Nipah Outbreak in Kerala: একে করোনায় রক্ষে নেই, নিপা তার দোসর। এখন এমনই অবস্থা কেরলে। রবিবার নিপা সংক্রমণে কোঝিকোড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের। তাঁর নমুনা পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকেই রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এমনটাই কেরল স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে। মুলত এনসেফেলাইটিস এবং মায়োকার্ডিটিসের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন হয়েছিল সেই কিশোর। মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ডের পেশি জ্বলে যাওয়া এই জোড়া উপসর্গের ফল।
ইতিমধ্যে দক্ষিণের এই রাজ্যে নিপা সংক্রমণ নিশ্চিত হতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দল পাঠানো হয়েছে কেরলে। অতি দ্রুত এই সংক্রমণ প্রতিহত করতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে সহযোগিতা করাই কেন্দ্রীয় দলের উদ্দেশ্য। নিপা ভাইরাস বা এনআইভি প্রাণীঘটিত অর্থাৎ জুনোটিক ভাইরাস। বাহক প্রাণী থেকে মানুষ কিংবা মানুষ থেকে মানুষ কিংবা পচা খাবার থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। প্রাথমিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, ফ্রুট ব্যাট এই ভাইরাসের বাহক। এই স্তন্যপায়ী বাহক, অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণী- কুকুর, বিড়াল, ঘোড়া, শূকর, ভেড়া, ছাগলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।
নিপা ভাইরাস কী
মানবদেহ, এই ভাইরাস প্রধান বাহক বা তার থেকে সংক্রমিত কোনও বাহকের সংস্পর্শে এলে সংক্রমিত হয়। বাদুড় কিংবা শূকর, কিংবা তাদের মুত্র এবং লালা ইত্যাদি ইত্যাদি মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। তাই প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণকে মহামারি বলে। একবার মানবদেহে এই ভাইরাস প্রবেশে তা অন্য মানবকে সংক্রমণ করতে পার। এমনটাই বলছেন গবেষকরা।
নিপার ইতিহাস-ভূগোল
১৯৯৮ আর ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে প্রথম নিপা মহামারি ছড়ায়। মালয়েশিয়ার একটি ছোট গ্রামের নামে এই ভাইরাসের নামকরণ। সেই সময় দুই দেশ মিলিয়ে ৩০০ মানুষ সংক্রমিত এবং ১০০ জন মৃত হয়েছিলেন। কয়েক লক্ষ শূকর নিধন করে সেই সময় এই সংক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভারত ও বাংলাদেশ, চলতি শতকের প্রথমে নিপার সংক্রমণ দেখেছিল। ভারতে শুধু পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে এই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল।
২০০১ সালের প্রথম দুই মাসে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে এই ভাইরাসের প্রভাব বাড়ে। প্রতি ৪ জন সংক্রমিতের মধ্যে তিন জন সেই সময় মারা গিয়েছিলেন। গোটা রাজ্যে অন্তত ৬৬ জনের দেহে সংক্রমণের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে নদিয়ায় এবং ২০১৮ সালে কেরলের কোঝিকোড়ে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটিয়েছিল।
কতটা ক্ষতিকর নিপা
এদিকে, এই ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার উচ্চমাত্রার। মুলত এনসেফেলাইটিসের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কোষকে প্রভাবিত করে মানুষের মৃত্যুর কারণ নিপা সংক্রমণ। এই ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে ৪-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়। জ্বর, মাথাব্যথা তিন দিন-এক সপ্তাহ থাকে। ফুসফুস সংক্রমিত হলে কাশি, গলাব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট এই সংক্রমণের উপসর্গ। ধীরে ধীরে সংক্রমণ যদি এনসেফেলাইটিসের কারণ হয় তাহলে মুহূর্তের মধ্যে রোগী কোমায় চলে যায়। ঘুম ঘুম ভাব, অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং মানসিক বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
এর আগেও কেরল এই সংক্রমণ প্রতিহত করেছিল। তবে সেবার নিপা দমনে অদক্ষ ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তবে ইবোলা দমনের অভিজ্ঞতা নিপার ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছিল তারা। প্রথমেই নিপা সংক্রমিত ব্যক্তি কাদের সংস্পর্শে এসেছিল, সেটা বের করা শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। তাদের ২১ দিনের আইসোলেশনে পাঠানো হয়। এবার সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা, কাদের সংস্পর্শে এসেছিল, সেটা খুঁজে বের করা হয়। এভাবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যারা সেই ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিল তাঁদের খুঁজে খুঁজে আইসোলেট করা হয়েছিল। কোঝিকোড় এবং মল্লপুরম মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষ সেই সময় আইসোলেশনে ছিলেন।
কেরলে নিপার প্রভাব
২০১৮ সালে খানিকটা অনভিজ্ঞ হাতেই কয়েকটি মৃত্যুর বিনিময়ে নিপাকে অতিমারী হওয়ার থেকে আটকেছিল কেরল সরকার। তিন বছর পর ফের সেই সংক্রমণ ফিরে আসায় এখন কিছুটা উদ্বিগ্ন রাজ্যের পিনরাই বিজয়ন সরকার। তবে করোনা মোকাবিলা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তারা অনেক বেশি অভিজ্ঞ।
ইতিমধ্যে নিপা সংক্রমণে জিরো পেশেন্ট অর্থাৎ সেই কিশোরের খোঁজ পেয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। মৃত সেই কিশোরের নমুনা পরীক্ষা পজিটিভ আসায় কাজ আরও সহজ কেরল স্বাস্থ্য দফতরের। এখন সেই সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনে পাঠালেই নিপা মোকাবিলায় সাফল্য পাবে কেরল। এমনটাই মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন