Hathras stampede kills over 100: উত্তরপ্রদেশের হাথরসে পদপৃষ্ঠ হয়ে শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার (২ জুলাই) এক ধর্মীয় সমাবেশের সময় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ১২১ জন মারা গিয়েছেন। যাঁদের প্রায় সকলেই নারী। ধর্মীয় সমাবেশে পদদলিত হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা কিন্তু এই প্রথমবার ঘটল না। এফটি ইলিয়াস এবং অন্যান্যদের দ্বারা সংগ্রহ করা তথ্য অনুসারে, ১৯৫৪-২০১২ পর্যন্ত ভারতে যত পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় ৭৯% ঘটেছে ধর্মীয় গণসমাবেশে। এমনটাই লেখা আছে, ২০১৩ সালে প্রকাশিত, 'ধর্মীয় উৎসবের সময় মানুষের পদদলিত হওয়া: ভারতে গণ জমায়েত আর জরুরি পরিস্থিতির তুলনামূলক পর্যালোচনা'-য়।
পদদলিত হওয়াটা কী?
ওয়েংগুও ওয়েং এবং অন্যরা পদদলিত হওয়াকে, 'আহত হওয়া এবং মৃত্যুর কারণ ঘটানো ভিড়ের একটি আবেগপূর্ণ গণ ছোটাছুটি' বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বিষয়টিকে যে লেখায় সংজ্ঞায়িত করেছেন, তা ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটির নাম, 'ভিড় বা জমায়েতের ঝুঁকি এবং তার মূল্যায়ন পদ্ধতি বা পর্যালোচনামূলক বিশ্লেষণ'। ইলিয়াস এবং অন্যান্যরা, একটি পদদলিত হওয়ার ঘটনাকে, 'জনতার সুশৃঙ্খল চলাচলে ব্যাঘাত… আঘাত ও প্রাণহানির কারণ' বলে বর্ণনা করেছেন।
পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা কেন বাড়ছে?
বেশিরভাগ পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা আঘাতজনিত বা শ্বাসরোধের কারণে হয়। এই আঘাত বুক এবং পেটের ওপরের অংশের বাহ্যিক সংকোচনের কারণে হয়। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এই বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সংকোচন শক্তি মানুষের ওপর আঘাত হানার জেরেই হয়। এই আঘাত তাঁর হত্যার জন্য যথেষ্ট। এমনকী ছয় থেকে সাত জনকে একদিকে ঠেলে দিলেও এমনটা ঘটতে পারে। পদদলিতজনিত মৃত্যুর অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (হার্ট অ্যাটাক, হৃৎপিণ্ডের একটি অংশে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া বা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়া), অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে সরাসরি আঘাত, মাথায় আঘাত এবং ঘাড়ে সংকোচন।
আরও পড়ুন- নতুন ফৌজদারি আইন নিয়ে ব্যাপক তুলকালাম, কতটা রদবদল হয়েছে নতুন বিধিতে?
মনোবিজ্ঞানগত কারণ
পদদলন প্রায় সবসময়ই গণসমাবেশের মধ্যেই হয়। সেটা স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত হতে পারে, ভিড়ের সময় একটি মেট্রো স্টেশনে ঘটতে পারে। আবার হাথরসের মত সম্পূর্ণ আয়োজিত গণসমাবেশেও ঘটতে পারে। প্রায় সব পদদলিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে আতঙ্কের কারণে। একটি গবেষণাপত্রে মনোবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার মিন্টজ জানিয়েছিলেন, 'আতঙ্ক সৃষ্টিকারী পরিস্থিতিতে সাফল্যের জন্য সহযোগিতামূলক আচরণ প্রয়োজন। যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই সহযোগিতা করে, ততক্ষণ কোনও দোষারোপের পালা থাকে না। কিন্তু, সেই সহযোগিতামূলক পরিস্থিতি বন্ধ হলেই শুরু হয় দোষারোপ। ভিড়ে যে ব্যক্তি ধাক্কা দেয় না, সে-ও কিন্তু ধাক্কা খায় বলেই মিন্টন জানিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞানী নীল জে স্মেলসার এই ঠেলাঠেলিকে 'ক্রেজ' বলে উল্লেখ করেছেন। চুন-হাও শাও এবং অন্যরা তাদের গবেষণাপত্রে, 'স্ট্যাম্পেড ইভেন্টস এবং স্ট্র্যাটেজি ফর ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট' (২০১৮) এ পদদলনের বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হল- আলোর অভাব, ভিড়ের প্রবাহ, বাধা, ভবন ধস, প্রস্থানের পথে বাধা, আগুনের বিপদ। হাথরসের প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে বলেছেন, 'আমাকে বলা হয়েছে যে লোকেরা ধর্মগুরুর চরণ স্পর্শ করতে ছুটে এসেছিল। যেখান দিয়ে তিনি গিয়েছেন, সেই মাটি সংগ্রহের চেষ্টা চলছিল। তখনই পদদলিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে।'