বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার রবিবার এবং সোমবার রাজগির এবং গয়াতে 'হর ঘর গঙ্গাজল' প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। নদীর ধারে নয়, রাজ্যের এমন শুকনো অঞ্চলে কলের সাহায্যে গঙ্গার জল সরবরাহ করার এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে বর্ষার সময় গঙ্গার অতিরিক্ত জল সংগ্রহ করা হবে। তা সঞ্চয় করে শোধনের পর রাজগির, গয়া এবং বোধগয়ায় পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হবে। এই অঞ্চলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে আসা পানীয় জলের ট্যাংকারের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে গ্রীষ্ম, বসন্তের মত শুষ্ক ঋতুতে এই সব অঞ্চলে পানীয় জলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।
হর ঘর গঙ্গাজল প্রকল্প
'হর ঘর গঙ্গাজল' হল বিহার সরকারের জল, জীবন, সবুজায়ন প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পে ৪,০০০ কোটি টাকার প্রথম ধাপে খরচ হয়েছে। সেই অংশটুকুই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার চালু করবেন। এই প্রকল্পে বিশাল পাম্পের সাহায্যে মোকামার কাছে হাতিদাহ থেকে গঙ্গার জল তোলা হবে। আর, তা রাজগির, গয়া এবং বোধগয়ার মত বিহারের প্রধান পর্যটন স্থানগুলোর প্রায় ৭.৫ লক্ষ বাড়িতে সরবরাহ করা হবে।
প্রাথমিক পর্যায়
তিনটি ট্রিটমেন্ট-অ্যান্ড-পিউরিফিকেশন প্ল্যান্টে পাঠানোর আগে জল রাজগির এবং গয়ার জলাধারে সংরক্ষণ করা হবে, যেখান থেকেই এই জল শোধনের পর জনসাধারণের কাছে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি, জল হাথিদাহ থেকে পাইপের মাধ্যমে ১৫০ কিলোমিটার দূরের অঞ্চলে পৌঁছে যাবে। আর, সেখানে প্রতিটি সুবিধাভোগী পরিবারের কাছে জল জোগান দেবে। এই ব্যবস্থা পানীয় জল সরবরাহর ক্ষেত্রে সংস্কার ঘটাবে। পাশাপাশি, জলসংযোগের বিরাট একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করবে।
পরবর্তী পর্যায়
সরকারের আশা, এই প্রকল্পে প্রতিটি সুবিধাভোগী পরিবারকে দৈনিক ১৩৫ লিটার, অর্থাৎ প্রায় দুটি বড় বালতির পরিমাণ পানীয় জল সরবরাহ করা সম্ভব হবে। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য গঙ্গার জল জনসাধারণের পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করবে। আপাতত এই প্রকল্পটি রাজগির, গয়া, বোধগয়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে, যা আগামী বছরের গোড়াতেই চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে, সেই পর্যায়ে গঙ্গার জল নওয়াদায় নিয়ে যাওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছে বিহার সরকার।
প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা
রাজগীরের (নালন্দা জেলা) আশেপাশের এলাকা একসময় ছিল প্রাচীন মগধ রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র। বৌদ্ধ এবং জৈন উভয় ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম এই এলাকার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু, এই এলাকা পাথুরে এবং এখানে জলের প্রবল ঘাটতি রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, ভূগর্ভস্থ জলের অপরিকল্পিত এবং নির্বিচার ব্যবহার ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলোকে ক্ষয় করেছে, জলের স্তরকে নিম্নমুখী করেছে। পাশাপাশি, গয়া এবং রাজগিরে জলের গুণমানকেও প্রভাবিত করেছে।
ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমেছে
বিহারের বিভিন্ন শহরে জল সরবরাহের সিংহভাগ নলকূপের মাধ্যমে এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিহার পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের (পিএইচইডি) একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে গয়া জেলার গড় ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ২০২১ সালের জুলাই মাসে ৩০.৩০ ফুট থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৪১.৫০ ফুট গভীরে নেমে গিয়েছিল। বিহারের জন্য কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল বোর্ডের তথ্য দেখাচ্ছে যে গয়া এবং রাজগিরে ২০১৪-১৫ এবং ২০২০-২১ বর্ষে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ২ থেকে ৪ মিটারের মত কমেছে।
আরও পড়ুন- বঙ্গে বিজেপির ডিসেম্বর বিপ্লবের আগেই মমতার কৌশলী চাল, উস্কে উঠছে ‘সম্ভাবনার শিল্প’ জল্পনা
কী উপকার হবে?
ফলে ওই সব অঞ্চলে পানীয় জলের সংকট ক্রমশ বাড়ছে। পাশাপাশি, অতিবৃষ্টির জেরে নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল হামেশাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই অতিরিক্ত জলই যদি শুষ্ক অঞ্চলে সরবরাহ করা যায়, তবে পানীয় জলের চাহিদা যেমন মিটবে। তেমনই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। এই পরিকল্পনা থেকে 'হর ঘর গঙ্গাজল' প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলেই বিহার সরকার জানিয়েছে।
Read full story in English