শনিবার পাকিস্তানের লাহোরের এক আদালত ঘোষণা করেছে তারা জামাত উদ দাওয়া প্রধান তথা লশকর এ তৈবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সঈদ ও সংগঠনের অন্য নেতাদের অভিযুক্ত করবে। এদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানোর অভিযোগ ইঠেছিল জুলাই মাসে। আগামী ৭ ডিসেম্বর এই অভিযুক্তকরণ ঘটবে বলে জানিয়েছে আদালত।
আন্তর্জাতিক মহলের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে পাকিস্তান চেষ্টা করে চলেছে যাচ্ছে লশকর এ তৈবা ও তাদেরই সগঠন জামাত উদ দোয়ার কার্যকলাপ নিয়ে তদন্ত করতে। প্যারিসের নজরদার সংস্থা ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)কে পাকিস্তান বোঝাতে চায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধের জন্য দেশ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় রয়েছে, যার ফলে বন্ড বাজার তুলতে টাকা তুলতে যথেষ্ট সমস্যায় পড়ছে তারা।
আরও পড়ুন, বাংলাদেশের হোলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গি হামলা ও সাতজনের মৃত্যুদণ্ড
কে এই হাফিজ সঈদ
হাফিজ সঈদ ইসলামি জঙ্গি সংগঠন লশকর এ তৈবার প্রতিষ্ঠাতা। এরা ইসলামের হাদিস অনুসরণকারী সংগঠন। এদের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে পাকিস্তানের স্বার্থ অনেকটাই জড়িত। সে সব লক্ষ্যের অন্যতম কাশ্মীরকে ভারত থেকে মুক্ত করা। ২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী এই সঈদ। লশকর ভারতে অন্য যে সব জঙ্গি কার্যকলাপের যুক্ত, তার মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালে নয়াদিল্লির সংসদ ভবনে হামলা এবং সাম্প্রতিক কালে, ২০১৬ সালে উরিতে সামরিক সদর দফতরে হামলা।
২০১২ সালে সঈদকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণে সাহায্য করবার জন্য আমেরিকা তার গ্রেফতারি বা শাস্তিতে সাহায্য করতে পারে এমন যে কোনও খবরের জন্য ১০ লক্ষ ডলার পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করে। এ ছাড়া মার্কিনরা ২০১২ সাল থেকে সঈদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি বলেও তকমা দেয়।
গত কয়েক বছরে সঈদ বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে জামাত উদ দোয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহের অভিযোগে পাক সরকার তাকে গ্রেফতার করে। তবে নভেম্বর মাসে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রমাণের অভাবে তার গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকার করে পাকিস্তান আদালত। অতি সম্প্রতি, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পাক কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসে অর্থ জোগানোর দায়ে তাকে গ্রেফতার করে। সেই থেকে সে লাহোরের কোট লাখপত জেলে রয়েছে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: করাচির একদা ডন এবার মোদীর আশ্রয়প্রার্থী
সঈদের বিরুদ্ধে কী মামলা রয়েছে
পাকিস্তানের ১৯৯৭ সালের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন অনুসারে সঈদ ও জামাত উদ দোয়ার অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে অর্থ জোগানো ও অর্থপাচারের মোট ২০টিরও বেশি মামলা দায়ের হয়। সঈদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২৩টি এফআইআর দায়ের করা হয়। অভিযোগের মধ্যে ছিল বিভিন্ন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং আল-আনফাল ট্রাস্ট, দাওয়াতউল ইরশাদ ট্রাস্ট এবং মুয়াজ বিন জাবাল ট্রাস্টেের মত ইসলামিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়ে তা জামাত উদ দোয়ার সন্ত্রাসবাদী কাজের জন্য জোগান দেওয়া।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড কো অপারেশন (সিআইএসসি) বলছে, লশকর এ তৈবার অর্থসংগ্রেহের নানা ধরন রয়েছে। পাকিস্তানের বাজারে দানবাক্স দেখতে পাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনকি, ধর্মীয় উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া পশুর চামড়া সংগ্রহ করে চামড়ার কারখানায় বিক্রি করে অর্থসংগ্রহের মত উপায়ও নিয়ে থাকে তারা। ডনের রিপোর্ট অনুসারে, জামাত উদ দোয়া চামড়া বিক্রি করে ২০০৯ সালে ১.২ মিলিয়ন ডলার অর্থ রোজগার করেছিল। আইএসআই এবং পাকিস্তান সরকারও জামাত উদ দোয়াকে অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। সিআইএসসি বলছে, লশকর এ তৈবা বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ এবং উপসাগরীয় এলাকা থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে।