ এবং মধ্য এশিয়া ভ্রমণ করেন। তাঁর শেষ যাত্রা ছিল মক্কা এবং মদিনায়। যা, ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। পাশাপাশি, তিনি অন্যান্য ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোও পরিদর্শন করেছিলেন। তাঁর এই ভ্রমণকে বলা হত, 'উদাসিস'। নানক হিন্দু সাধু এবং মুসলিম ফকিরদের পোশাকের মিশ্রণে তৈরি বিশেষ পোশাক পরতেন। তিনি পণ্ডিত, সুফি সাধক এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিদের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।

৪. মক্কায় নানক
নানক তাঁর এক ঈশ্বর, মতবাদ প্রচারের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি মক্কায় এক মসজিদে ছিলেন। সেখানে কাবার দিকে পা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এই কাজটিকে ঈশ্বরের ঘরের প্রতি গুরুতর অসম্মান বলে মনে করেছিলেন প্রার্থনাকারীরা। তাঁরা নানককে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন তিনি এমন কাজ করেছেন? জবাবে নানক বলেছিলেন, 'তাহলে আমার পা এমন একদিকে ঘুরিয়ে দিন, যেখানে কোনও ঈশ্বর বা কাবা নেই।' নানকের অনুগামীদের বলা হয় 'শিখ'। যা সংস্কৃত শব্দ 'শিষ্য' এবং 'শিক্ষা'র মিশ্রণ। পালি ভাষায় যাকে শিখিও বলা যেতে পারে।

Devotees participate in the langar on Guru Nanak Jayanti at Gurdwara Guru Nanak Darbar in Pune Cantonment.
পুনে ক্যান্টনমেন্টের গুরুদুয়ারা গুরু নানক দরবারে গুরু নানক জয়ন্তীতে ভক্তরা লঙ্গরে অংশগ্রহণ করেছেন। (এক্সপ্রেস ছবি পবন খেংরে)

৫. নানক কীভাবে গুরু অঙ্গদকে শিখদের দ্বিতীয় গুরু হিসেবে বেছে নিলেন?
নানক তাঁর জীবনের শেষ বছরগুলো কর্তারপুরে কাটিয়েছিলেন। তিনি এবং তাঁর শিষ্যরা একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতেন। তাঁরা সূর্যোদয়ের আগে উঠতেন। ঠান্ডা জলে স্নান করতেন। সকালের প্রার্থনা করার জন্য মন্দিরে জড় হতেন। স্তোত্র গাইতেন। সেবা করতেন। গুরুদ্বারগুলোতে অভাবীদের সাহায্য করতে খাবার রান্না করতেন। সন্ধ্যায় আবার স্তবগানের জন্য জমায়েত হতেন। খাবার খেতেন, প্রার্থনা করতেন এবং তারপর বাড়ি ফিরতেন। এই পদ্ধতি সব গুরুদ্বারগুলোই অনুসরণ করা শুরু করে। যেসব শিষ্যরা গুরু নানকের চালু করা এই সব নিয়ম ভালো করে পালন করতেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন লেহনা। সেসব দেখেই গুরু নানক লেহনাকে নিজের অঙ্গ বলে ডাকতে শুরু করেন। নাম দেন অঙ্গদ। তাঁকেই পরবর্তী গুরু হিসেবে বেছে নেন। গুরু নানক ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন।

আরও পড়ুন- সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিক উদ্ধারে সাফল্যের পিছনে বিশেষ পদ্ধতি, কী এই ‘ব়্যাট হোল মাইনিং’?

৬. নানকের শেষকৃত্য
গুরু নানকের জীবনের একটি পরিচিত ঘটনা হল, তাঁর শেষকৃত্য। খুশবন্ত সিংয়ের বর্ণনা অনুযায়ী, 'মুসলমানরা বলেছিলেন তাঁকে কবর দেওয়া হবে। হিন্দুরা চেয়েছিলেন দাহ করতে। মৃত্যুর আগে নানক তাঁদের বলেছিলেন, 'তোমরা আমার দু'পাশে ফুল রাখ। হিন্দুরা আমার ডানদিকে। মুসলমানরা আমার বাম দিকে। যাঁদের ফুল তাজা থাকবে, তাঁরাই আগামিকাল এই দেহ পাবে।' তিনি তাঁদের প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। প্রার্থনা শেষ হলে নানক চাদরটা টেনে নিয়ে চিরনিদ্রায় চলে যান। পরের দিন সকালে চাদর তুলে কেউ কিছু দেখতে পাননি। উভয় সম্প্রদায়েরই ফুল তাজা ছিল। হিন্দুরা তাঁদের ফুল নিয়ে যায়। মুসলিমরা তাঁদেরগুলো।'

Hindu Sikh Community Islam Guru Nanak
Advertisment