কাশ্মীরের নেতারা ও বিরোধীদের মধ্যে কেউ কেউ ৫ আগস্ট, ২০১৯-এর ক্রিয়াকলাপকে ভারত সরকারের দ্বারা অবিচার এবং বিশ্বাসের লঙ্ঘন হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যুক্তি দিয়েছিলেন যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ শুধুমাত্র দুর্নীতি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে পরিচালিত করেছিল এবং জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে এর অপসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন প্রশ্ন হল, চার বছর পর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কী?
পাথর ছোড়া বন্ধ হচ্ছে
উপত্যকায় অভূতপূর্ব সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী এবং এনআইএ-র মত কেন্দ্রীয় সংস্থার কঠোর পদক্ষেপের ফলে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে। সন্ত্রাসের ঘটনা কমেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে উপলব্ধ তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়কালে উপত্যকায় পাথর নিক্ষেপের ৭৬টি ঘটনা ঘটেছে। যা, ২০২০ সালের একই সময়ের মধ্যে রেকর্ড করা ২২২টি ঘটনার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আর, ২০১৯ সালে একই সময়ে এমন পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল ৬১৮টি।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
সেই অনুসারে, এসব ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর আহতের সংখ্যা ২০১৯ সালে (জানুয়ারি-জুলাই) ছিল ৬৪টি। সেটা ২০২১ সালে (জানুয়ারি-জুলাই) কমে হয়েছে মাত্র ১০টি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়ের মধ্যে পেলেট গান এবং লাঠিচার্জে ৩৩৯ জন অসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। একইসময়ে, ২০২১ সালে সংখ্যাটি ২৫-এ নেমে এসেছে। ২০২২ সাল থেকে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলার সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করছে। যার মধ্যে পাথর ছোড়ার ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত। এই তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে জম্মু-কাশ্মীরে মাত্র ২০টি আইন-শৃঙ্খলা অবনতির ঘটনা ঘটেছে।
জঙ্গি গ্রেফতার
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ওভার-গ্রাউন্ড ওয়ার্কারদের (ওজিডব্লিউএস) গ্রেফতার ২০১৯ সালের (জানুয়ারি-জুলাই) ৮২ থেকে ২০২১ সালে একই সময়ের মধ্যে বেড়ে হয়েছে ১৭৮। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের আগের ১০ মাসের তুলনায়, ৫ আগস্ট, ২০১৯ এবং ৬ জুন, ২০২২-এর মধ্যে 'সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড' ৩২% হ্রাস পেয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে সরকারি নথি। এই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানের মৃত্যু ৫২% কমেছে। সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু ১৪% কমেছে। সঙ্গে, 'জঙ্গি সংগঠনে ভর্তি'র ঘটনার সংখ্যাও ১৪% হ্রাস পেয়েছে বলে জানাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নথি।
টার্গেটেড কিলিং
তার মধ্যেই অবশ্য, উপত্যকায় অসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে কাশ্মীরি হিন্দু এবং অকাশ্মীরিদের হত্যার ঘটনা, নিরাপত্তার সাফল্যের ভঙ্গুরতা প্রকাশ করেছে। ৫ আগস্ট, ২০১৯ সাল থেকে উপত্যকায় নিহত সমস্ত বেসামরিক নাগরিকের ৫০%-এরও বেশি গত আট মাসে নিহত হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে স্বল্পমূল্যের ড্রোনের মাধ্যমে ছোট অস্ত্র এপারে ফেলে দেওয়া এবং পাকিস্তানের হ্যান্ডলারদের দ্বারা পরিচালিত জঙ্গিরা এই হত্যাকাণ্ডগুলোয় সহায়তা করেছে। জম্মুতে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় জঙ্গিদের দ্বারা আক্রমণ করার চেষ্টাও করা হয়েছে। শেষবার ২০০০ এর গোড়ার দিকে এমন ধরনের হামলা দেখেছিল উপত্যকা।
আরও পড়ুন- জয়পুর-মুম্বই ট্রেন গুলিচালনা, কতদূর এগোল তদন্ত?
ব্যর্থতাও কম নয়
২০২১ সালে, পুলিশ প্রায় ২০ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। একাধিক আইইডি উদ্ধার করেছে যা হিন্দু এলাকায় হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২২ সাল শুরু হয়েছিল জম্মুতে হিন্দু অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যার মাধ্যমে। এটা এমন একটা ঘটনা, যা কয়েক বছর ধরে শোনা যায়নি। জম্মুতে ঘন ঘন অনুপ্রবেশ ঘটেছে। একডজনেরও বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আবার, এমনও হয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই হামলাকারীদের ধরা যায়নি।