Heatwaves in several parts of India: দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বর্তমানে তাপপ্রবাহে কাহিল। এবার হয়তো তাপমাত্রাটা একটু বেশি। কিন্ত, এবারই শুধু নয়। প্রতিবারই তাপমাত্রা এপ্রিলে বেশ বেড়ে যায়। সেকথা মাথায় রেখে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর এপ্রিলের পূর্বাভাসেই জানিয়েছিল, দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর, দীর্ঘদিন ধরেই তাপপ্রবাহ চলবে। সেই অনুযায়ী, গোটা এপ্রিলের ২৬টা দিন ধরেই পুড়েছে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
কোর হিটওয়েভ জোন
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ উপদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। উত্তরের সমভূমি চলতি মরশুমে এখনও সেই তীব্র তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়নি। প্রতিবারই দেখা যায়, কোর হিটওয়েভ জোন বা সিএইচজেড- অর্থাৎ গুজরাট, বাংলার কিছু অঞ্চল, উত্তর এবং উপদ্বীপ ভারতে গ্রীষ্মের মরশুমে তীব্র তাপ প্রবাহিত হয়। মার্চ থেকে জুন এমনকী জুলাই পর্যন্তও এই তাপপ্রবাহ চলে। আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় তাপপ্রবাহ চরমে থাকে।
আইএমডি কখন তাপপ্রবাহ বইছে বলে ঘোষণা করে?
আইএমডি বা ভারতীয় আবহাওয়া দফতর, যখন সমতল অঞ্চলে কমপক্ষে দুটি এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ডসংখ্যক, অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তখন তাপপ্রবাহ বইছে বলে ঘোষণা করে। পার্বত্য এবং উপকূলীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করলে তাপপ্রবাহ বইছে বলে ঘোষণা করা হয়। এমনিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হলে, গুরুতর তাপপ্রবাহ চলছে বলে ঘোষণা করে আবহাওয়া দফতর।
এপ্রিলে এত গরম কেন?
চলতি বছর, ২০২৪ সালে ভারতে এল নিনোর প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে। এল নিনো হল আবহাওয়ার একটি ধরণ। যা, নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরে জলের অস্বাভাবিক উষ্ণতাকে বোঝায়। বিশ্বের বিস্তীর্ণ অংশ এবং মহাসাগরকে এই এল নিনো চরম উত্তাপের দিকে পরিচালিত করে। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের মতে, সাধারণত ২০২৩ সালের জুনে কর্ণাটকে এল নিনো শুরু হয়। চরম-কঠোর তাপমাত্রা, বর্ধিত তাপপ্রবাহ, প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অভাব এই এল নিনোর সমস্যাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
আরও পড়ুন- ঋণগ্রহীতাদের নানা কথা বুঝিয়ে বেশি টাকা হাতাচ্ছে ব্যাংকগুলো! ধরে ফেলে কড়া নির্দেশ আরবিআইয়ের
সাইক্লোনরোধী বায়ুমণ্ডল
পাশাপাশি, দক্ষিণ উপদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন বিরোধী বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতি এপ্রিলের গরমের জন্য অনেকটাই দায়ী। এই উচ্চচাপ ব্যবস্থা, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উচ্চতায় হাজার থেকে দু'হাজার কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এই বায়ু তার নীচের বায়ুকে পৃথিবীর দিকে ঠেলে দেয়, যাকে বায়ু হ্রাস বলে। এর ফলে, ভূপৃষ্ঠের দিকে চলে যাওয়া বায়ু আরও তাপ উৎপন্ন করে। এই বায়ু আবার সমুদ্র থেকে আসা শীতল বায়ুকে স্থলে প্রবেশে বাধা দেয়। এভাবেই এল নিনো এবং অ্যান্টিসাইক্লোন সিস্টেম এপ্রিল মাসে মিলিতভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রে উত্তপ্ত গরম পরিস্থিতি এবং তাপপ্রবাহ তৈরি করে।