করোনা আবহে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ফলে এখন অনলাইনেই ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে পড়ুয়ারা। কোনরকমে স্থগিত থাকা আইসিএসই, সিবিএসই, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে দেশের জাতীয় শিক্ষানীতিতে নিয়ে আসা হল বড়সড় বদল। বুধবার নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি (new National Education Policy) পাস করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। এখন প্রশ্ন উঠছে এর ফলে কতটা বদল আসবে শিক্ষাব্যবস্থায়? আদৌ কি উপকৃত হবে পড়ুয়ারা?
এই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির (NEP) মূল উদ্দেশ্য কী?
দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নের একটি কাঠামো বলা যেতে পারে জাতীয় শিক্ষানীতিকে। যে নীতি অনুসরণ করবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এবং পড়াশুনোর মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। ১৯৬৪ সালে প্রথম এই নীতি নিয়ে আসেন কংগ্রেসের সাংসদ সিদ্ধেশর প্রসাদ। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের দূরদর্শিতা এবং দর্শন-চিন্তাবোধের অভাব এই অভিযোগ পোষণ করেই এই নীতি আনেন তিনি। সেই বছরেই শিক্ষার জাতীয় ও সমন্বিত নীতিমালা খসড়া করার জন্য তৎকালীন ইউজিসি চেয়ারপারসন ডি এস কোঠারীর নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিশনের পরামর্শ মেনেই ১৯৬৮ সালে সংসদে প্রথম পাস হয় জাতীয় শিক্ষানীতি। মোট তিনবার দেশে শিক্ষানীতির পরিবর্তন হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে ইন্দিরা গান্ধীরে সময়ে, এরপর ১৯৮৬ সালে রাজীব গান্ধীর সময়ে। ১৯৯২ সালে নরসীমা রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একবার পরিবর্তনের প্রস্তাব আনলেও তা কার্যকর হয়নি। ২০২০ সালে নরেন্দ্র মোদীর সময়কালে তৃতীয়বারের জন্য বদল হল জাতীয় শিক্ষানীতি।
নয়া শিক্ষানীতিতে শিক্ষাক্ষেত্রে কী কী বদল আসতে চলেছে?
সবচেয়ে বড় বদল আসতে চলেছে উচ্চশিক্ষায়। এই নীতিতে ভারতে ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। এই নীতিতে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ইউজিসি এবং অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিকাল এডুকেশন। বদলে এসেছে চার বছরের স্নাতক প্রক্রিয়া এবং বন্ধ হয়েছে এম.ফিল।
স্কুলগুলির ক্ষেত্রে বোর্ড পরীক্ষাকে আরও সহজতর করে তোলা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় প্রয়োজন সেই বিষয়গুলিকে 'কোর সাবজেক্ট' হিসেবে রেখে বাকি বিষয় বাদ দেওয়া হবে সিলেবাস থেকে। এই নীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে "পরীক্ষামূলকভাবে শেখা এবং প্র্যাকটিকাল শিক্ষার মাধ্যমে চিন্তাভাবনার বিকাশ"-এ।
এছাড়াও এত বছর ধরে চলে আসা 10+2 কাঠামোতে বদলে “5+3+3+4” এই কাঠামো নিয়ে আসা হয়েছে নয়া শিক্ষানীতিতে। মিড ডে মিল দেওয়া হবে পঞ্চম শ্রেণির নীচের ক্লাসেও। ২০৪০ সালের মধ্যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিকে সব বিষয়ভিত্তিক পঠনপাঠন নীতিতে আসতে হবে।
স্কুলগুলিতে স্থানীয় ভাষা শেখা কী বাধ্যতামূলক? মা-বাবার ট্রান্সফার চাকরি হলে কিংবা বহুভাষিক হলে সন্তানদের কী হবে?
ভাষা শেখার ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বিলটিতে। বিজেপি সরকার দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর হিন্দি ভাষাকে আবশ্যক করতে হবে সব রাজ্যে সেই বিধান দিয়েছিল। যদিও পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্য সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। এই নয়া নীতিতে সেই বিধান নরম করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দমতো ভাষা রাখতে পারবে। তবে অবশ্যই একটি প্রথম তিনটি ভাষার মধ্যে দুটি ভাষাকে স্থানীয় হতে হবে।
যাদের ট্রান্সফার চাকরি বা মা-বাবা বহুভাষিক (তামিল-বাঙালি) তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ভাষার বিধান দেওয়া নেই এই নয়া নীতিতে।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কীভাবে ক্যাম্পাস খুলতে সক্ষম হবে?
বিশ্বের ১০০টি বিদ্যালয়েকে বেছে নেওয়ার কাজ শুরু হবে এই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে। ইনস্টিটিউট অফ এমিনেন্স স্ট্যাটাস রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার একই ধরনের বিল এনেছিল। যেখানে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ইয়াল, কেমব্রিজ, এমআইটি, স্ট্যান্ডফোর্ড, এডিনবার্গ, ব্রিস্টলের মতো বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে ক্যাম্পাস খোলার ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় ভারতে নিজেদের ক্যাম্পাস খোলার কোনও ইচ্ছাপ্রকাশ করেনি এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।
নয়া শিক্ষানীতির ফলে স্নাতক এবং এম.ফিল-এ কী প্রভাব পড়বে?
এখন যেমন তিন বছর শেষ করার পর পড়ুয়ারা স্নাতক ডিগ্রি পায় এবার সেখানে বদল এসেছে। কোনও পড়ুয়া যদি চায় এক বছর পড়তে সেই বিষয়ে তাহলে সার্টিফিকেট পাবে, দু'বছর একই বিষয়ে পড়লে ডিপ্লোমা, তিন বছর কিংবা তার বেশি পড়লে ব্যাচেলর্স ডিগ্রি পাবেন।
এম.ফিল বাতিলের নেপথ্যে উচ্চশিক্ষার নীতিকেই রেখেছে কেন্দ্র। তাঁদের মত শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তরের পরই পিএইচডিতে রেজিস্টার করতে পারেন। তাহলে এম.ফিল-এর প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে না। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজে এম.ফিল-কে স্নাতক এবং পিএইচডির মাঝামাঝি ডিগ্রি হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এখন এর প্রয়োজন নেই বলেই মত মন্ত্রকের।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন