গুয়াহাটিসহ আসামের কামরূপ মেট্রোপলিটন জেলায় ২৮ জুন সন্ধে সাতটা থেকে ১২ জুলাই সন্ধে ৬টা পর্যন্ত লকডাউন জারি হবে।
লকডাউনের এই পর্যায় আগের বারের চেয়ে কঠোর হবে। আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন এবারের লকডাউন কঠোর হবে, প্রায় কারফিউয়ের মত হবে।
ফের লকডাউন কেন?
আসামের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক নির্দেশে বলা হয়েছে সারা কামরূপ মেট্রোপলিটন জেলায় কোভিড-১৯ ব্যাপক হারে বাড়ছে, যার জেরে জনস্বাস্থ্যের উপর বড়সড় ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোনও ভ্রমণের ইতিহাস ছাড়াই জুন মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত গুয়াহাটিতে ১৫৬৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৬১৭ জনের পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার সারা রাজ্যে ২৭৬ টি সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যার মধ্যে ১৩৩ টি গুয়াহাটির। এরকম ঘটতে থাকলে গুয়াহাটি শহরে হাসপাতালের বেড কম পড়বে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। এখন হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৮৯০।
কতদিনের জন্য লকডাউন?
কামরূপ জেলায় লকডাউন চলবে ১৪ দিন। প্রথম সাত দিন কঠোর লকডাউন চলবে, পরের সাতদিন তা শিথিলতর হবে। এ ছাড়া সরকার আসামের সব জেলায় রাত ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত প্রতি শনি ও রবিবার লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছে। সমস্ত শহক ও মিউনিসিপ্যাল এলাকায় এই লকডাউন কার্যকর হবে।
কী কী বন্ধ থাকবে?
প্রথম সাতদিন মুদির দোকান সহ সব বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে হাসপাতাল, ওষুধের দোকান ও টেস্টিং ল্যাবরেটরি।
নির্দেশ অনুসারে নিষিদ্ধ যেসব কাজ:
* জনগণের চলাচল
* সরকারি বেসরকারি সমস্ত দফতর
* সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকান
* সমস্ত গণপরিবহণ ও বেসরকারি পরিবহণ
* সমস্ত পরিষেবা
* সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
* ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় সমাবেশ
* সামাজিক, রাজনৈতিক, ক্রীড়াঘটিত, শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক বা বিনোদন মূলক সব কাজকর্ম
এ ছাড়া ২০ জনের বেশি শেষকৃত্যে জমায়েত হতে পারবেন না, প্রকাশ্যে থুথু ফেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, মদ, পান, গুটকা, তামাক বিক্রি বা খাওয়া নিষিদ্ধ।
কোনও কিছু কি খোলা থাকবে?
অত্যাবশ্যকীয় কিছু খোলা থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে, পুলিশ, প্রশাসন, ব্যাঙ্ক (সামান্যতম কর্মচারী নিয়ে), হাসপাতাল, হোটেল (কোয়ারান্টিনের জন্য), প্রিন্ট ও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম, দুধ ও বেবিফুড সরবরাহ, জল পরিষেবা (নির্দিষ্ট স্থানে, সময় মেনে)। এ ছাড়া জটিল পরিকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ, যেমন বাঘজানের অপারেশন কাজ চলবে বলে জানানো হয়েছে।
ছাড় যেসব ক্ষেত্রে:
* প্রতিরক্ষা, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পুলিশ, জেলাশাসকের দফতর, পুলিস কমিশনারের দফতর, হোম গার্ড, সিভিল ডিফেন্স, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা, বিদ্যুৎ, জল, সাফাই, পুরসভা খোলা থাকবে।
* হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে
* জেলায় ব্যাঙ্কের শাখার ১০ শতাংশ (সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে) ন্যূনতম কর্মী নিয়ে খোলা থাকবে, খোলা থাকবে এটিএম।
* প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্র বিতরণ চলবে, তবে ন্যূনতম কর্মী বাইরে বেরোবেন
* টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট পরিষেবা, কেবল পরিষেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা চলবে। তবে বাইরে বেরোতে পারবেন কেবল রিপেয়ার কর্মীরা, আগে থেকে অনুমতি সাপেক্ষে।
* বিদ্যুৎ উৎপাদন বণ্টন চলবে
* আবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণ চলবে
* যেসব হোটেলে কোয়ারান্টিন ব্যবস্থা রয়েছে তা খোলা থাকবে
* রেলওয়ে দফতর এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবাহী ট্রেনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্তরা বেরোতে পারবেন
* তৈলশোধনাগারের মত প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলবে
* নির্দিষ্ট পেট্রোল পাম্প খোলা থাকবে
* কৃষি ও চাবাগানের কাজ চলবে
সরকারি কর্মী ও দফতরের কী হবে?
জয়েন্ট সেক্রেটারি ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সমস্ত আধিকারিক আসাম সেক্রেটারিয়েটে কাজে আসবেন। অন্য আধিকারিকদের প্রয়োজনমত কাজে আসতে বলা হবে।
আসামে যাত্রী প্রবেশে কোনও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে?
রেল ও বিমান পরিষেবায় কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে যাঁদের গুয়াহাটি যাওয়া বা আসার টিকিট রয়েছে তাঁরা নির্দিষ্ট চেকপয়েন্টে টিকিট দেখালে তবেই চলাচলের অনুমতি পাবেন। তা ছাড়া রাজ্যের মধ্যে বা আন্তঃরাজ্য চলাচল নিষিদ্ধ, যদি না আগে থেকে অনুমতি নেওয়া থাকে। আগের লকডাউন পাস বাতিল হবে, নতুন লকডাউন পাস দেওয়া হবে।
আর কোনও সাবধানতা বা নির্দেশ রয়েছে?
জনসমক্ষে, ও কাজের জায়গায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলত। ৬৫ ঊর্ধ্ব, যাঁদের অন্য অসুস্থতা রয়েছে, গর্ভবতী নারী ও ১০ বছরের নিচের শিশুদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের ১১টি ওয়ার্ডে ২৩ জুন যে ওয়ার্ডভিত্তিক লকডাউনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তার কী হবে?
পুরনো নির্দেশ বহাল থাকবে না, নতুন নির্দেশ অনুসারে এই ওয়ার্ডগুলিতেও ১২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, এই ওয়ার্ডগুলি রবিবার সন্ধে সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকবে যাতে মানুষজন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করতে পারেন।
এবারের লকডাউন কি অতি কঠোর?
জনসমক্ষে লোক চলাচলের ব্যাপারে প্রশাসন অতি কঠোর হবে। যেমন কোনও একজন যদি ছাড়ের আওতায় পড়েন, তার মানে এই নয় যে তিনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন। তবে চিকিৎসাজনিত এমার্জেন্সির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশ অনুসারে, পুলিশ কমিশনার বা জেলাশাসক কঠোরভাবে পূর্বোক্ত বিধি বলবৎ করবেন। সে জন্য এঁরা আইন প্রয়োগ করতে পারবেন। এসব নিষেধাজ্ঞা না মানলে ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১-৬০ ধারা অনুসারে বা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোনও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে?
প্রথম সাতদিনের জন্য নেই। জানানো হয়েছে প্রথম সাতদিন কঠোরভাবে পালন করার পর, মুদি বা শাকসব্জির দোকান খোলার কথা ভাবা যেতে পারে।