ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) জানিয়েছে যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপ তৈরি করেছে। আর, এই অঞ্চলে আগামী কয়েকদিন (৮ থেকে ১২ মে) পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। আইএমডি আরও জানিয়েছে যে ৯ মে নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। যা চেহারা নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ের। এই আবহাওয়া পরিস্থিতি বা ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে মোকা (উচ্চারণ 'মোখা')।
এর জেরে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও, সব জায়গায় তেমন প্রবল হবে না। বেশিরভাগ জায়গাতেই হবে মাঝারি বৃষ্টিপাত। তবে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বিক্ষিপ্ত ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এখন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়-
ঘূর্ণিঝড় মোচা সম্পর্কে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর কী বলছে?
আবহাওয়া দফতর রবিবার থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যাওয়া ও সঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এই ব্যাপারে মৎস্যজীবীদেরও সতর্ক করেছে। মৎস্যজীবীরা দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছেন, তাঁদের ৭ মে-এর আগে নিরাপদ স্থানে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানকারীদের আবার ৯ মে-এর আগে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ৮ থেকে ১২ মে-এর মধ্যে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে পর্যটন, মাছধরা এবং সমুদ্রে স্নান থেকে বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ৭ মে থেকে ৯ মে-এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি দেশের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এই অঞ্চলে ৮ মে একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নিম্নচাপ মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৯ মে আশেপাশে এটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কি এবং কিভাবে তারা গঠিত হয়?
ঘূর্ণিঝড় হল একটি নিম্নচাপ, যা উষ্ণ জলের ওপর তৈরি হয়। সাধারণত, যে কোনও জায়গায় উচ্চ তাপমাত্রা মানে নিম্ন-চাপের বায়ুর অস্তিত্ব। আর, নিম্ন তাপমাত্রা মানে উচ্চ-চাপযুক্ত বায়ু। কিন্তু এটার মানে কী? ব্রিটেনের আবহাওয়া দফতরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিষয়টি আরোহী এবং অবরোহী বায়ু কীভাবে আচরণ করে, তার সঙ্গে সম্পর্কিত। উষ্ণ অঞ্চলে বায়ু উষ্ণ হওয়ার সঙ্গেই ওপরে উঠে যায়। যার ফলে এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ নিম্নচাপ সৃষ্টি করে ঢেকে রাখে। ঠান্ডা অঞ্চলে বাতাস ঠান্ডা হলে তা নীচে নেমে যায়। যার ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়। একটি নিম্নচাপের পরিস্থিতিতে, বায়ু উত্তর গোলার্ধে নিম্নের চারপাশে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে বাড়তে থাকে এবং প্রবাহিত হয়। এটি অক্ষের ওপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে কোরিওলিস প্রভাবের কারণে হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি, উষ্ণ বায়ু বৃদ্ধি এবং শীতল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে এবং এর ফলে বৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুন- প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে শুধুই নারী, এবছর কেমন ছিল নারীশক্তির অংশগ্রহণ?
ইতিমধ্যে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের পরোক্ষ প্রভাবে বাংলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই হিসেবে আগামী তিন দিন দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বুধবার কলকাতাতেও তাপপ্রবাহ চলবে। শুধু তাই নয়, উত্তর-পশ্চিমের গরম হাওয়া বা লু-এর দাপটও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাকবে। আর, রাজ্যের পশ্চিমের জেলা বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ১০মে নিম্নচাপ পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড় মোকায়। এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন মায়ানমার উপকূলে।