Advertisment

Explained: কীভাবে শব্দ তৈরি হয় এবং কীভাবে শব্দদূষণ আপনার ক্ষতি করতে পারে

লাউডস্পিকার ব্যবহারের নিয়ম লঙ্ঘন করলে সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত হয়ে যেতে পারে। সঙ্গে, ১০,০০০ টাকা জরিমানাও হতে পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
raj

শব্দ এবং শব্দদূষণ নিয়ে ছোট থেকেই রাস্তাঘাটে পুলিশের নানা নির্দেশ দেখে অভ্যস্ত আমজনতা। সেই শব্দ এবং শব্দদূষণ ফের অতিপ্রাসঙ্গিক হয়ে হয়েছে। কারণ, একটা চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, কাকা বালাসাহেব বেঁচে থাকাকালীন মহারাষ্ট্রজুড়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করাতে রাজের জুড়ি ছিল না। মহারাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদেরই অভিযোগ, যাঁদের নিয়ে বালাসাহেব বেঁচে থাকাকালীন দাদাগিরি করাতেন রাজ, বর্তমানেও সেই সব লোকজনই তাঁর মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনায় আছেন। তাই রাজ ঠাকরের হুমকিকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছে না প্রশাসন।

Advertisment

মসজিদে লাউডস্পিকারের জেরে কোলাহল তৈরি হচ্ছে। তাই রাজ হুমকি দিয়েছেন, ৩ মে-র মধ্যে মসজিদগুলো থেকে লাউডস্পিকার খুলে ফেলতে হবে। না-হলে মহারাষ্ট্রজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হবে। এই অস্থিরতার অর্থ যে দাদাগিরি, তা আর বুঝতে কারও বাকি নেই। রাজ্যের খুড়তুতো ভাই তথা বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে উদ্ধব বর্তমানে শিবসেনার প্রধান আর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলে কী হবে, মাতুশ্রীর ঘনিষ্ঠরা জানেন, রাজকে বিশেষ ঘাঁটান না উদ্ধবও। কারণ, তাঁর বাবা বালাসাহেবের অত্যন্ত প্রিয় এবং কাজের মানুষ ছিলেন রাজ ঠাকরে।

সেই সূত্রে রাজের হুমকি নিয়ে বিশেষ চিন্তায় মহারাষ্ট্রবাসী। তার ওপর, মসজিদের ব্যাপার হওয়ায় এতে হিন্দুত্ববাদীদের একাংশের সমর্থনও রয়েছে রাজের প্রতি। সে তো না-হয় গেল রাজের দাদাগিরির কথা। আইনগত ভাবে বিষয়টিকে দেখলে বলতে হয়, মহারাষ্ট্রের মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের সমাধানসূত্র মিলতে পারে ২,০০০ সালে তৈরি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনেই।

আইনি মতে, কীভাবে কোলাহল তৈরি হয়?
শব্দদূষণ রুখতে তৈরি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ অনুসারে, ' কোলাহল'কে অবাঞ্ছিত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যা শ্রোতাকে খুশি করে, তা হল সংগীত। আর যা ব্যথা এবং বিরক্তি তৈরি করে, তা হল কোলাহল। অনেক সময়, কারও জন্য যা সংগীত, তা অন্যের সমস্যার কারণ হতে পারে। যে কোনও অবাঞ্ছিত শব্দ যা মানুষের কানে বিরক্তি, জ্বালা ও ব্যথার কারণ হয়, তাকেই ‘কোলাহল’ বলে।

এই ব্যাপারে আইন কী বলে?
বায়ু (দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮১-র ২ (ক) ধারায় 'বায়ু দূষণকারী'র সংজ্ঞায় শব্দ প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। শব্দদূষণ এবং এর উৎস সম্পর্কে পরিবেশ (সুরক্ষা) আইন এবং ১৯৮৬-র অধীনে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধি ও এই সংক্রান্ত ২,০০০ সালের বিধিতে বিস্তারিত উল্লিখিত আছে। এই আইনে শব্দের মাত্রা, নীরবতা, লাউডস্পিকার, হর্ন ব্যবহারে বিধিনিষেধ সম্পর্কে বলা আছে। শব্দ তৈরি, শব্দ তৈরির সরঞ্জাম নির্মাণ, পটকা বিস্ফোরণ এবং এই সব প্রয়োগের সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা আছে এই আইনে।

শব্দের গ্রহণযোগ্য স্তর কোনটা?
শব্দদূষণ বিধি, দিন এবং রাত উভয়সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে। শিল্পাঞ্চলে, দিনের বেলায় এর সর্বোচ্চ সীমা ৭৫ ডেসিবেল (শব্দের একক)। রাতের বেলা ৭০ ডেসিবেল। এরমধ্যে দিনের সময়কে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং রাত বলতে রাত ১০টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়কে ধরা হয়েছে। বাণিজ্যিক এলাকায়, দিনের বেলায় ৬৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৫৫ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল। নীরবতা রাখার জন্য বলা হয়েছে, এমন অঞ্চল অর্থাৎ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আদালতের আশেপাশে দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল মাত্রা রাখতে বলা হয়েছে।

লাউডস্পিকার ব্যবহারের নিয়ম কী?
জনবহুল অঞ্চলে যেখানে লাউডস্পিকার ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ ৭৫ ডেসিবেলের বেশি হবে না। নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। রাজ্য সরকার একবছরে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের জন্য কোনও ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক উৎসব -অনুষ্ঠানে লাউডস্পিকার ব্যবহারে ছাড় দিতে পারে। ২০২০ সালের ১২ জুন, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি)-এর কাছে দায়ের করা একটি রিপোর্টে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) শব্দ দূষণের নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার কথা বলেছে। সেই মতো লাউডস্পিকার ব্যবহারের নিয়ম লঙ্ঘন করলে সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত হয়ে যেতে পারে। সঙ্গে, ১০,০০০ টাকা জরিমানাও হতে পারে।

মহারাষ্ট্রে শব্দের মাত্রা কেমন থাকে?
মহারাষ্ট্র রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বা পিসিবি-র ২০২০ সালের 'নয়েজ মনিটরিং রিপোর্ট' বলছে যে অনেক জায়গায় শব্দের মাত্রা শিল্প, বাণিজ্যিক, আবাসিক বা নীরবতা জোনের জন্য নির্ধারিত মাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। গাড়ির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এই দূষণের একটি প্রধান কারণ। ট্রাফিক সিগনালে জ্যামে পড়লেই মানুষ হর্ন দেন। পথে উচ্চস্বরে বক্স বাজিয়ে গান শোনেন। যা জোরে শব্দ তৈরি করে। ২০২৭ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে দিল্লি এবং মুম্বই শব্দদূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ শহরগুলোর তালিকায় রয়েছে। মুম্বইয়ে মোট ১৫টি জায়গায় পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। তারমধ্যে ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে দিনের বেলায় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল সান্তাক্রুজ বিমানবন্দরে ৭৬.৮ ডেসিবেল, গোরেগাঁও পূর্বে ৭৭.৯ ডেসিবেল। রাতের বেলায়, ২১ ফেব্রুয়ারি অ্যান্টপ হিলে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৬৫ ডেসিবেল।

কীভাবে শব্দদূষণ স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে?
শব্দদূষণ যদিও বায়ু এবং জলদূষণের মতো ততটা গুরুত্ব পায় না কিন্তু, এটিও মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতে, প্রায় ১০০ কোটিরও বেশি বালক-কিশোর-যুবক মাত্রাতিরিক্ত শব্দ ব্যবহারের জেরে শ্রবণশক্তি হ্রাসের সমস্যায় ভুগছে। হু বলছে, রাতে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের জেরে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তার ফলে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি তৈরি হয় সাময়িক বধিরতা, মাথাব্যথা। সঙ্গে রক্তচাপও বাড়ে। সারারাত জেগে থাকায়, ক্লান্তির জেরে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায়, হ্রাস পায় কর্মক্ষমতা।

Read story in English

What constitutes ‘noise’ can noise pollution harm
Advertisment