সোমবার মেহিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর বলেছেন তাঁর দেশের কোভিড ১৯ মোকাবিলায় তিনি কিউবার কাছ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য চাইবেন।
ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় কোভিড ১৯ প্রকোপের পর বিভিন্ন দেশে এই মহামারী রোধে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়েছে কিউবা।
“মৌলিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের ব্যাপারে চোখ খুলে দিতে পারে এই মহামারী”
জন হপকিন্স করোনা রিসার্চ সেন্টারের দেওয়া তথ্য অনুসারে বুধবার পর্যন্ত কিউবায় নিশ্চিত সংক্রমণের সংখ্যা ৩৯৬, মৃত ১১ এবং ২৭ জন আরোগ্যলাভ করেছেন।
কোভিড ১৯-এর আগেও কিউবা বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়েছে। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের দেওয়া হিসেব অনুসারে বর্তমানে ৬৭টি দেশে ৬৭ হাজার কিউবান স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মরত, এঁদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘকালীন মেয়াদে রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু বিনা খরচের প্রকল্প হলেও অনেকগুলিই কর্মসূচিই এমন দেশে যারা এই পরিষেবার জন্য কিউবাকে কোনও না কোনও ভাবে সাহায্য করে থাকে।
কেন ভিনদেশে চিকিৎসক পাঠায় কিউবা
১৯৫৯ সাল থেকে বাম শাসনে থাকা কিউবার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সারা পৃথিবীতেই সম্মানিত।
সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর বেশ কয়েক বছর আর্থিক সমস্যা ও কূটনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে গেলেও কিউবার জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছে, যাতে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেশ বেশি (২০১৬ সালে ৭৯.৭৪) এবং শিশুমৃত্যুর হার যথেষ্ট কম (২০১৩ সালে প্রতি হাজার শিশু জন্মে মৃত্যু হার ৪.৭৬)।
দেশে প্রতি ১.১ কোটি মানুষের মধ্যে ৯০ হাজার জন স্বাস্থ্যকর্মী, যা যথেষ্ট বেশি বলেই গণ্য।
অতি প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রা অর্জন করবার জন্য কিউবা তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের বিদেশে পাঠায়, যেখানে তাঁরা স্থানীয় সরকারকে সাহায্য করেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্য অনুসারে কিউবা প্রতি বছর জন পরিষেবা রফতানির মাধ্যমে ৬ বিলিয়ন ডলার রোজগার করে থাকে। এর অধিকাংশই চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা। এ ছাড়া বিভিন্ন মহামারীর সময়েও কিউবা চিকিৎসক পাঠায়, যেমন ২০১৪-১৬-র ইবোলা মহামারীর সময়ে।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন- যে ওষুধে এখন সবার নজর
করোনা মহামারী মোকাবিলায় মার্চ মাসে কিউবা মেডিক্যাল টিম পাঠিয়েছিল ইতালিতেও। সেখানকার প্রতিবেদন অনুসারে কিউবার পেশাদাররা ইতালির সবচেয়ে প্রভাবিত এলাকা বারগামো-তে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করবেন।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, অতিমারী মোকাবিলায় কিউবার স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে লড়ছে সুরিনাম, গ্রানাডা, ভেনেজুয়েলা এবং নিকারাগুয়া সহ মোট ৩১টি দেশ।
এপির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৫৯৩ জন কিউবান চিকিৎসক মহামারী প্রতিরোধে লড়াই চালাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে।
সমালোচনা
কিউবার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা চিকিৎসকদের প্রাপ্য টাকার বহুলাংশ হস্তগত করে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সরকার ডাক্তারদের প্রাপ্য বেতন ৩১০০ ডলারের ৭০ শতাংশই নিয়ে নিয়েছে।
চিকিৎসকদের কাজের অবস্থা নিয়েও বহু সমালোচনা রয়েছে, অনেকেই আশ্রয়ও চেয়েছেন বিদেশে কাজ করবার সময়ে।
আমেরিকার অভিযোগ, কিউবা তার স্বাস্থ্যকর্মীদের শোষণ করে এবং এই পরিস্থিতির নাম দিয়েছে আধুনিক দাসব্যবস্থা। সম্প্রতি ব্রাজিল, ইকুয়েডর, বলিভিয়ার মত দেশে পশ্চিম সমর্থক সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং হাজার হাজার কর্মীকে কিউবায় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন