কাতার, বুধবার (২২ নভেম্বর), ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টায় সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি করেছে। যার ফলে গাজায় একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হয়েছে। কাতার, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এই যুদ্ধবিরতি চার দিন স্থায়ী হবে। তার সময়সীমা আবার বাড়তেও পারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা এই চার দিনের মধ্যেই অনেকটা সময় হাতে পাবে। তবে, এই যুদ্ধবিরতি কোনও সাধারণ যুদ্ধবিরতির মত নয়। এমনটাই মনে করছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সংগঠনগুলো। তাঁদের দাবি, এই যুদ্ধবিরতি আসলে একটি 'মানবিক যুদ্ধবিরতি'। যা অর্থগত দিক থেকে সাধারণ 'যুদ্ধবিরতি'র চেয়ে অনেকটাই আলাদা।
মানবিক যুদ্ধবিরতি
রাষ্ট্রসংঘ একটি 'মানবিক যুদ্ধবিরতি'কে সম্পূর্ণ 'মানবিক কারণে শত্রুতার অস্থায়ী অবসান' বলে মনে করে। এই ধরনের যুদ্ধবিরতি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। কাতারের বিদেশ মন্ত্রকের প্রকাশিত বিবৃতিতেও জানানো হয়েছে, আলোচনা সফল হলে চার দিনের যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়ানো হবে। তবে, ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কোন অঞ্চলে লাগু থাকবে, তা স্পষ্ট করেনি কাতারের বিদেশ মন্ত্রক। পাশাপাশি, মানবিক পদক্ষেপের ব্যাপারে কাতারের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'বর্তমানে গাজা উপত্যকায় পণবন্দি ৫০ জন সাধারণ নারী ও শিশুকে' মুক্তি দেওয়া হবে। বদলে, 'ইজরায়েলের কারাগারে আটক বেশ কিছু প্যালেস্তিনীয় নারী ও শিশুকেও মুক্তি দেওয়া হবে।' পাশাপাশি যুদ্ধবিরতি চলাকালীন মানবিক প্রয়োজনে বিপুল পরিমাণে, 'জরুরি জ্বালানি-সহ মানবিক এবং ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে।'
আরও পড়ুন- ‘হালাল’ কী, এর আবার সার্টিফিকেট কীসের, কারা দেয়?
সাধারণ যুদ্ধবিরতি
আর সাধারণ যুদ্ধবিরতির গুরুত্ব আলাদা। রাষ্ট্রসংঘ যাকে বলে, 'একটি সংঘাতে পক্ষগুলোর সম্মতিতে লড়াইয়ে স্থগিতাদেশ। আর, সামরিক থেকে সংঘাতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ।' যার লক্ষ্য হল, 'একটি স্থায়ী রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে পৌঁছনো। শান্তির সম্ভাবনা বাড়িয়ে উভয়পক্ষকে আলোচনা চালানোর অনুমতি দেওয়া।' সহজভাবে বলতে গেলে, মানবিক যুদ্ধবিরতির বদলে সীমিত রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধানে পৌঁছনোর চেষ্টা। সেই চেষ্টায় যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার শুরু। প্যালেস্তাইনে বর্তমান সংঘাতের প্রেক্ষাপট থেকে যা সম্পূর্ণই আলাদা।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য
ইজরায়েল এবং তার বন্ধু দেশগুলোর বেশিরভাগ এই যুদ্ধবিরতির তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, এই যুদ্ধবিরতি হামাসকে 'পুনরায় সংঘবদ্ধ' হওয়ার সুযোগ দেবে। আর, 'সন্ত্রাসবাদী সংগঠন' হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের লড়াইকে কার্যকারিতাহীন করে দেবে। যুদ্ধবিরতি অনুমোদনকারী মন্ত্রিসভার কাছে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাই জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে হামাসের বিরুদ্ধে ফের যুদ্ধ শুরু হবে। তিনি বলেন, 'আমরা যুদ্ধে আছি, আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না, আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।' নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন, এইভাবে যুদ্ধবিরতি নিরলস শত্রুদের কিছুটা স্বস্তি দেবে। আর, ইজরায়েলের ওপর ফের হামলা চালানোর সুযোগ করে দেবে।
'খোলা ক্ষতের ওপর ব্যান্ডেজ'
গাজার শিল্পী ইব্রাহিম মুহতাদি দ্য গার্ডিয়ানে লিখেছেন, 'একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি খোলা ক্ষতের ওপর ছোট ব্যান্ডেজ ছাড়া কিছুই নয়। এটা ভয়াবহতাকে দীর্ঘায়িত করার এক উপায়। হত্যা বন্ধ না-হলে, সাহায্যের জন্য একটি মানবিক বিরতি দিয়ে কী লাভ?' মুহতাদি লিখেছেন, যাঁরা প্রকৃতই যুদ্ধবিরতি চান, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে কোনও অর্থবহ এবং স্থায়ী শান্তির জন্য ইজরায়েলকে অবশ্যই গাজায় অবরোধ তুলে নিতে হবে। আর, স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের জন্য সরল বিশ্বাসে পুনরায় আলোচনা শুরু করতে হবে।