করোনাভাইরাস মহামারীর আবহে ভেন্টিলেটর ছাড়াও অন্য যে যন্ত্রটির অভাব দেখা দিয়েছে, তা হলো ডায়ালিসিস মেশিন। একাধিক গবেষণার রিপোর্ট বলছে, Covid-19 রোগীদের এক বড় অংশের কিডনি হয় বিকল হয়ে যাচ্ছে, নাহয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
Advertisment
গত কয়েক সপ্তাহে এমন একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পৃথিবীর বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ওয়ার্ডগুলিতে ভেন্টিলেটর এবং পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (personal protective equipment বা PPE)-এর ঘাটতি ছাড়াও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে ডায়ালিসিস মেশিনের মতো অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির ঘাটতি নিয়েও।
এই ভাইরাস কি কিডনির ক্ষতি করে?
'সায়েন্স' পত্রিকা বলছে, Covid-19 এর গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে কিডনির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সুতরাং মৃত্যুরও। তবে এই ভাইরাস সরাসরি কিডনিকে আক্রমণ করে, নাকি মাল্টি-অর্গান ফেলিওরের ফলেই বিকল হয়ে যায় কিডনি, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিডনিতে Angiotensin-converting enzyme 2 বা ACE2 রিসেপ্টর প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত থাকার ফলে সরাসরি কিডনির ওপর ভাইরাসের হামলার তত্ত্ব একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
Advertisment
ACE2 এমন একটি উৎসেচক বা 'এনজাইম', যা কিডনির উপরিভাগে পাওয়া যায়। কিছু প্রজাতির করোনাভাইরাসের আমাদের কোষে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে এই 'এনজাইম' প্রবেশদ্বারের কাজ করতে পারে।
চিনে করোনাভাইরাসের ভরকেন্দ্র উহান শহরে ৮৫ জন চিকিৎসাধীন রোগীর একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, এঁদের মধ্যে ২৭ শতাংশের কিছু বেশি রোগীর কিডনি বিকল হয়ে যায়। 'আমেরিকান জার্নাল অফ কিডনি ডিজিজেস' (AJKD) শীর্ষক পত্রিকা জানাচ্ছে, উহান থেকে পাওয়া প্রাথমিক রিপোর্টগুলিতে মনে হয়েছিল যে Covid-19 আক্রান্তদের দেহে 'অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি' (AKI)-র সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম (৩ থেকে ৯ শতাংশ), তবে পরবর্তী বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে AKI-এর হার ১৫ শতাংশ পর্যন্তও পৌঁছতে পারে। পাশাপাশি ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে AKI-এর উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
তবে 'নেচার' পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্তদের দেহে AKI অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় বিদ্যমান। চিনে ১,০৯৯ জন Covid-19 রোগীর একটি দলকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৯৩.৬ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, ৯১.১ শতাংশের নিউমোনিয়া হয়, ৫.৩ শতাংশকে আইসিইউ-তে রাখতে হয়, ৩.৪ শতাংশের 'অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম' (ARDS) বা তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, এবং মাত্র ০.৫ শতাংশ রোগীর AKI জনিত সমস্যা হয়।
কিডনির কী কী সম্ভাব্য ক্ষতি করতে পারে করোনাভাইরাস
সরলভাবে বলতে গেলে, দুটি সম্ভাব্য উপায়ে কিডনির ক্ষতি করতে পারে SARS-CoV-2 অর্থাৎ নভেল করোনাভাইরাস। এক, শরীরের ইমিউনিটি ব্যবস্থা অকর্মণ্য হয়ে পড়ার ফলে সৃষ্টি হয়ে 'সাইটোকিন স্টর্ম' বা ঝড়ের। অর্থাৎ, অতিরিক্ত উত্তেজিত ইমিউন সিস্টেম শরীরে শ্বেতকণিকার (white blood cells) উৎপাদন অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়, যেগুলি কিনা ক্ষতিগ্রস্ত কলা বা টিস্যু মেরামত না করে উল্টে হামলা চালায় সুস্থ কলার ওপরেও। 'সাইটোকিন স্টর্ম'-এর ফলে আসতে পারে সেপসিস (রক্তে বিষক্রিয়া), মাল্টি-অর্গান ফেলিওর, এবং সম্ভাব্য মৃত্যু। সুতরাং এমন হতেই পারে যে মাল্টি-অর্গান ফেলিওর-এর ফলেই কিডনি অচল হয়ে পড়ল কোনও Covid-19 রোগীর।
দুই, ভাইরাস সরাসরি কিডনিকে আক্রমণ করতে পারে, সম্ভবত কিডনির কোষে ACE2 রিসেপ্টর-এর আধিক্যের ফলে।
কীভাবে মোকাবিলা করা হয় কিডনি ফেলিওরের?
AJKD পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, কিডনি বিকল বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছু করোনা আক্রান্ত রোগীর ডায়ালিসিস-এর প্রয়োজন হতে পারে, সাধারণত সংক্রমণের দ্বিতীয় সপ্তাহে। আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা দেখা দেয় কাছাকাছি ৫ শতাংশের মধ্যে। এই একই ধরন দেখা গিয়েছিল SARS এবং MERS-এর প্রাদুর্ভাবের সময়েও।
পৃথিবী জুড়েই যখন চিকিৎসা পরিষেবার ওপর অমানুষিক চাপ, তখন কিডনি ফেলিওরের ক্ষেত্রে ডায়ালিসিস মেশিন না থাকলে একটি বাড়তি বিপদ জন্ম নেয়। ডায়ালিসিস ছাড়া আমাদের শরীর থেকে অবাঞ্ছিত বর্জ্য এবং তরল পদার্থের নিষ্কাশন সম্ভব হয় না, যেহেতু স্বাভাবিক অবস্থায় এই কাজই করে থাকে কিডনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন