Highlights of the Kovind panel’s recommendations: বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন সংক্রান্ত উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি (এইচএলসি) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে রিপোর্ট পেশ করেছে। মোট ১৮,৬২৬-পৃষ্ঠার ২১-খণ্ডের প্রতিবেদনটিতে ১১টি অধ্যায় আছে। সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু অংশও আছে এই রিপোর্টে। সরকার ইতিমধ্যে নথিপত্র ঘেঁটে এই ইস্যুতে বেশি করে জিজ্ঞাসা করা প্রশ্ন (এফএকিউএস) এবং তার উত্তরের তালিকা বানিয়েছে।
একযোগে নির্বাচন ব্যাপারটা কী?
একযোগে নির্বাচন, 'এক জাতি, এক নির্বাচন' বলেও পরিচিত। অর্থাৎ, একই সময়ে লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের আয়োজন। বর্তমানে এই সমস্ত নির্বাচন নিজের সময় অনুযায়ী আয়োজিত হয়।
দেশে কি প্রথমবার একযোগে নির্বাচন হচ্ছে?
না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতার পর ১৯৫৭ সালে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই দেশের সাতটি রাজ্য- বিহার, বম্বে, মাদ্রাজ, মহীশূর, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে একযোগে নির্বাচন হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত এভাবে একসঙ্গেই নির্বাচন হচ্ছিল। এই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার মেয়াদ শেষের আগেই রাজ্য সরকারগুলোকে বরখাস্ত করার জন্য সাংবিধানিক আইন ব্যবহার করেছিল। যাতে সময়ের আগেই রাজ্য এবং কেন্দ্রে জোট সরকারের পতন ঘটতে থাকে। আর, তারপর থেকেই গোটা দেশে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন শুরু হয়। উচ্চপর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে পাঁচ থেকে ছয়টি নির্বাচন হয়। এই তালিকায় যদি পুরসভা আর পঞ্চায়েত নির্বাচনকেও ধরা হয়, তবে আয়োজিত নির্বাচনের সংখ্যাটা অনেক বেশি দাঁড়াবে।
একযোগে নির্বাচনের কী দরকার?
মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একযোগে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ফের বেড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসক দল বিজেপি যে বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছে, তা হল:
(১) ঘনঘন নির্বাচনে সরকারি কোষাগারে অতিরিক্ত ব্যয় হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যয় যুক্ত হলে এই ব্যয়ের সংখ্যাটা আরও বেশি দাঁড়ায়। (২) ঘনঘন নির্বাচন অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সরবরাহ, ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। (৩) ঘনঘন নির্বাচনের কারণে সরকারি পরিষেবা ব্যাহত হয়। যাতে নাগরিকরা সমস্যায় পড়েন। (৪) সরকারি আধিকারিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঘন ঘন ব্যবহার, তাঁদের দায়িত্ব পালনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। (৫) ঘনঘন আদর্শ আচরণবিধি (এমসিসি) আরোপ, প্রশাসনে নীতিগত সমস্যা তৈরি করে। উন্নয়নের গতি কমিয়ে দেয়। (৬) বারবার নির্বাচন, 'ভোটারদের মধ্যে ক্লান্তি'র জন্ম দেয়। নির্বাচনে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
উচ্চপর্যায়ের কমিটি
একসঙ্গে দেশজুড়ে ভোট করা সম্ভব কি না, তা নির্ধারণ করতে এইচএলসি বা উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি হয়। যার চেয়ারম্যান করা হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে। তাঁর নেতৃত্বাধীন এই কমিটি বা প্যানেল, 'কোবিন্দ প্যানেল' নামে পরিচিতি পেয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যসভার প্রাক্তন বিরোধী নেতা গুলাম নবি আজাদ, লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব সুভাষ সি কাশ্যপ, ১৫তম অর্থ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এনকে সিং, প্রবীণ আইনজীবী হরিশ সালভে ও প্রাক্তন চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি। কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত ছিলেন আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। কোবিন্দ প্যানেল নয়াদিল্লির যোধপুর অফিসার্স হস্টেলে মোট ৬৫টি সভা করেছে। চূড়ান্ত সভা হয়েছে ১০মার্চ। কমিটি বেশ কয়েকটি রিপোর্ট এবং সমীক্ষার উল্লেখ করেছে। বিভিন্নস্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছে।
আরও পড়ুন- ভারতে ধর্ম-নাগরিকত্ব জুড়ে গিয়েছে, আজ থেকে নয়, শুরুটা কবে-কীভাবে হয়েছিল?
কমিটি কী সুপারিশ করেছে?
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী:- ১) দুই ধাপে একযোগে নির্বাচন করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। প্রথম ধাপে একযোগে লোকসভা ও বিধানসভাগুলোর নির্বাচন করানো যাবে। এই ব্যাপারে সংবিধান সংশোধনের জন্য রাজ্যগুলোর কোনও অনুমোদনের দরকার হবে না। দ্বিতীয় ধাপে- পুরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচন- লোকসভা এবং বিধানসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে লোকসভা এবং বিধানসভাগুলোর নির্বাচনের ১০০ দিনের মধ্যে স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এজন্য অর্ধেকের কম রাজ্যের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে বলেও জানিয়েছে কমিটি।
(২) একক ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনী পরিচয়পত্র: সরকারের তিনটি স্তরের নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য একক ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনী ছবির পরিচয়পত্র তৈরির উদ্দেশ্যে, সংবিধান সংশোধন করা উচিত। যাতে ভারতের নির্বাচন কমিশন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে একটি একক ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনী আইডি তৈরি করতে পারে। এই সংশোধনগুলোর জন্য অর্ধেকেরও কম রাজ্যের অনুমোদনের দরকার হবে।
(৩) ত্রিশঙ্কু আইনসভার ক্ষেত্রে: একটি ঝুলন্ত আইনসভা, একটি অনাস্থা প্রস্তাব বা এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে, সভার মেয়াদ শেষ না-হলেও তার জন্য নতুন লোকসভা বা বিধানসভা গঠন দরকার। সেজন্যও নতুন করে নির্বাচন হওয়া উচিত।
(৪) লজিস্টিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা: কমিটি সুপারিশ করেছে, একসঙ্গে যাবতীয় নির্বাচন করাতে গেলে, লজিস্টিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারতের নির্বাচন কমিশন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আগে থেকেই যাবতীয় পরিকল্পনা ছকে নেবে। সেই অনুযায়ী জনবল অর্থাৎ ভোটকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হবে। বাহিনী, ইভিএম/ভিভিপিএটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাতে সরবরাহ যথেষ্ট থাকে, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে লক্ষ্য থাকবে, রাষ্ট্রের তিনটি স্তরেই একযোগে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন।