মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধায় এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 'হিন্দু সন্ত্রাস'-এর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, এ শব্দবন্ধ কংগ্রেসের তৈরি করা। এ প্রসঙ্গে সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে মুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে আদালতের নথি অবশ্য ভিন্ন কথা বলছে।
সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ মামলায় নিম্ন আদালত সমস্ত অভিযুক্তদের খালাস করে দিলেও গভীর বেদনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে এনআইএ এ ব্যাপারে যথাযথ প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।
২০১৭ সালের ৮ মার্চ জয়পুরের বিশেষ আদালত তিন প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক সুনীল জোশী, দেবেন্দ্র গুপ্তা এবং ভবেশ প্যাটেলকে ২০০৭ সালের আজমের দরগা বিস্ফোরণ কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে এদের সকলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি ততদিনে মৃত সুনীল জোশীকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
আদালত জানিয়েছিল, এনআইএ প্রমাণ করেছে যে সুফি দরগায় যে বোমা রাখা ছিল তার ট্রিগার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সেলফোনের সিম কার্ড কিনেছে দেবেন্দ্র গুপ্তা। জোশী এবং গুপ্তা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করার জন্য এবং প্যাটেল ঘটনাস্থলে বোমা রাখার ব্যাপারে দোষী বলে ঘোষণা করেছিল আদালত।
আজমেরের সুফি সন্ত খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর।
এ মামলায় আরএসএসের নবকুমার সরকার ওরফে অসীমানন্দ ও আরও ৬জনকে খালাস করে দিয়েছিল আদালত। এদের সকলকে বেনিফিট অফ ডাউটের কারণে ছাড়া হয়।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সরকারের অধীন অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) ১২ জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র আওতায় চার্জশিট দাখিল করে। এরা সকলেই কঠোর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত।
সে বছরেই এটিএস এদের সকলকে অস্ত্র শস্ত্র ও বিস্ফোরক আটক করার সময়ে গ্রেফতার করেছিল।
এই অভিযুক্তদের সন্ত্রাসবাদী গ্যাং নামে অভিহিত করে চার্জশিটে বলা হয়েছিল, "অভিযুক্তরা সকলেই সনাতন সংস্থা (সদর দফতর গোয়া), (এদেরই অধীনস্থ) হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি এবং এ ধরনের কোনও না কোনও ছোটখাট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত... এরা সকলেই তথাকথিত হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করতে চায়, যে হিন্দু রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা রয়েছে সনাতন সংস্থা প্রকাশিত পুস্তক ক্ষাত্র ধর্ম সাধনা-য়।"
চার্জশিটে আরও বলা হয়েছিল "অভিযুক্তরা সমমনস্ক তরুণদের নিয়ে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের ঐক্য, সংহতি, নিরাপত্তা এবং সারবভৌমত্বকে বিপন্ন করা।"
তদন্তে প্রকাশিত হয়েছিল, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পুনেতে অনুষ্ঠিত সানবার্ন নামের পাশ্চাত্য সংগীতের একটি আসর এই সন্ত্রাসবাদী গ্যাংয়ের নজরে ছিল। চার্জশিটে এ কথার উল্লেখ করা হয়েছে। এই চার্জশিটে ১৯০ জনের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই সন্ত্রাসবাদী গ্যাংটি দেশি বোমা, পেট্রোল বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে এবং ব্যাপক হারে পাথর ছুড়ে পাশ্চাত্য সংগীত এবং সংস্কৃতির অনুরাগীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেওয়ার পরিকল্পনাই শুধু করতে চায়নি, অনুষ্ঠানে হাজির জনতাকেও সন্ত্রস্ত করে তুলতে চেয়েছিল।
এই তদন্তের উপর ভিত্তি করে এটিএস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে একটি ডসিয়ের পাঠিয়ে সনাতন সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেয়। ২০১১ সালে ইউপিএ সরকারের সময়ে সনাতন সংস্থা সম্পর্কে একই ধরনের ডসিয়ের পাঠানো হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। কিন্তু সে সময়েও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ মামলায় খালাসের ক্ষেত্রে পাঁচকুলার বিশেষ আদালত এনআইএ তদন্তে অসামঞ্জস্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। রেলে স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজকে নথিবদ্ধ না-করা থেকে ইন্দোরের দর্জিকে দিয়ে অভিযুক্তদের আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড না-করানোর ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে আদালত। ইন্দোরের ওই দর্জি যে সুটকেসগুলিতে বোমা রাখা হয়েছিল, সেগুলির ঢাকা সেলাই করেছিলেন বলে অভিযোগ।
Read the Story in English