Advertisment

ভারতের ঘরে ঘরে পাওয়া যায় হালুয়া, কিন্তু আদৌ কি তা ভারতের?

'হালুয়া' (হিন্দি উচ্চারনে 'হালওয়া') শব্দটিই এসেছে মূল আরবি শব্দ 'হালভা' থেকে, যার তুর্কি অপভ্রংশ হলো 'হেলভা'। এমনই এই খাদ্যের প্রভাব এবং বিস্তার যে আজও (উত্তর) ভারতের মিষ্টি প্রস্তুতকারকদের 'হালওয়াই' বলা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
nirmala sitharaman halwa

ছবি: অর্থ মন্ত্রকের টুইটার পেজ থেকে

গত সোমবার, অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ দিল্লিতে পালন করলেন 'হালুয়া উৎসব', যার দ্বারা আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো কেন্দ্রীয় বাজেটের মুদ্রণ প্রক্রিয়ার।

Advertisment

দীর্ঘদিন যাবত পালিত এই উৎসব আরও একবার প্রমাণ করে, কীভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে ভারতে, এবং কীভাবে সেগুলি হয়ে উঠেছে আমাদের একান্ত আপন।

হালুয়া পাওয়া যায় ভারতের সর্বত্র, শুধু ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে তার রূপের অল্পবিস্তর তারতম্য ঘটে। সুতরাং আপনি পাবেন সিন্ধি হালুয়া, মোহনভোগ, তিরুনেলভেলি হালুয়া, এমনকি গোশ্ত (মাংসের) হালুয়া! নানারকম ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে গুরুত্ব পায় হালুয়া - শিখদের গুরুদ্বারে 'কড়া প্রসাদ' হোক কিংবা হিন্দুদের নবরাত্রির সময় অল্পবয়সী মেয়েদের খাওয়ানো 'হালুয়া পুরি'।

আরও পড়ুন: বাজেটের আগে ঐতিহ্যপূর্ণ হালুয়া উৎসব

অথচ অনেকেই হয়তো জানেন না যে সর্বত্র বিদ্যমান এই খাবারটি আদৌ ভারতীয়ই নয়। এর আমদানি হয় তুরস্ক বা টার্কি থেকে, বহু শতাব্দী আগে।

বস্তুত, 'হালুয়া' (হিন্দি উচ্চারনে 'হালওয়া') শব্দটিই এসেছে মূল আরবি শব্দ 'হালভা' থেকে, যার তুর্কি অপভ্রংশ হলো 'হেলভা'।

খাদ্য ইতিহাসবিদ কে টি আচার্যর বক্তব্য, ইংরেজি ভাষায় যখন প্রথম 'হালওয়া' কথাটা ব্যবহার হয়, তখন তা ছিল "তিলের গুঁড়ো এবং মধু দিয়ে বানানো এক ধরনের তুর্কি মিষ্টি"।

ভারতে আমাদের পরিচিত হালুয়া আরও সমৃদ্ধ, ভারী, এবং খাদ্যশস্য ভিত্তিক (সুজি, আটা ইত্যাদি), তরিতরকারি ভিত্তিক (গাজর, লাউ), অপেক্ষাকৃত জমকালো আমন্ড (কাঠবাদাম) হালুয়া, এবং কিছু আমিষ বিকল্প যেমন পূর্বোল্লিখিত গোশ্ত হালুয়া, বা আন্ডা (ডিম) হালুয়া। এগুলির অধিকাংশকেই ঘি অথবা ক্ষীর দিয়ে একেবারে চপচপে করে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: সাইবাবার জন্মস্থান নিয়ে তর্কবিতর্ক ও বনধ

ইতিহাসবিদ রাণা সফি বলেন, "আরব দেশেই যে হালুয়ার উৎপত্তি, একথা অনেক বইতে পাওয়া যায়। কিন্তু এমনই এই খাদ্যের প্রভাব এবং বিস্তার যে আজও (উত্তর) ভারতের মিষ্টি প্রস্তুতকারকদের 'হালওয়াই' বলা হয়।"

আব্দুল হামিদ শারার (১৮৬০-১৯২৬) বলে এক লেখকের ‘Guzishta Lucknow (Lucknow, the last phase of an Oriental Culture)’ বইটির উল্লেখ করে সফি বলেন, "এই বইটিতে শারার লিখেছেন, নামের দিক দিয়ে বিচার করলে হালুয়া আরব দেশে তৈরি হয়, এবং ভারতে আসে পারস্য হয়ে।"

এমনও শোনা যায় যে হালুয়ার উৎপত্তি, বা অন্তত পরিবর্তন, ঘটে তুরস্কের প্রখ্যাত সম্রাট প্রথম সুলেমানের রন্ধনশালায়। সুলেমান অটোমান সাম্রাজ্য শাসন করেন ১৫২০ থেকে ১৫৬৬ পর্যন্ত। তাঁর রন্ধনশালায় একটি বিশেষ বিভাগই ছিল শুধুমাত্র মিষ্টি তৈরির জন্য - যার পোশাকি নাম ছিল 'হেল্ভাহানে' বা 'মিষ্টির ঘর'।

'The Illustrated Foods of India' (২০০৯) শীর্ষক বইতে আচার্য লিখছেন, "ভারতে হালুয়া কথাটার অর্থ হলো এক ধরনের নরম অথচ ঘন মিষ্টান্ন, যা বানানো যায় একাধিক জিনিস দিয়ে, যেমন আটা, গমের আঠা, সিমাই, ছোলার আটা, কলা বা খেজুরের মতো ফল, আমন্ডের মতো বাদাম এবং কুমড়োর মতো তরকারি।"

আরও পড়ুন: ধোনি: লিস্টে নেই বলেই একেবারে বাদ, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়

ঠিক কবে যে আপামর ভারতবাসীর রান্নাঘরে ঢুকে পড়ল হালুয়া, তা বলা খুব সহজ নয়। তবে শিকাগো-বাসী খাদ্য ইতিহাসবিদ কলিন টেলর সেনের মতে, ভারতে হালুয়ার প্রবেশ দিল্লি সুলতানাতের শাসনকালে, অর্থাৎ ত্রয়োদশ শতাব্দীর গোড়া থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি।

সফিও বলছেন যে ১৫০০ সালে মালওয়ার সুলতানের জন্য লেখা 'নিমতনামা' শীর্ষক একটি বইয়ে হালুয়া এবং তা বানানোর প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

হালুয়া যে বিভিন্ন বাণিজ্যপথ ধরেই ভারতে প্রবেশ করেছে, তা আরও বোঝা যায় এটা ভাবলে যে এই অঞ্চলের দুটি ঐতিহাসিক বন্দর শহর - করাচি এবং কোঝিকোড় - আজও বজায় রেখেছে তাদের নিজস্ব, স্বকীয় হালুয়া বানানোর প্রক্রিয়া।

Nirmala Sitharaman
Advertisment