করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা যাবার সময় থেকেই বারবার অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাত ধোবার কথা বলা হচ্ছে। এ কথা স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষেও প্রযোজ্য, কিন্তু তাঁরা নিজেরা যাতে সংক্রমিত হয়ে না পড়েন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রতিষেধকগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
কোভিড ১৯ রোগীদের যাঁরা পরিচর্যা করছেন, সেইসব স্বাস্থ্যকর্মীদের আদতে পিপিই দেওয়া উচিত, যার মধ্যে রয়েছে মাস্ক, চোখের সুরক্ষা উপকরণ এবং দস্তানা। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানী হতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে পিপিই যথাসময়ে পরা ও ছেড়ে ফেলা এবং হাতের স্বাস্থ্য পরিচর্যা।
ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা এখন বলছেন হাতের স্বাস্থ্য পরিচর্যা যথাযথভাবে করা হচ্ছে না।
গবেষকরা বলছেন, অতিমারীর সময়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং হাতের পুনঃসংক্রমণ আটকানো রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তার জন্য সর্বদা জরুরি।
সংক্রমণ প্রতিরোধে হাতের স্বাস্থ্য কতটা জরুরি?
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে হাতের পরিচর্যা সম্পর্কে হু বলেছে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে পরিচর্যার পদ্ধতি, তেমনই রয়েছে দেশভিত্তিক শিক্ষা, রাজনীতি ও আর্থিক বাধাসমূহও।
ফলে হাতের স্বাস্থ্য সংক্রমণ কমাবার উপায় হতে পারে। হুয়ের মতে, স্বাস্থ্য পরিচর্যা জনিত সংক্রমণ নির্ভর করে সংক্রামক এজেন্টের উপর।
হু বলছে, স্বাস্থ্য পরিচর্যা জনিত সংক্রমণ সর্বজনীন হতে পারে, এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ কার শক্ত কাজ। ফলে স্বাস্থ্য পরিচর্যা জনিত সংক্রমণ লুক্কায়িতই রয়ে গিয়েছে- যা উদ্বেগের বিষয় এবং কোনও প্রতিষ্ঠান বা দেশই এর সমাধান করেছে বলে দাবি করতে পারে না।
এছাড়াও স্বাস্থ্য পরিচর্যা জনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করা উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে দুঃসাধ্য, কারণ সংক্রমণজনিত মূল প্রতিরোধক পদ্ধতিগুলিই সেখানে বাস্তবত নেই। তার কারণ কম কর্মী, খারাপ স্বাস্থ্য ও নিকাশি ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব ও অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং জনসংখ্যাবৃদ্ধি।
উল্লেখযোগ্য যে সংক্রামক রোগের প্রকোপের সময়ে রোগীর দেখভাল করতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরাও সংক্রমিত হতে পারেন। অ্যাঙ্গোলার মত দেশে এরকম ঘটনা ঘটেছে।
হু বলছে, স্বাস্থ্য পরিচর্যা জনিত সংক্রমণ এক রোগী থেকে আরেক রোগীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে পাঁচ ধাপে ঘটতে পারে।
প্রথম হল রোগীর ত্বকে প্যাথোজেনের উপস্থিতি বা তার সংস্পর্শে আসা কোনও জড়বস্তুতে তার ছড়িয়ে পড়া, দ্বিতীয় ধাপ হল সেখান থেকে প্যাথোজেন স্বাস্থ্যকর্মীর হাতে সংক্রমিত হওয়া, তৃতীয় ধাপে অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য প্যাথোজেনকে স্বাস্থ্যকর্মীর হাতে জীবিত থাকতে হবে, চতুর্থত, স্বাস্থ্যকর্মী যথাযথভাবে হাতের স্বাস্থ্য পরিচর্যা করবেন না বা আদৌ করবেন না, এবং পঞ্চম তথা শেষ ধাপে তাঁর সংক্রমিত হাত অন্য কোনও রোগীর প্রত্যক্ষ সংযোগে আসবে বা এমন কোনও জড় বস্তুর সংযোগে আসবে যা অন্য রোগী স্পর্শ করবেন।
স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের হাতের থেকে পুনঃসংক্রমণ আটকাতে কী করতে পারেন?
হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা ক্লিনিকে কোন সারফেস পরিষ্কার আর কোনটা নয়, তা ধার্য করা মুশকিল। হাতের থেকে পুনঃসংক্রমণের কারণ এও হতে পারে যে মেডিক্যাল কর্মী যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত নন বা স্পষ্টত হুয়ের নির্দেশিকা বোঝেন না। নিরাপদ সারফেস কোনটা তা বোঝবার জন্য সারফেসকে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হয়, বারংবার পরিষ্কার করতে হয়, এবং সে কারণে প্রয়োজনীয় কর্মী রাখতে হয়।
গবেষকরা বলছেন সার্স ও মার্স রোগের প্রকোপের সময়ে সারফেস থেকে সংক্রমণ অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে গবেষকরা বলছেন, পুনঃসংক্রমণ রোধে ব্যবহার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
তাঁরা বলছেন প্রশিক্ষণ ও নজরদারির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কোন সারফেস পরিষ্কার ও কোনটা নয় তা বোঝানো যেতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন