ইতিহাসের সমস্ত কলঙ্ক মুছে ফের একবার ভোজ্য তেলের ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে চলেছে দেশের সর্ববৃহৎ ভোজ্য তেল উৎপাদনকারী সংস্থা গুজরাট কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেড (জিসিএমএমএফ)। ১৯৯০ সালে এক ভয়ঙ্কর মহামারী ডেকে আনে এই সংস্থার 'ধারা' নামের একটি ভোজ্য তেলের ব্র্যান্ড। সেই কারণে সেই সময় 'নিষিদ্ধ' ঘোষণা করা হয়েছিল এই ব্র্যান্ডটিকে। ২০০৪ সালে তেলের ব্যবসা একেবারে গুটিয়ে নেয় গুজরাটের এই সংস্থা।
১৫ বছরের দীর্ঘ সময়ের পর আবার ভোজ্য তেলের ব্যবসায় ফিরতে চলেছে সংস্থাটি। গুজরাট কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেড হল আমুল সংস্থার মূল ভরকেন্দ্র। উত্তর গুজরাটের পালানপুরে একটি বন্ধ তেল কারখানা এবার খুলতে চলেছে এই সংস্থারই হাত ধরে। জানা গিয়েছে স্থানীয় যে তৈলবীজ, তা দিয়েই ভোজ্য তেল উৎপাদন করা শুরু করবে এই সংস্থা।
তবে কি ১৫ বছর আগের ভুল শুধরে ফের নতুন করে ময়দানে নামবে মোদী রাজ্যের এই সংস্থা? কী পরিকল্পনায় কাজ হতে চলেছে?
জিসিএমএমএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আর এস সোধি বলেন, "আমরা এই মুহুর্তে একটি পাইলট প্রজেক্ট লঞ্চ করেছি। খুব ছোটভাবে। আমাদের একটি মিল্ক প্রোডিউসার ইউনিয়ন লিমিটেড প্রতিদিন ২৫০ টন তেল উৎপাদন করে এমন একটি ভোজ্য তেল উৎপাদন প্লান্ট চালাতে উদ্যোগী হয়েছে। আমরা প্রথমে তিন ধরনের তেল উৎপাদন করব। বাদাম তেল, সরষের তেল এবং তিল তেল।"
এই ইউনিয়নের বিজেপি নেতা শঙ্কর চৌধুরী বলেন, "কৃষকরা ইতিমধ্যেই সরষে, বাদাম, তুলো চাষ করেতে শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ আমরা দুধ ছাড়াও আরেকটি ক্ষেত্রকে উজ্জীবিত করতে পারছি। কীভাবে এই ক্ষেত্রটিকে আরও উন্নত করা যায় কৃষিবিশেজ্ঞরা সেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে প্রায় আড়াই বছর ধরে।"
দেশে প্রথম ভোজ্যতেল প্যাকেটজাত পণ্য হিসেবে কেন বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গুজরাটের এই সর্ববৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সংস্থা?
একসময় গুজরাট কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেড এবং ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কর্ণধার ছিলেন ডাঃ ভার্গিস কুরিয়েন। ১৯৮৮ সালে ওনার নেতৃত্বেই বাজারে আসে ভোজ্য তেলের ব্র্যান্ড 'ধারা'। সেই সময় বাজার ছেয়ে ছিল খোলা তেল বিক্রির কারবারিরা। তাঁদের বাজারকে ধরতেই এই ধারা পণ্য আনা হয়। ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত গুজরাট কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেডের হাতেই ছিল এই পণ্য বিক্রয়ের মালিকানা।
ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সোধি জানান, "ভারত সরকারের অনুরোধেই ধারা ব্র্যান্ড লঞ্চ করা হয়েছিল। আমরা ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের হয়ে এই তেল বিক্রি করতাম। ১৯৯৪-৯৫ সালে আমরা ১ হাজার কোটি টাকা লাভ তুলেছিলাম এই ব্যবসা থেকে।"
তবে কেন বন্ধ করতে হল এই ব্যবসা?
সময়টা ১৯৯৮ সাল। দেশজুড়ে রমরমে ব্যবসা করছে 'ধারা' তেল। হঠাৎই এই তেল থেকে মহামারী তৈরি হল ভারতে। প্রাণ হারালেন বহু মানুষ। বিভিন্ন রাজ্যে এই তেল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরীক্ষায় পাওয়া যায় ভেজাল উপাদানের প্রমাণ। ২০১৭ সালে দিল্লি হাইকোর্ট ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এবং গুজরাট কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেডকে এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানাও ধার্য করে।
১৯৯৮ সালের এই ঘটনা থেকে কী শিখেছে সংস্থা?
গুজরাটের এই সংস্থা প্রধান সোধী বলেন, "তেলের ব্যবসা খুবই সাবধানতা অবলম্বন করে করার ব্যবসা। আমি খুব সাবধান থাকব প্রতিটি সময়ে। ভেজাল এই ইস্যুটি খুবই মারাত্মক। কাঁচা উপাদানগুলিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন আমুল ব্র্যান্ড কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এবার থেকে হবে।" নতুন এই তেলের ব্র্যান্ডয়ের নাম হবে 'জন্মে'। যার অর্থ- নতুন জন্ম হয়েছে এমন। আমুলের সমস্ত পার্লারে পাওয়া যাবে এই পণ্য, এমনটাই সংস্থার তরফে জানান হয়েছে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন