Advertisment

Explained: কিডনি লেনদেনের বিরাট চক্রের পরদা ফাঁস! কাঠগড়ায় দেশের সবচেয়ে নামজাদা হাসপাতাল

চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে নাম জড়াল পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত চিকিৎসকের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Apollo hospitals, kidney

নয়াদিল্লিতে দেশের এক নামজাদা হাসপাতালে রোগী এবং তাদের আত্মীয়দের দেখা যাচ্ছে। (রয়টার্স/আদনান আবিদি/ফাইল ছবি)

বিরাট অভিযোগ উঠল অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, অ্যাপোলো হাসপাতাল কিডনি বিক্রির চক্রের সঙ্গে জড়িত। ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকা তাদের তদন্তমূলক রিপোর্টে এই অভিযোগ তুলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, মায়ানমারের দরিদ্র লোকদের অ্যাপোলো হাসপাতাল কিডনি বিক্রির প্রস্তাব দেয়। বদলে, মোটা টাকা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে থাকে। এটা অ্যাপোলো হাসপাতালের সব শাখাই করে বলেই অভিযোগ করেছে ব্রিটেনের পত্রিকাটি। অভিযোগ যথারীতি অস্বীকার করেছে অ্যাপোলো হাসপাতাল। মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, এই অভিযোগ- 'সম্পূর্ণ মিথ্যা, না-জেনে লেখা আর বিভ্রান্তিকর'।

Advertisment

কী অভিযোগ?
ব্রিটেনের পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মায়ানমারের দরিদ্র, তরুণ গ্রামবাসীদের দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাঁদের বিশ্বজুড়ে ধনী রোগীদের কিডনি দান করার জন্য অর্থ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, ভারতীয় এবং বার্মিজ আইন অনুযায়ী, একজন রোগী জীবিত অবস্থায় অপরিচিত ব্যক্তিকে অঙ্গদান করতে পারেন না। তাই নথি জাল করা হচ্ছে। কিডনি দাতাদের রোগীর আত্মীয় বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। নথি জাল করতে, কিডনি গ্রহীতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিডনিদাতার ছবি তোলানো হচ্ছে।

কীভাবে কিডনি দাতাদের বাছা হয়?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্ত করতে সাংবাদিক এক ব্যক্তিকে তাঁর অসুস্থ আত্মীয় সাজিয়ে হাজির হয়েছিলেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। তাঁর আত্মীয়র কিডনির দরকার ছিল, এমনটাই জানিয়েছিল হাসপাতালও। কিন্তু, পরিবারের কেউ কিডনি দান করতে পারেননি। এরপর ওই সাংবাদিক কথামতো অ্যাপোলোর মায়ানমার অফিসে যোগাযোগ করেন। তাঁকে জানানো হয়, একজন অপরিচিত ব্যক্তি সাংবাদিকের অসুস্থ আত্মীয়কে কিডনি দান করবেন। অ্যাপোলোর এজেন্ট সেই সময় এক ২৭ বছর বয়সি বার্মিজ যুবককে নিয়ে আসেন। যিনি অর্থের বিনিময়ে কিডনি বিক্রি করতে রাজি হন। কারণ, কিডনিদাতার মা-বাবা বৃদ্ধ। আর, তাঁদের আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়।

কিডনি কিনতে কত টাকা লাগে?
অ্যাপোলোর মায়ানমার শাখার প্রধান, পরিচয় গোপন রাখা সাংবাদিককে, অ্যাপোলোতে কিডনি বদলাতে ঠিক কত টাকা খরচ পড়ে, তার একটা নথি দিয়েছেন। সেই নথি অনুযায়ী, বিমানের প্রতিটি টিকিটের জন্য লাগে ২১,০০০ টাকা। মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে কিডনি বদলের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে লাগে ১৬,৭০০ টাকা। যে ব্যক্তি কিডনি দেবেন, তাঁকে কিডনি গ্রহীতার পরিবারের সদস্য বানাতে খরচ হয় ৩৩,০০০ টাকা। মোটামুটি ১,৭৯,৫০০ টাকা সাধারণ খরচ পড়ে। এছাড়া কিডনি কেনার জন্য কিডনিদাতাকে দিতে হয় ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা।

কীভাবে ব্যাপারটাকে সাজানো হয়?
রোগীর আত্মীয় আগাম টাকা দিলে কিডনিদাতাকে ভারতে পাঠানো হয়। ওই কিডনিদাতা রোগীর সঙ্গে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট অনুমোদন কমিটির সামনে হাজির হন। এই কমিটিই জমা দেওয়া নথি পর্যালোচনা করে রোগীর সঙ্গে কিডনিদাতার সম্পর্কের ওপর সিলমোহর দেয়। কমিটিতে থাকেন একজন কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক, একজন রাজ্য সরকারি আধিকারিক, দু'জন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার, হাসপাতালের দু'জন চিকিৎসক। যাঁরা বেতন বা ভাতার ওপর নির্ভর না-করলেও ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করেন।

এজেন্ট আগে থেকেই শিখিয়ে দেয়
অ্যাপোলের এজেন্ট আগে থেকেই শিখিয়ে দেন যে, ওই কমিটি আসলে মুখোশ। কমিটিতে অ্যাপোলো হাসপাতালের বেশ কয়েকজন আধিকারিকও আছেন। তাঁরা শুধু রোগী এবং দাতার মধ্যে সম্পর্ক যাচাই করার নামে ইন্টারভিউ চলাকালীন বেশ কিছুক্ষণ অবান্তর প্রশ্ন করে যান। এজেন্টরা আগে থেকেই বাসস্থানের নথি, বিয়ের শংসাপত্র, ছবি-সহ অন্যান্য নথি জাল করে রোগী ও কিডনিদাতার মধ্যে সম্পর্ক আছে, সেগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করে দেন। সেসবই ইন্টারভিউ বোর্ডে রোগীর আত্মীয় এবং কিডনিদাতাকে পেশ করতে হয়।

আরও পড়ুন- বাবরি ধ্বংসের ৩১ বছর: যোগী জমানায় অযোধ্যাকে চেনাই দায়, কতটা বদলেছে রামরাজ্য?

চক্রের সঙ্গে কোনও ডাক্তারও কি জড়িত?
সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে চক্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে ডা. সন্দীপ গুলেরিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ব্রিটেন থেকে ডাক্তারি পাস করেছেন। পদ্মশ্রী প্রাপ্ত চিকিৎসক। রোগী এবং এজেন্টরা সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন যে গুলেরিয়াই সেই সার্জন, যিনি ওটিতে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেছেন। ওই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডেকান হেরাল্ড পত্রিকার ২০১৬ সালের রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ডা. গুলেরিয়া 'অ্যাপোলোর দিল্লি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। তাঁকে একটি আলাদা কিডনি কেলেঙ্কারির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে।' অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে কিডনি পাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ নতুন না। এর আগে ২০১৬ সালে, দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ হাসপাতালে অ্যাপোলোর দুই উঁচুতলার কর্মীকে কিডনিপাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দালাল এবং দাতাদের একটি দলের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সেই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

treatment Kidney Transplant Hospitalisation
Advertisment