গাজা যুদ্ধের চার দিনের মানবিক বিরতি শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা অবরুদ্ধ ছিটমহলে সাহায্য বিতরণের সময়সীমা বাড়ানোর আশা করছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, পানীয় জল এবং ওষুধের ঘাটতি বেড়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যে কোনও সময় গাজায় ব্যাপকহারে রোগ ছড়াতে পারে। যা বাড়াতে পারে এই অঞ্চলে মৃত্যুর হার। গাজার অর্ধেকের কিছু অংশ এক সপ্তাহের জন্য বাইরের সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে, রাষ্ট্রসংঘের এক মুখপাত্র গাজাকে, 'পৃথিবীর নরক' বলে বর্ণনা করেছেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ঠিক কেমন?
বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী
গাজার মোট জনসংখ্যা ২৩ লক্ষ। তার মধ্যে ১৭ লক্ষেরও বেশি লোক গাজার মধ্যেই বাস্তুচ্যুত। এর মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ বাসিন্দা রাষ্ট্রসংঘের প্যালেস্তিনীয় শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) দ্বারা পরিচালিত কমপক্ষে ১৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। রাষ্ট্রসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ওসিএইচএ) এমনটাই জানিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ভিড়ে পূর্ণ এবং সেখানে আশ্রিতের সংখ্যা যতজনের থাকার কথা, তার চারগুণেরও বেশি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইজরায়েলি বোমা হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার গাজাবাসী দক্ষিণে পালিয়ে গেছেন। যাই হোক, ইজরায়েলি বিমান দক্ষিণেও আঘাত করেছে। যাতে সাধারণ নাগরিকরাও নিহত এবং আহত হয়েছেন। বেশিরভাগ বাস্তুচ্যুত পুরুষ এবং বয়স্ক ছেলেরা আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরের দেয়ালের পাশে খোলা জায়গায় ঘুমোচ্ছেন। কিছু পরিবার খান ইউনিসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে তাঁবু ফেলেছে। এমনটাই জানিয়েছে ওসিএইচএ।
হাসপাতালের অবস্থা
বোমাবর্ষণ এবং জ্বালানির অভাবে উত্তর গাজার কোনও হাসপাতালই স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না। ওসিএইচএ জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার ১১টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র আটটি কার্যকরী আছে। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র একটিতেই জটিল অস্ত্রোপচার হতে পারে। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু। এই ব্যাপারে হু বলছে, উত্তর গাজার তিনটি হাসপাতালকে স্থানান্তরিত করতে সাহায্য করার জন্য ইজরায়েল অনুরোধ করেছে। সেই অনুরোধ রাখার চেষ্টা চলছে। অক্সফামের মতে, প্রসূতিদের ওপর ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ এবং মানসিক আঘাতের কারণে গত মাসে ইসরায়েল-অবরুদ্ধ গাজায় অকাল প্রসবের সংখ্যা প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন- ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা কি পিতৃতান্ত্রিকতায় দুষ্ট?
সাহায্য বিতরণ
রাফাহ সীমান্ত ২১ অক্টোবর সীমিত পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছে। কিন্তু, গাজার অন্য সব সীমান্ত বন্ধ। ২৩ নভেম্বর মিশর থেকে মানবিক সরবরাহ বহনকারী মোট ৮০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। মিশর বলেছে যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় প্রতিদিন ১৩০,০০০ লিটার ডিজেল এবং চার ট্রাক গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ২০০ ত্রাণবোঝাই ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে।
জলের ব্যবস্থা
গাজায় জলের অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। কিছু, বন্ধ হয়ে থাকা জলের কূপ ব্যবহার করা হচ্ছে। পাম্পিং স্টেশনগুলোকে পুনরায় কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ওয়াটার ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট এবং উত্তর গাজায় জল সরবরাহকারী ইজরাইলের পাইপলাইন কাজ করছে না। এমনটাই জানিয়েছে ওসিএইচএ। বর্জ্য শোধনাগারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং জ্বালানির ঘাটতির কারণে পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করতে পারছে না। রাফাহ শহরের কাছে রাস্তায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যাহত হয়েছে বলে, ওসিএইচএ জানিয়েছে।
জ্বালানি
ইজরায়েল মিশর থেকে গাজায় সীমিত জ্বালানি দৈনিক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত গাজায় ৭৫ হাজার লিটার জ্বালানি পৌঁছেছে। রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ খাদ্য বিতরণ করছে। পাশাপাশি হাসপাতাল, জল, স্যানিটেশন, আশ্রয়কেন্দ্র, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা চালাতে গাজায় প্রবেশ করা জ্বালানি বিতরণও করছে।
(রয়টার্স থেকে ইনপুট -সহ)