Advertisment

ওয়ার্ক ভিসা বন্ধ, মার্কিন সরকারের এ সিদ্ধান্তে কী প্রভাব পড়বে ভারতীয় সংস্থায়?

এর ফলে ভারতের যেসব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা হাজার হাজার কম খরচের কর্মীদের মার্কিন দেশে ক্লায়েন্ট সাইটে কাজ করার জন্য পাঠায়, সেই সংস্থার বেতন কাঠামোয় প্রভাব পড়বে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
US Suspension on H1B Visa

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসনে বসার পরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কম খরচের কর্মীরা অর্থনীতিতে সমস্যা সৃষ্টি করছেন

মার্কিন প্রশাসন মঙ্গলবার জানিয়েছে তারা  ইমিগ্রেশন ও নন ইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার ভিসায় নিষেধাজ্ঞা ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত লাগু রাখবে। হোয়াইট হাউস প্রেস নোটে জানানো হয়েছে, H-1B ও H-2B-র মত জনপ্রিয় ওয়ার্ক ভিসা এবং H-4, J ও L -এর  কিছু নির্দিষ্ট ভিসার উপরেও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।

Advertisment

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কোভিড-১৯ অতিমারীর মধ্যে আর্থিক সংকোচনের জেরে ভুক্তভোগী আমেরিকার নিজস্ব কর্মীদের সুরক্ষা দিতেই এই পদক্ষেপ।

H-1B, H-2B, L এবং অন্যান্য ওয়ার্ক ভিসা কী?

তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ও আরও বেশ কিছু ডোমেইনে শূন্যস্থান ভরাট করার জন্য অতিদক্ষ ও কম খরচের কর্মী নিয়োগের জন্য মার্কিন প্রশাসন প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিসা দেয় যার ফলে সংস্থাগুলি আমেরিকার বাইরে থেকে কর্মী নিয়ে এসে সেই কর্মীদের ক্লায়েন্ট সাইটে পাঠাতে পারে।

এই ওয়ার্ক ভিসার মধ্যে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল H-1B। মার্কিন সরকার প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার H-1B ভিসা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ভিসা দেওয়া হয় অতি দক্ষ বিদেশি কর্মীদের, এবং বাকি ২০ হাজার ভিসা দেওয়া হয় অতি দক্ষ বিদেশি কর্মীদের যাঁদের উচ্চশিক্ষা রয়েছে বা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে।

H-1B ভিসা ছাড়া, মার্কিন সরকার L1 ভিসা দিয়ে থাকে যার ফলে সংস্থাগুলি নিজেদের অতি দক্ষ কর্মীদের সাত বছর সময়কালের জন্য আমেরিকায় পাঠাতে পারে। H-2B ভিসা দেওয়া হয় আমেরিকায় কাজের সন্ধানী খাদ্য ও কৃষি কর্মীদের।

আমেরিকা নন-ইমিগ্রান্ট ওয়ার্কার ভিসা মুলতুবি করেছিল কেন?

১৯৫২ সাল থেকে শুরু হওয়া H-1 ভিসা প্রকল্প বহু পরিবর্তন ও সংস্কারের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে যার মাধ্যমে দক্ষ কর্মীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, অনুমতি বাতিল হয়েছে, সবটাই নির্ভর করেছে সে দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উপর। প্রযুক্তি বিস্ফোরণ ও ইন্টারনেট ও সস্তায় কম্পিউটার পৌঁছনোর ফলে ভারত ও চিনের মত উন্নয়নশীল দেশের গ্র্যাজুয়েটরা আমেরিকায় কম বেতনে কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, যা নিয়োগকারী ও নিযুক্ত উভয়ের পক্ষেই মঙ্গলজনক ছিল। তবে আমেরিকার কর্মীদের বিনিময়ে কম খরচে বিদেশ থেকে লোক নিয়োগের এই পদ্ধতি প্রায়শই সমালোচিত হয়েছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসনে বসার পরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কম খরচের কর্মীরা অর্থনীতিতে সমস্যা সৃষ্টি করছেন এবং নাগরিকদের কর্মসংকোচনের কারণ হচ্ছেন। আমেরিকা একই সঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছিল ভেভে পড়া H-1B ভিসা ব্যবস্থা তারা সংস্কার করবে।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আর্থিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে ট্রাম্প নন ইমিগ্রান্ট কর্মীদের দেশে প্রবেশ প্রথমে ২৩ জুন পর্যন্ত ও তারপর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।

নিষেধাজ্ঞার নির্দেশে ট্রাম্প বলেছেন সাধারণ পরিস্থিতিতে যথাযথ অস্থায়ী কর্মী প্রকল্প অর্থনীতির পক্ষে লাভজনক হতে পারে, কিন্তু কোভিড ১৯ এর জন্য যে আর্থিক সংকোচন তৈরি হয়েছে তাতে তা মার্কিন কর্মীদের পক্ষে আশঙ্কাজনক।

এর প্রভাব কী?

যেহেতু এই নিষেধাজ্ঞা তৎকাল লাগু হল, ফলে সমস্ত H-2B, J, এবং L ভিসা মুলতুবি হয়ে গেল। এর অর্থ যাঁদের ২৩ জুন বৈধ নন ইমিগ্রান্ট ভিসা নেই এবং আমেরিকার বাইরে রয়েছেন, তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। খাদ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবার কর্মীদের কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের প্রবোশাধিকারের বিষয়ে ইমিগ্রেশন সার্ভিসের কনসুলার অফিসার সিদ্ধান্ত নেবেন।

 ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের উপর এর প্রভাব কী?

ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি মার্কিন H-1B ভিসা প্রকল্পের সবচেয়ে সুবিধাভোগী। ১৯৯০ থেকে প্রতিবছর যত ভিসা ইস্যু করা হয়েছে তার সিংহভাগই তারাই পেয়েছে।

২০২০ সালের ১ এপ্রিল আমেরিকায় H-1B কর্মী ভিসার জন্য আড়াই লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে, তার মধ্যে ১.৮৪ লাখ, অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ আবেদন করেছেন ভারতীয়রা।

ওয়ার্ক ভিসা মুলতুবি ছাড়াও ট্রাম্পের সই করা নির্দেশে H-1B ওয়ার্ক ভিসার নিয়মাবলীতে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে, এখন যেভাবে লটারি পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা আর থাকবে না। নতুন নিয়মে সেইসব দক্ষ শ্রমিকদেরই ভিসা দেওয়া হবে যাঁরা তাঁদের সংস্থা থেকে সর্বোচ্চ বেতন পান।

এর ফলে ভারতের যেসব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা হাজার হাজার কম খরচের কর্মীদের মার্কিন দেশে ক্লায়েন্ট সাইটে কাজ করার জন্য পাঠায়, সেই সংস্থার বেতন কাঠামোয় প্রভাব পড়বে। যদিও ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি H-1B ভিসার ব্যাপারে তাদের নির্ভরতা অনেকটাই কমিয়েছে, তারা এখন ৫০ শতাংশ কর্মী স্থানীয়ভাবে নিয়োগ করে, তা সত্ত্বেও খরচ কমাবার জন্য তারা এই ভিসার উপর নির্ভর করে।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি যাঁরা আগে থেকেই মার্কিন দেশে রয়েছেন এবং H-1B ভিসা রয়েছে এমন ভারতীয়দের সাবকনট্র্যাক্টও দিয়ে থাকে। বেঙ্গালুরুর উইপ্রো সংস্থা তাদের আয়ের ২০ শতাংশ ব্যয় করে থাকে সাবকনট্র্যাক্ট দেওয়া ভারতীয় কর্মীদের জন্য।

Donald Trump IT Sector
Advertisment