২৩ জুন ব্রিটেনের এক আদালত হিন্দুজা গ্রুপের চেয়ারম্যান শ্রীচাঁদ হিন্দুজা ও তাঁর মেয়ে ভিনুর পক্ষে রায় দিয়েছে। রায় গিয়েছে পক্ষেও। সুইজারল্যান্ড থেকে পরিচালিত হিন্দুজা ব্যাঙ্কে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিনুর পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত। এতে মোটেই খুশি নন শ্রীচাঁদের তিন ছেট ভাই। একসময়ে হিন্দুজাকে হাতে হাত ধরে চলা ব্যবসায়ী পরিবার বলে মনে করা হত। সে পরিবার এখন সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে। তিন হিন্দুজা ভাই গোপিচাঁদ, প্রকাশ ও অশোক, বড়ভাই শ্রীচাঁদের দাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বলেছেন সবই সকলের, কোনও কিছুই একজনের নয়।
ঝামেলা কী নিয়ে?
২০১৪ সালের ২ জুলাই চার ভাই একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যাতে বলা হয় কোনও এক ভাইয়ের কাছে যে সম্পত্তি রয়েছে তা সকলের এবং প্রত্যেক ভাই অন্য ভাইকে একজিকিউটর নিয়োগ করবেন। শ্রীচাঁদ ও তাঁর মেয়ে ভিনু আদালতে বলেন এই চিঠির কোনও আইনি ভিত্তি নেই এবং একে উইল বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বলে মান্য করা চলে না।
শ্রীচাঁদ ওই চিঠিকে মূল্যহীন বলে ঘোষণা করতে চান। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আদালতের বিচারপতি ফক বলেছেন অন্য তিন ভাই এই চিঠি কাজে লাগিয়ে শ্রীচাঁদের একার নামে থাকা হিন্দুজা ব্যাঙ্কের দখল নিতে চান। আদালত বলেছে ২০১৫ সালে শ্রীচাঁদ বলেছিলে এই চিঠিতে তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন নেই এবং পরিবারের সম্পত্তি ভাগাভাগি হওয়া উচিত। শ্রীচাঁদের তিন ছোটভাই বলেছিলেন তিনি স্মৃতিভ্রংশের শিকার এবং বেশ কয়েকবছর ধরে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে।
ব্রিটেনের আদালতের সিদ্ধান্ত কী?
বিচারপতি জানিয়েছেন ভিনুকে শ্রীচাঁদের মোকদ্দমা বন্ধু হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে কোনও একজন সুরক্ষিত পক্ষের যদি মোকদ্দমা বান্ধব থাকে তাহলে তার পূর্ববর্তী পর্যায়ে নেওয়া কোনও পদক্ষেপ আদালত না বললে কার্যকর নয়। তিন ছোট ভাই ২০১৪ সালের চিঠি ব্যবহার করে হিন্দুজা ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছিলেন। তা এখন আর সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে তিন হিন্দুজা ভাইয়ের কী বক্তব্য?
তাঁদের দাবি এ মামলার ফলে তাঁদের বিশ্বজোড়া ব্যবসায়ে কোনও প্রভাব পড়বে না। আদালতের রায় থেকে বোঝা যাচ্চে এসপি হিন্দুজার স্বাস্থ্য গত কয়েক বছর ধরে খারাপ যাচ্ছে, এবং তিনি যে অসুখে ভুগছেন তা একধরনের স্মৃতিভ্রংশ।
তাঁরা বলছেন এটা অতি দুর্ভাগ্যজনক যে পরিবারের মূল্যবোধ ও নীতি, বিশেষ করে সবই সকলের কোনও কিছুই একজনের নয় নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে এই মামলা হয়েছেয
এক বিবৃতিতে তাঁরা যা বলেছেন, তাতে ইঙ্গিত মিলেছে ভবিষ্যতেও এ আইনি যুদ্ধ চলবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন পরবর্তী প্রজন্ম যেহেতু ব্যবসায়ে ঢুকে পড়েছেন, নিকট ভবিষ্যতে সম্পত্তি ভাগাভাগি হওয়া অসম্ভব নয়।
শ্রীচাঁদের সম্পত্তি কি তাঁর মেয়ে পাবেন?
তিন ভাইয়ের বক্তব্য যদি শ্রীচাঁদের দাবি সফল হয় তাহলে তাঁর সব সম্পত্তি ভিনু ও তাঁর নিকট পরিবারের কাছে যাবে শ্রীচাঁদের মৃত্যুর পর, যার মধ্যে হিন্দুজা ব্যাঙ্কের পুরো শেয়ারও রয়েছে।
হিন্দুজা সাম্রাজ্যের সম্পত্তির পরিমাণ কত?
ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্সের হিসেবে পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ ১১.২ বিলিয়ন। হিন্দুজা গোষ্ঠী ব্রিটেন থেকে পরিচালিত হয়। ব্যাঙ্কিং ও ফিনান্স, পরিবহণ, অটোমোবাইল, এনার্জির মত পুরনো আর্থিক ক্ষেত্র এবং প্রযুক্তি, সংবাদমাধ্যম ও অপ্রচলিত শক্তির মত নতুন আর্থিক ক্ষেত্রে এই গোষ্ঠী সক্রিয়। এই আন্তর্জাতিক সংস্তার মোট ৩৮টি দেশে কাজ রয়েছে যেখানে ১৫০০০০-এর বেশি মানুষ কাজ করেন।
অশোক লেল্যান্ড ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক পরিবহণ নির্মাতা। গোপীচাঁদের ছেলে ধীরাজ অশোক লেল্যান্ডের বোর্ডে রয়েছেন। ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক হিন্দুজা পরিচালিত। এই গোষ্ঠীর গালফ অয়েল বিক্রি হয় ১০০ দেশে।
চার ভাইয়ের বাবা পিডি হিন্দুজা ১৯১৪ সালে ভারত ও পারস্যের মধ্যে বাণিজ্য যোগাযোগ স্থাপন করেন। তাঁর দুটি মানবকল্যাণ মূলক কাজ হ মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতাল ও হিন্দুজা ফাউন্ডেশন।
চার ভাই
শ্রীচাঁদ হিন্দুজা, ৮৪, হিন্দুজা পরিবারের প্রান ও হিন্দুজা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। ১৯৫২ সালে পড়াশোনা শেষ করে তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দেন।
গোপীচাঁদ হিন্দুজা গোষ্ঠীর কো চেয়ারম্যান। ভারত-মধ্য এশিয়ার একটি ট্রেডিং গোষ্ঠী থেকে মাল্টি বিলয়ন ডলার গোষ্ঠী তৈরিতে তাঁরই অবদান রয়েছে।
প্রকাশ হিন্দুজা ইউরোপে হিন্দুজা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। ২০০৮ সাল থেকে তিনি মোনাকোয় বাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে তিনি পরিবারের ব্যবসায়ে যোগ দেন ইরানের তেহরানে। পরে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় যান এবং ইউরোপের ব্যবসার দায়িত্ব নিজের হাতে নেন। ২০০৮ সালে তিনি মোনাকোয় চলে যান।
অশোক হিন্দুজা মুম্বইতে থাকেন, ভারতের ব্যবসার দেখাশোনা করেন। ৮-এর দশকের মাঝে ভারতে ফের আসার পর তিনি ভারতের ব্যবসা বৃদ্ধি ও আরও নানাবিধ ব্যবসার দিকে মনোযোগ দেন।