Advertisment

তেল কিনলে ডলার মিলছে, এমন ঐতিহাসিক পরিস্থিতি হল কী করে?

২০১৮ সাল থেকে আমেরিকা অপরিশোধিত তেলের বৃহত্তম উৎপাদক। এবং সে কারণেই অন্যান্য মার্কিন প্রেসিডেন্টরা অতীতে অন্তত নির্বাচনের বছরগুলিতে অপরিশোধিত তেলের দাম কমানোর পক্ষে থাকলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্প তেলের বেশি দামের পক্ষে সওয়াল করেছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপে সৌদি আরব ও রাশিয়া যকন নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছে, তখন সম্ভবত অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে

সোমবার আমেরিকার তেল বাজারে ইতিহাস তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানের অপরিশোধিত তেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI)-এর দাম নিউ ইয়র্কে -৪০.৩২ ডলারে পৌঁছিয়েছে। অপরিশোধিত তেলের দাম এত নিচে এই প্রথমবার পৌঁছল তো বটেই, এর আগে তেলের দাম এভাবে কমেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে।

Advertisment

বিজয় মালিয়ার প্রত্যর্পণ বিরোধী আবেদন খারিজ- এবার কী হবে?

 এই দামের অর্থ, এখন এক ব্যাপেল অপরিশোধিত তেল বিক্রি করলে বিক্রেতাকে ৪০ ডলার দিতে হবে। কিন্তু কী করে এটা সম্ভব হল! প্রথমত তেলের দাম ঋণাত্মক হয়ে গেল কী করে! ০ থেকে -৫, -১০ হয়ে -৪০য়ে পৌঁছল কী করে ব্যারেল পিছু তেলের দাম। দেখতে যেমনই লাগুক, এর পিছনে কারণ রয়েছে।

প্রেক্ষিত

প্রথমে বুঝতে হবে, কোভিড ১৯ জনিত সারা পৃথিবীর লক ডাউন শুরুর আগেই অপরিশোধিত তেলের দাম গত কয়েক মাস ধরে কমছিল। বছরের শুরুতে ৬০ ডলার প্রতি ব্যারেল থেকে ২০২০-র মার্চে তা পৌঁছয় ২০ ডলার প্রতি ব্যারেলে।

এর কারণ খুব সোজাসাপ্টা। কোনও পণ্যের দাম কমতে শুরু করে যখন চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকে। সারা বিশ্বে এবং বিশেষ করে আমেরিকায় তেলের জোগান ছিল খুব বেশি।

মহারাষ্ট্রের পালঘরে তিনজনকে পিটিয়ে মারা হল কেন?

ঐতিহাসিক ভাবে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেকভুক্ত দেশগুলি সারা বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় অংশ (আন্তর্জাতিক চাহিদার ১০ শতাংশ) রফতানি করে থাকে। তারা একটা গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে এবং দাম স্থির করে। তারা তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে দাম কমাতে পারে এবং উৎপাদন কমিয়ে দাম বাড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক অতীতে ওপেক রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এবং ওপেক + হিসেবে আন্তর্জাতিক দাম ও সরবরাহের পরিমাণ স্থির করছে।

একই সঙ্গে বুঝতে হবে উৎপাদন কমানো বা কোনও তৈলকূপ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কঠিন কারণ পুনরুৎপাদন শুরু করতে একদিকে য়েমন অর্থ খরচ হয়, তেমন অন্যদিকে তা প্রক্রিয়া হিসেবে জটিলতর।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কোনও না কোনও ভাবে সুচারুরূপে চালিত প্রতিযোগিতামূলক বাজারেরই উদাহরণ। সে বাজার তেমনভাবে চলার উপরেই নির্ভর করে তেল রফতানিকারীদের একযোগে চলাও।

পুলড টেস্টিং কীভাবে হয়, কোন ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কার্যকর?

সমস্যার সূত্রপাত

কিন্তু মার্চের শুরুতে এতদিনের সুখী সংসার ভেঙে যায়, যখন সৌদি আরব ও রাশিয়া তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে উৎপাদন হ্রাসের ব্যাপারে মতানৈক্যে পৌঁছয়। এর ফলে সৌদি আরবের নেতৃত্বে তেল রফতানিকারক দেশগুলি একে অন্যের থেকে দাম কমাতে শুরু করে কিন্তু উৎপাদনের হ্রাস ঘটায় না।

এমনিতেই কৌশল হিসেবে এ পদ্ধতি টিকে থাকবার উপযোগী নয়, এর উপর যোগ হয় করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঘটনা- যার জেরে আর্থিক সক্রিয়াতা কমে, কমে তেলের চাহিদাও। প্রতিদিন প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে করোনার থাবার আকার বড় হতে থাকে, কমতে থাকে বিমান ও গাড়ি চলাচল।

কোভিড ১৯-এর প্রবেশ

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপে সৌদি আরব ও রাশিয়া যকন নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছে, তখন সম্ভবত অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। তেল রফতানিকারী দেশগুলি দিনে ৬ মিলিয়ন ব্যারেল কম তেল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বৃহত্তম উৎপাদন ছাঁটাই- এবং তেলের চাহিদার পরিমাণ হ্রাস হয়ে গিয়েছে দিনে ৯ থেকে ১০ মিলিয়ন ব্যারেল।

এর অর্থ জোগান-চাহিদার অসামঞ্জস্য মার্চ-এপ্রিলে বাড়তে থেকেছে। বেশ কিছু রিপোর্ট অনুসারে এর ফলে তেল মজুতের ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। ট্রেন ও জাহাজ, যা সাধারণভাবে তেল পরিবহণের কাজে ব্যবহার করা হয়, সেগুলিও মজুতের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সাল থেকে আমেরিকা অপরিশোধিত তেলের বৃহত্তম উৎপাদক। এবং সে কারণেই অন্যান্য মার্কিন প্রেসিডেন্টরা অতীতে অন্তত নির্বাচনের বছরগুলিতে অপরিশোধিত তেলের দাম কমানোর পক্ষে থাকলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্প তেলের বেশি দামের পক্ষে সওয়াল করেছেন।

WTI-এর সঙ্গে মে চুক্তি ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার শেষ হতে চলেছে। ডেডলাইন যত এগিয়েছে, দাম তত কমেছে। তার দুটি বড়সড় কারণ রয়েছে। সোমবারের মধ্যে অনেক তৈল উৎপাদকই তাঁদের নিজেদের তেল অবিশ্বাস্য কম দামে ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। নাহলে তাঁদের সামনে উৎপাদন বন্ধ করবার রাস্তাই কেবল খোলা ছিল, যার ফলে তাঁদের পুনরুৎপাদন শুরু করতে হত, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ তুলনায় হত বেশি।

উপভোক্তা, যাঁদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, তাঁদের পক্ষেও বিষয়টি একইরকম মাথাব্যথার কারণ। তাঁরা অতিরিক্ত তেল কেনার দায় থেকে মুক্তি চাইছিলেন, বিশেষ করে এত দেরিতে, য়ে সময়ে তাঁরা তেল ডেলিভারি নিলেও মজুতের জায়গা তাঁদের কাছেও নেই।

তাঁরা দেখলেন তেলের ডেলিভারি নেওয়া, তার পরিবহণ এবং মজুত (বর্তমান অবস্থায় যা দীর্ঘমেয়াদি হবার আশঙ্কা)-এর জন্য যে খরচ হবে, বিশেষ করে যখন মজুতের জায়গাই আর নেই, সে পরিস্থিতিতে চুক্তিমূল্যের উপর আঘাত আসতে দেওয়া কম ক্ষতিকর।

ক্রেতা ও বিক্রেতা দু পক্ষেরই এই মরিয়া মনোভাবের জন্য তেলের দাম শুধু শূন্যের নিচে নামেনি, অনেকটা ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। স্বল্প মেয়াদে দু পক্ষের কাছেই ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলার বিক্রেতাকে দিয়ে দেওয়া মজুত করা বা উৎপাদন বন্ধ করার চেয়ে ভাল উপায়।

ভবিষ্যতের তেলের দাম

 মনে রাখতে হবে মে মাসের জন্য WTI-এর তেলের দাম মার্কিন দেশেই এত কম। অপরিশোধিত তেলের দামে অন্য কোথাও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দুন মাসে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ২০ ডলার হবার সম্ভাবনা।

এরকম ঘটনা একবারই ঘটতে পারে, কারণ উৎপাদকরা এবার উৎপাদন কমাতে বাধ্য।কিন্তু কোভিড ১৯ যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে সোমবারের নাটকের পুনরাবৃত্তি অসম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত চাহিদা ও জোগানের অসাম্য (যা মজুতের উপরেও নির্ভরশীল) তেলের দামের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Donald Trump
Advertisment