ইজরায়েলি হামলায় ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর, আহত এক প্যালেস্তিনীয় বালিকা, গাজা শহরের আল শিফা হাসপাতালে অপেক্ষা করছে। (REUTERS/Doaa Rouka)
পরিস্থিতি এখন যেমন, শিফা হাসপাতালের বক্তব্য তখন বন্দুক থেকে গুলি ছুটছে। কামান গজরাচ্ছে। তার মধ্যেই ফোন ধরেছিলেন গাজার সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মারওয়ান আবু সাদা। প্রথমেই বললেন, 'শুনুন', এখন শিফা হাসপাতালের চারপাশে লড়াই চলছে। ইজরায়েলি সৈন্য এবং হামাস জঙ্গিরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। ইজরায়েল সেনার গোলা হাসপাতালে এসে পড়ছে। ওয়ার্ডগুলো পর্যন্ত বিধ্বস্ত। তারমধ্যেই ডাক্তাররা রোগীদের সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। কোথাও সাহায্যের দরকার হলে দৌড়ে যাচ্ছেন।' ডা. আবু সাদা শিফাকে যুদ্ধে আহত কয়েক হাজার গাজাবাসী, চিকিৎসা কর্মী এবং হাসপাতালে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের মৃত্যুফাঁদ বলে বর্ণনা করেছেন।
Advertisment
ইজরায়েল এবং হামাসের দাবি ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য সরাসরি হাসপাতালে হামলা চালানো বা শিফা অবরুদ্ধ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধে উত্তর গাজা বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ইজরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজা শহরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ইজরায়েল অভিযোগ করেছে, হামাস জঙ্গিরা হাসপাতালগুলোকে যোদ্ধাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু, এই দাবির কোনও প্রমাণ ইজরায়েল দিতে পারেনি। প্যালেস্তিনীয়রা পালটা অভিযোগ করেছে, ইজরায়েল আসলে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি করছে। সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শনিবার শিফার চারপাশে চলা যুদ্ধ একটি আশঙ্কা তৈরি করেছে। এই আশঙ্কা হল, গাজায় চিকিৎসা সুবিধাও যখন তখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিশেষ সুরক্ষা হারাতে পারে।
বাস্তুচ্যুত প্যালেস্তিনীয়রা গাজা সিটিতে আল শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। হামাস এবং ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর, আল শিফা হাসপাতাল থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে। (REUTERS/Doaa Rouka/File Photo)
ইজরায়েল কী বলছে? ইজরায়েলের দাবি, হামাস জঙ্গিরা হাসপাতাল, স্কুল এবং মসজিদের মত বিভিন্ন সংবেদনশীল স্থানকে অস্ত্রভাণ্ডার বানিয়েছে। রক্তপাত ঘটানোই হামাসের এজেন্ডা। ইজরায়েলের আরও অভিযোগ, প্যালেস্তাইনের আসল লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক মনোযোগ এবং সহানুভূতি অর্জন করা। ইজরায়েল শিফা হাসপাতালকে বিচ্ছিন্ন করেছে। ইজরায়েলের দাবি, জঙ্গি সংগঠন হামাস, শিফা হাসপাতাল কমপ্লেক্সের নীচে তাদের জঙ্গিবাহিনীর সদর দফতর বানিয়েছে। ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী শিফার একটি সচিত্র মানচিত্রও প্রকাশ করেছে। সেখানে জঙ্গিদের ভূগর্ভস্থ পরিকাঠামো চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, ওই পর্যন্তই। এর বেশি কোনও প্রমাণ ইজরায়েল দিতে পারেনি। তবে, ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট বলেছেন, 'যদি আমরা দেখি যে হামাস জঙ্গিরা হাসপাতাল থেকে গুলি চালাচ্ছে, তাহলে আমাদের যা করা দরকার, আমরা তাই করব।' শিফাতে শনিবারের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'বাহিনী শিফা হাসপাতাল অবরোধ করছে না। বরং, হাসপাতালের পূর্ব দিক দিয়ে নিরাপদে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে।'
হামাস কী বলছে? হামাস এবং শিফা হাসপাতালের পরিচালক মহম্মদ আবু সেলমিয়া ইজরায়েলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আবু সেলমিয়া জানিয়েছেন, ইজরায়েলের হামলায় বহু সাধারণ নাগরিক আহত ও নিহত হচ্ছেন। ওই হামলায় অন্তত ১২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন।ইজরায়েলি বাহিনী গাজার রান্টিসি হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপ ভরা রাস্তায় হামাস জঙ্গিদের সঙ্গেও লড়াই করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার পর শুক্রবার রান্টিসি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কতজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ইজরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন প্রধান আমোস ইয়াডলিনও চ্যানেল ১২-কে বলেছেন যে শিফা এবং অন্যান্য হাসপাতালে তীব্র লড়াই নিয়ে ইজরায়েলের কমান্ডারদের জন্য মধ্যে নৈতিক এবং সামরিক দ্বিধা রয়েছে।