করোনা-আতঙ্কে যখন সারা বিশ্ব কম্পমান, বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার মান স্বাভাবিকভাবেই আলোচ্য বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। আসুন, দেখে নিই, এ ব্যাপারে ভারত ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে।
রোগের প্রাদুর্ভাবের আগে সাধারণ স্বাস্থ্যমান
ইতালি এবং চিনের সাম্প্রতিক করোনা-গবেষনা জানাচ্ছে, যাঁরা করোনায় ওই দুই দেশে মারা গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই সম্ভবত আগে থেকেই ডায়াবিটিস, কিডনির সমস্যা বা হৃদযন্ত্রে গোলযোগ ছিল। বিশেষজ্ঞরা এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছননি, তবে আগে থেকেই শরীরে বাসা বেঁধে-থাকা কোনও রোগ করোনায় মৃত্যুর নেপথ্যে একটা কারণ হতে পারে।
চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান, ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার মতো যে দেশগুলিতে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, তাদের মধ্যে চিন এবং আমেরিকা বাদে ভারতে হৃদরোগে ভোগা মানুষের সংখ্যা বাকি চারটি দেশের তুলনায় বেশি। ডায়াবিটিস আর কিডনির সমস্যার ক্ষেত্রে ভারতে রোগীর সংখ্যা ইতালি, চিন আর ইংল্যান্ডের থেকে বেশি, কিন্তু ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া আর আমেরিকার থেকে কম।
আরও পড়ুন: দুনিয়ার অর্ধেক ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ- এর পর কী হবে?
কোনও দেশে কোনও নির্দিষ্ট রোগের প্রকোপ বোঝাতে 'DALY' (Disability Adjusted Life Years) নামের এক সূচক ব্যবহার করা হয় আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যমহলে। 'DALY' হলো সেই সূচক, যা বলে দেয়, কোনও রোগের জন্য আপনার জীবন থেকে কতগুলো 'সুস্থ বছর' আপনি হারাতে পারেন।
ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন নামক গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগের ক্ষেত্রে ভারতের সূচক ছিল প্রতি ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪,৭১৬ DALY, যা আমেরিকার ক্ষেত্রে ছিল ৪,৮১৪, এবং চিনের ক্ষেত্রে ছিল ৬,০২০। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ছিল ২,৩৪০। এবং করোনার প্রবল দাপট সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্য দেশগুলির মতো ব্যাপক মৃত্যু ঘটেনি।
ডায়াবিটিস এবং কিডনিঘটিত রোগের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে ভারতের সূচক ছিল ১,৩৪০ DALY। আমেরিকা (১,৭৭৯), দক্ষিণ কোরিয়া (১,৪৪৭) এবং ইরানের (১,৩৫৬) ক্ষেত্রে এই সূচক ছিল ভারতের থেকে বেশি। ইতালি (১,২৬৬), চিন (১,০৬৮), এবং ইংল্যান্ডে (৯১৩) ছিল ভারতের তুলনায় কম।
ইতালিতে করোনায় যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের আগে থেকেই ডায়াবিটিস, হৃদরোগের সমস্যা বা ক্যানসার ছিল বলে ১৩ মার্চ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে।
দ্য চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানিয়েছে, চিনে করোনায় মৃতদের অধিকাংশেরই গড় বয়স ছিল ৬০-এর উপর, এবং এঁদের আগে থেকেই হৃদরোগ, ডায়াবিটিস বা কিডনির সমস্যা ছিল।
আরও পড়ুন: করোনা উপসর্গে আইবুপ্রোফেন খেতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকরা
ভারতীয়রা তুলনায় কমবয়সী
করোনা-আক্রান্তদের বয়সভিত্তিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, ইতালিতে মৃতদের গড় বয়স ৮১। অন্যদিকে, চিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১,৫৯০ জন রোগীদের গড় বয়স ৪৮.৯।
আমেরিকার এক সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মৃতদের মধ্যে ১০ থেকে ২৭ শতাংশের বয়স ৮৫-র বেশি। এবং করোনা-আক্রান্তদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের গড় বয়স ৬৫-র বেশি।
ভারতের জনসংখ্যার ৬ শতাংশের বয়স ৬৫-র বেশি। ২৫ শতাংশের বয়স ১৪ বা তার নিচে। ভারতের অনুর্দ্ধ-১৪ জনসংখ্যা করোনা-বিধ্বস্ত প্রধান ছয়টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস লকডাউন: দূষণ কমছে চিন ও ইতালিতে
স্বাস্থ্য পরিষেবার ভারবহন-ক্ষমতা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন (WHO)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি দশ হাজার মানুষ পিছু হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ভারতে অন্য ছয়টি দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। সংখ্যাটা মাত্র সাত। ইরান (১৫), ইংল্যান্ড (২৮), আমেরিকা (২৯), ইতালি (৩৪), চিন (৪২) এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় (১৪৩) সংখ্যাটা তুলনায় বেশি।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ১৫,৯৮০ টি 'আইসোলেশন বেড' এবং ৩৭,৩২৬ টি 'কোয়ারান্টাইন বেড' রয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ৮৪ হাজার মানুষ পিছু একটি 'আইসোলেশন বেড', এবং প্রতি ৩৬ হাজার মানুষ পিছু একটি 'কোয়ারান্টাইন বেড' আছে এ দেশে।