বাতাসে বিষ! দেশ জুড়ে H3N2 ভাইরাসের দাপট। H3N2 গত দুই থেকে তিন মাস দাপট দেখাতে শুরু করেছে, এটি অন্যান্য সাব-টাইপের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক।
কোভিডের মতো উপসর্গ! হুহু করে ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি! ‘ফ্লু’-এর দাপটে নাজেহাল আম-আদমি। ফ্লু থেকে রক্ষা পেতে ইতিমধ্যেই একাধিক পরামর্শ জারি করেছে কেন্দ্র। ভারতের বিভিন্ন অংশে গত ২-৩ মাস ধরে বেড়ে চলেছে জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ। ফ্লু থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য কী করণীয় তা নিয়ে এবার গাইডলাইন সামনে আনল কেন্দ্র। কোভিড-এর মতো একই ধরণের লক্ষণ রয়েছে এই ফ্লুতেও। ইনফ্লুয়েঞ্জা A সাব-টাইপ H3N2-এর কারণেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ফ্লু, গত দুই-তিন মাস ধরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই ফ্লু, অন্যান্য ‘সাব-টাইপের’ তুলনায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েহাসপাতালে ভর্তির হারও তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। আপনি যদি H3N2 ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আতঙ্কিত হবেন না, চিকিৎকের পরামর্শ মেনে চলুন।
সারা দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) এর সাবটাইপ H3N2 ভাইরাসের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে দেশে দুজনের মৃত্যুও হয়েছে। দিল্লি-এনসিআর থেকে শুরু করে দক্ষিণ ভারতে বাড়ছে এই ভাইরাসের দাপট। বাদ নেই বাংলাও। ঘরে ঘরেই জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে ‘ভাইরাস’ নিয়ে মানুষের উদ্বেগও বাড়তে শুরু করেছে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোন নেই, তবে ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান দাপট ঠেকাতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলার কথাও বলেছেন তারা।
H3N2 উপসর্গ
এখনও পর্যন্ত H3N2 ও H1N1 ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে ভারতে। উভয় ভাইরাসেরই কোভিডের মত উপসর্গ থাকছে। অতিমারীর দুই বছর পর, এবার ক্রমবর্ধমান ফ্লু চিন্তা বাড়ছে। এক্ষেত্রে কাশি, জ্বর, ঠান্ডা লাগা ও শ্বাসকষ্ট, হাঁচির মত সমস্যাগুলি থাকছে। এমনকী কোনও কোনও রোগীর বমি বমি ভাব, গলা ও শরীরে যন্ত্রণাও দেখা দিচ্ছে।
প্রতি বছর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় বাড়ে ভাইরাসের দাপট। পাশাপাশি এর ভাইরাসের স্ট্রেনও বদলাতে থাকে। H3N2-এ আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, শরীরে ব্যথার পাশাপাশি কাশি ও সর্দি-কাশির মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই ভাইরাসের কারণে, ‘কাশির উপসর্গ’ দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে।
আক্রান্ত হলে কি করবেন?
শরীর হাইড্রেটেড রাখুন
জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
কাশির সিরাপ খান
গরম ভাপ নিন
ডায়েটে জিঙ্ক এবং মাল্টিভিটামিনের পরিমাণ বাড়ান
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ গ্রহণ করুন, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন
বেশি করে ফল খান
চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না
কিভাবে রক্ষা
ভিড়ে মাস্ক পরুন
অযথা ভিড় এড়িয়ে চলুন
কাশি এবং হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখুন
ফ্লু ভ্যাকসিন নিন, ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করে না
H3N2-এর উপসর্গ নিরাময়ে অনান্য বারের তুলনায় এবার অনেকটাই বেশি সময় লাগছে, যদিও ফ্লু থেকে নিউমোনিয়ার হার গত বছরের মতোই, কিন্তু যাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস অথবা হাই ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ফ্লু’তে আক্রান্ত হলে বিশেষ সতর্ক থাকা জরুরি। সর্দি-কাশি হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান। এ ব্যাপারে একেবারেই গাফিলতি করবেন না।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) বলেছে যে ইনফ্লুয়েঞ্জা A সাবটাইপ H3N2 ভাইরাসের কারণে ফ্লুতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। H3N2 গত দুই থেকে তিন মাস দাপট দেখাতে শুরু করেছে, এটি অন্যান্য সাব-টাইপের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। হাসপাতালে ভর্তির হারও সেই কারণে বেশি।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর তরফে জানানো হয়েছে এইও ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণভাবে তিন দিন মত জ্বর থাকে। কিন্তু কাশি প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি মানুষজন। জ্বরের সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণও এই ভাইরাসের কারণেই ঘটছে। আইএমএ জানিয়েছে কেবল অ্যান্টিবায়োটিক নয়, উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসারও পরামর্শ দিয়েছে।
ICMR সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কী করণীয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন সামনে এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত সাবান এবং জল দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা পরা এবং ভিড় এড়িয়ে চলা। জ্বর এবং শরীরের ব্যথার ক্ষেত্রে, ICMR প্যারাসিটামল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। প্রকাশ্যে থুতু ফেলবেন না। পাশাপাশি হ্যান্ডশেক না করার কথাও এই নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে। আইসিএমআর বলেছে যে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধগুলি কেবলমাত্র অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শের পরেই সেবন করা উচিত।