Advertisment

Explained: কেন্দ্রের বিরাট সাফল্য! বৃহত্তম মেইতেই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি, শান্তি ফিরবে মণিপুরে?

বিরাট সাফল্য আশা করছেন অমিত শাহ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
History of UNLF, Meitei insurgent group that signed peace deal with Centre

ইউএনএলএফ হল মণিপুরের সবচেয়ে পুরোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী। (ছবির উৎস: X/@AmitShah)

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার মণিপুরে মেইতেই জঙ্গিগোষ্ঠী, ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (ইউএনএলএফ)-এর সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কথা জানিয়েছেন। যাকে, 'ঐতিহাসিক মাইলফলক' বলে আখ্যা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই শান্তিচুক্তি উপত্যকার অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে (ভিবিআইজি) শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে উৎসাহিত করবে।

Advertisment

ইউএনএলএফ কী?

ইউএনএলএফ, ১৯৬৪ সালের ২৪ নভেম্বর তৈরি হয়েছিল। এটি মণিপুর উপত্যকার প্রাচীনতম বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পার্বত্য রাজ্যের নাগা-অধ্যুষিত এবং কুকি-জোমি অধ্যুষিত পাহাড়ে সক্রিয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির থেকে এই পার্বত্য জঙ্গিগোষ্ঠী আলাদা। দলটির সাধারণ সম্পাদক আরেম্বাম সমরেন্দ্র সিং-এর নেতৃত্বে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি নিয়ে গঠিত হয়েছিল ইউএনএলএফ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই শীর্ষ নেতা- খালালুং কামি এবং থাংখোপাও সিংসিট- একজন নাগা ও অন্যজন কুকি।

ইউএনএলএফের দুটি উপদল

ইউএনএলএফ সবচেয়ে বড় নাগা বিদ্রোহী গোষ্ঠী এনএসসিএন (আইএম) থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এর সশস্ত্র শাখা মণিপুর পিপলস আর্মি ১৯৯০ সালে গঠিত হয়েছিল। তার কয়েক বছর ধরে, এই সংগঠন ভারতীয় রক্ষীদের নিশানা করে একাধিক হামলা চালিয়েছে। বর্তমানে ইউএনএলএফের দুটি উপদল আছে। দুই উপদলের যৌথভাবে ক্যাডারের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০০। এমনটাই বলছে সরকারি নথি। গোটা মণিপুর উপত্যকা, কুকি-জোমি পার্বত্য জেলাগুলোর কিছু গ্রামে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্ত। এই জঙ্গিগোষ্ঠী, বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে নিষিদ্ধ।

নতুন সদস্য নিয়োগ

মায়ানমারের সাগাইং অঞ্চল, চিন এবং মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের শিবির এবং প্রশিক্ষণ ঘাঁটি থেকে এই জঙ্গিগোষ্ঠী পৃষ্ঠপোষকতা পায়। কিন্তু, বর্তমানে তারা বিভিন্ন জাতিগত বিরোধিতা এবং মায়ানমারের সরকারের বিরোধিতা করায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, ভারতেও নিরাপত্তা বাহিনী প্রচণ্ড সক্রিয় হয়ে ওঠায় ইউএনএলএফের জমি খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, মণিপুরের সাম্প্রতিক জাতিগত সংঘাতে এই জঙ্গিগোষ্ঠী অন্যান্য গোষ্ঠীর সহায়তায় পার্বত্য রাজ্যে জমি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ইউএনএলএফের দুটি উপদল গত মাসে প্রায় ৫০০ নতুন সদস্য নিয়োগ করেছে। তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে বলেই সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

শান্তি চুক্তির সাফল্য কোথায়?

এই শান্তি চুক্তির সাফল্য হল, মণিপুরের জঙ্গিরা এর আগে কখনও কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করেনি। কোনও শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়নি। লেখক এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজের প্রাক্তন ফেলো মালেম নিংথৌজা অবশ্য জানিয়েছেন, মণিপুরে মেইতেইদের মধ্যে প্রথম শান্তিচুক্তি করল ইউএনএলএফ জঙ্গিগোষ্ঠী, এই কথা এতটা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। অতীতে ইউপিপিকে, কেসিপি এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট গ্রুপের মত কিছু জঙ্গিগোষ্ঠীকে মণিপুরে হয় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অথবা তাদের ক্ষমতাহীন করে দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই সব জঙ্গিগোষ্ঠীর শক্তি ছিল অত্যন্ত নগণ্য।

কোন শর্তে শান্তিচুক্তি?

কোন শর্তে এই শান্তিচুক্তি হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইউএনএলএফ একটি বড় জঙ্গিগোষ্ঠী। এর একটা দর্শনগত প্রভাব আছে। সম্প্রতি মণিপুরে তাদের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে হাজারেরও বেশি সদস্য অংশ নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ইউএনএলএফের গণসংগঠনও আছে। এমনটাই জানিয়েছেন মালেম নিংথৌজা। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইউএনএলএফের বিভাজন ঘটে। সেই সময় এন ওকেন এই জঙ্গিগোষ্ঠী থেকে আলাদা হয়ে যায়। ওকেন গড়ে তোলে, কাংলেই ইয়াওল কান্না লুপ (কেওয়াইকেএল)। যা আরেকটি নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী।

জঙ্গিগোষ্ঠীর উপদল

২০০০ সালে সমরেন্দ্রকে হত্যার পর, ইউএনএলএফের নেতৃত্ব গ্রহণ করে আরকে মেঘেন। তাকে ২০১০ সালে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ইউএনএলএফে আরেকটি বিভাজন ঘটে। পামবেই বাকি কেন্দ্রীয় কমিটির থেকে আলাদা হয়ে যায়। সেই হিসেবে ইউএনএলএফের এখন দুটি উপদল আছে। একটি পামবেইয়ের সভাপতিত্বে রয়েছে। অন্যটি এনসি কয়রেংয়ের নেতৃত্বাধীন। পামবেই আলোচনা চায়। তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরুর প্রক্রিয়াটি ২০২০ থেকে চলছে।

আরও পড়ুন- ‘বায়োপিক’-এর বাইরে! ফিল্ড মার্শাল স্যাম বাহাদুরের যেসব কাহিনি সচরাচর থাকে অধরাই

অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন

সেই হিসেবে ইউএনএলএফ এইসব জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো। পরবর্তী বছরগুলোতে আরও কয়েকটি মেইতেই বিদ্রোহী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। তবে, ইউএনএলএফ হল, কেন্দ্রীয় সরকারের নিষিদ্ধ করা সাতটি, 'মেইতেই জঙ্গি সংগঠন'-এর একটি। তার মধ্যে কৈরেং-এর অধীনে ইউএনএলএফ উপদল আলোচনার বিরোধিতা করে চলেছে। এর পাশাপাশি, ২০০৮ সালে কেন্দ্র, মণিপুর রাজ্য এবং কুকি-জোমি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সাসপেনশন অফ অপারেশনস (এসওও) চুক্তি হয়েছে। এই বছরের মার্চে, মণিপুর সরকার জোমি রেভল্যুশনারি আর্মি এবং কুকি ন্যাশনাল আর্মির সঙ্গে চুক্তি প্রত্যাহার করে বলেছিল যে তারা, 'বন দখলকারীদের মধ্যে আন্দোলনকে প্রভাবিত করছে'।

Modi Government army Terrorist amit shah Manipur
Advertisment