বিশ্লেষণ: হরিয়ানায় চাবিকাঠি কি গোপাল কাণ্ডার হাতে?

৯-এর দশকে গোপাল কাণ্ডা নিজের দোকান জুপিটার মিউজিক হোমে রেডিও সারাই করতেন, মাসে রোজগার ছিল বড়জোর কয়েকশ টাকা।

৯-এর দশকে গোপাল কাণ্ডা নিজের দোকান জুপিটার মিউজিক হোমে রেডিও সারাই করতেন, মাসে রোজগার ছিল বড়জোর কয়েকশ টাকা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
gopal kanda haryana elections

হরিয়ানায় বিজেপির নয়া সরকার গঠনের মূল কারিগর হয়ে উঠতে পারেন গোপাল গোয়েল কাণ্ডা, হরিয়ানা লোকহিত পার্টির একমাত্র বিধায়ক। তিনি এই দল গঠন করেছিলেন ২০১৪ সালের মে মাসে। গোপাল কাণ্ডা সিরসা বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী গোকুল সেটিয়াকে হারিয়েছেন, তাঁর ভাই গোবিন্দ লোকদল প্রধান ওম প্রকাশ চৌতালার ত্যাজ্যভ্রাতা রঞ্জিত সিংয়ের কাছে হেরে গিয়েছেন।

Advertisment

বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা সিরসা থেকে বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক সুনীতা দুগ্গল গোপাল ও রঞ্জিতকে তুলে নিয়ে দিল্লি চলে যান। দুজনেই বিজেপিকে সমর্থন করতে রাজি হয়েছেন।

বৃহস্পতি সন্ধের ঘটনা অবশ্য গোপালের কাছে নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে তিনি একই কাজ করেছিলেন, তবে সেবার ছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে। সেবার কংগ্রেস ৪০ টি আসন নিয়ে একই রকম বিপাকে পড়েছিল এবং তাদের আরও ছ'জন বিধায়কের প্রয়োজন ছিল। কাণ্ডা সেবার হুডাকে কংগ্রেস সরকার গড়তে সাহায্য করার বিনিময়ে স্বরাষ্ট্র দফতর নিজের দখলে রেখেছিলেন।

Advertisment

গোপাল কাণ্ডার অতীত

নয়-এর দশকে গোপাল কাণ্ডা নিজের দোকান জুপিটার মিউজিক হোমে রেডিও সারাই করতেন, মাসে রোজগার ছিল বড়জোর কয়েকশ টাকা। সেখান থেকে ভাইয়ের সঙ্গে মিলে তিনি জুতোর ব্যবসা শুরু করেন এবং সিরসায় একটি জুতোর দোকান খোলেন। যুবক গোপাল তাঁর বন্ধুবৃত্তের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের কাছে পৌঁছন এবং তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি ও তাঁর ভাই খুব তাড়াতাড়ি একটা জুতোর কারখানাও খুলে ফেলেন।

গোপালের ছিল রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তার জেরেই তিনি প্রথমে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বংশী লালের পরিবারের কাছাকাছি পৌঁছে যান। কিন্তু বংশী লালের সরকার পড়ে যাওয়ার পরেই তিনিও অবস্থান পাল্টে চলে যান চৌতালার দিকে। হরিয়ানা ক্যাডারের এক সিনিয়র আইএএস অফিসারের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে ব্যবসা বাড়িয়ে তোলেন কাণ্ডা। সিরসা থেকে তিনি পৌঁছন গুরগাঁওয়ে, শুরু করেন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা। তারপর থেকে তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

গোপাল কাণ্ডার উত্থান

২০০৭ সালে সিরসাকে স্তম্ভিত করে দেয় গোপাল কাণ্ডার উড়ান সংস্থা শুরুর খবর। এমডিএলআর এয়ারলাইন্স নামের ওই সংস্থা তিনি তৈরি করেন নিজের বাবা মুরলীধর লাখ রামের নামে। কিন্তু এমডিএলআর বেশিদিন টেকেনি, মাত্র দু বছর পরেই ব্যবসা গোটায় তারা। গোপাল প্রথমে চেয়েছিলেন লোকদলের টিকিটে লড়তে, কিন্তু সুযোগ পাননি। ক্রুদ্ধ গোপাল সিরসা থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এবং জেতেন। সেবারই ভুপিন্দর সিং হুডা দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রতীক্ষায়। কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না, এবং সিরসা থেকে গোপাল কাণ্ডাকে তুলে নেওয়ার বন্দোবস্ত করলেন হুডা। দরাদরিতে দড় কাণ্ডা মন্ত্রিত্বের চেয়ে কম কিছুতে রাজি হন নি, পেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র দফতর। এখন কাণ্ডার গোল্ডেন গ্লোব হোটেলস প্রাইভেট লিমিটেড গোয়ায় ক্যাসিনো ব্যবসা চালায়।

গোপাল কাণ্ডার রাজনৈতিক যোগাযোগ

গোপাল ও গোবিন্দ কাণ্ডার বাবা প্রয়াত মুরলীধর সিরসার পরিচিত আইনজীবী ছিলেন। তিনি ১৯২৬ সালে আরএসএস-এ যোগ দেন, এমনকি সিরসা কেন্দ্র থেকে আরএসএসের নির্বাচনী প্রতীক প্রদীপ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন ১৯৫২ সালে। তবে সফল হননি তিনি। গোপাল এবং গোবিন্দ কাণ্ডা চৌতালা ভাইদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত অভয় চৌতালার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন গোপাল। কিন্তু সিরসা কেন্দ্র থেকে গোপালকে ভোটে না দাঁড়াতে দেওয়ার পর তাঁদের সম্পর্ক খারাপ হয়।

গোপাল কাণ্ডার বিতর্কিত অতীত

হরিয়ানা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১২ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর এমডিএলআর এয়রলাইন্সের এক পূর্বতন এয়ার হোস্টেস তাঁর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ জানিয়ে আত্মহত্যা করেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই এয়ার হোস্টেসের মা-ও একটি সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন।

২০১৪ সালের মার্চ মাসে দিল্লি হাইকোর্ট কাণ্ডার বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগ থেকে তাঁকে মুক্তি দেয় এবং তিনি জামিনে ছাড়া পান। এ মামলা এখনও বিচারাধীন। এ ছাড়া এনআই অ্যাক্টে আরও কিছু মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে কাণ্ডা ভাইদের বিরুদ্ধে সিরসায় একটি বেআইনি সম্পত্তি ডেভেলপ করার অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল ২০০৯ সাল থেকে।

গোপাল কাণ্ডার আধ্যাত্মিক পথ

কাণ্ডারা সিরসার এক আধ্যাত্মিক গুরু তারা বাবার শিষ্য। তাঁকে তুলে ধরার জন্য গোপাল কাণ্ডা প্রচুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০০২ সালে তারা বাবা মারা যাওয়ার আগে তাঁর কাছে যেতেন বেশ কিছু রাজনীতিবিদ। সিরসায় তারা বাবার স্মৃতিতে বিশাল মন্দির বানিয়েছেন কাণ্ডা। সেখানে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষকে খাওয়ানো হয়। সাপ্তাহিক কথকতাও হয় সেখানে।

Read the Full Story in English