গত ৩ মে বিষ্ণুপুর এবং চুরাচাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি আদিবাসী সংহতি মিছিল চলাকালীন মণিপুরে প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। তার প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেছে। মেইতেই-কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে এক জাতিগত সংঘাত থেকে উদ্ভূত হিংসা এখনও মণিপুরে অব্যাহত। এখনও পর্যন্ত এই সংঘর্ষে ১৭৫ জনেরও বেশি প্রাণ দিয়েছে। আহত হয়েছেন ১,০০০ জনেরও বেশি। কয়েক হাজার মানুষ তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। কেউ কেউ আবার সরকার পরিচালিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। চলতি মাসের গোড়ার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (অপারেশন) আইকে মুইভা যে তথ্য দিয়েছেন, তা অনুসারে অগ্নিসংযোগের ৫,০০০-এরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৪,৭০০টিরও বেশি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মুইভা বলেন, 'অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ৩৮৬টি ধর্মীয় কেন্দ্রে ভাঙচুর করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৫৪টি গির্জা এবং ১৩২টি মন্দির।'
ছবি প্রকাশ্যে
এই পরিস্থিতিতে দুই মেইতেই ছাত্রের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁদের হত্যা করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ওই দুই ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার প্রায় তিন মাস পর ছবি দুটি প্রকাশ পেয়েছে। যাতে প্রথমে দেখা গিয়েছে ফিজাম হেমজিৎ (২০) ও হিজাম লিনথোইঙ্গাম্বি (১৭)-কে। তাঁরা একটি সবুজ জঙ্গল ঘেরা এলাকায় পাশাপাশি বসে ছিলেন। তাঁদের পিছনে অস্ত্র হাতে দুই ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। দ্বিতীয় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গিয়েছে, দুই ছাত্র পরস্পরের পাশে মাটিতে পড়ে রয়েছেন। তারমধ্যে হেমজিতের মাথা নেই। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং গত ৩ মে স্থগিত হওয়া মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধারের ঘোষণা করার ঠিক কয়েকদিন পরে এই ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশিত ছবিগুলো আবারও উত্তর-পূর্ব রাজ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে। পরিস্থিতি সামলাতে মণিপুর সরকার দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন- ইম্ফল থেকে নিখোঁজ ২ মেইতি পড়ুয়ার দেহের ছবি ভাইরাল, খুনের আশঙ্কায় উত্তেজনা মণিপুরে
কেন হিংসা ছড়াল?
গত ৩ মে, কুকি সম্প্রদায় মেইতেইয়ের দীর্ঘস্থায়ী দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। মেইতেইদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, তাঁদেরকে রাজ্যের তফসিলি উপজাতির (এসটি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই দাবি মণিপুর হাইকোর্টের নির্দেশের পরে উসকে উঠেছিল। কুকিদের বিরোধিতার কারণ হল, মণিপুরে জনসংখ্যা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব উভয়ই মেইতেইদের হাতে। মেইতেই এবং মেইতেই পাঙ্গাল মণিপুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৪.৬%। সেই কারণে মেইতেইদের তফসিলি উপজাতির মর্যাদাপ্রাপ্তির অর্থ হল, অন্যান্য স্বীকৃত উপজাতিদের চাকরির সুযোগ, জমির অধিকার এবং অন্যান্য সুবিধা হারানো।