গত সপ্তাহে অনাস্থা প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় উল্লেখ করার পরে ১৯৬৬ সালে মিজোরামে বায়ুসেনার ব্যবহার আলোচনায় উঠে এসেছে। কোন পরিস্থিতিতে ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) বিমানগুলোকে বিদ্রোহ দমনে ব্যবহার করেছিল? ১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে মিজোরামে সামরিক পরিস্থিতিই বা কেমন ছিল?
১৯৬৬ সালে মিজোরামে কী ঘটছিল?
১৯৬৬ সালের প্রথম দুই মাসে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-এর নেতৃত্বে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বর্তমান মিজোরাম অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই মিজোরাম মিজো পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কেন্দ্র অসম রাইফেলসের ব্যাটালিয়ন, কয়েকটি বিএসএফ কোম্পানি বাধ্য হয়ে মিজো পাহাড়ে পাঠায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এমএনএফ মিজোরামের বৃহত্তম শহর আইজল এবং তারপর সমগ্র মিজো পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে ‘অপারেশন জেরিকো’ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তারা কয়েক দিনের ব্যবধানে আইজল দখল করে।
যেভাবে বিদ্রোহ শক্তিশালী হয়েছিল
সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজ (সিএলএডব্লিউএস) জার্নালে প্রকাশিত মিজো বিদ্রোহের একটি নিবন্ধে ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (আইডিএসএ)-এর রিসার্চ ফেলো আলি আহমেদ বলেছেন যে অপারেশন জেরিকোকে একজন সামরিক লেখক বর্ণনা করেছিলেন। তিনি লিখেছেন যে, এমন পরিপূর্ণ সামরিক প্রস্তুতি-সহ হামলা, তার ওপর স্থানীয় বাসিন্দাদের বিপুল আস্থা, ভারতীয় উপমহাদেশে এর আগে দেখা যায়নি। জানা যায় যে এমএনএফ এত ভালোভাবে সামরিক প্রস্তুতি নিতে পেরেছিল, তার কারণ হল তাদের সশস্ত্র সংগঠনে ভিড়ে গিয়েছিল বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক। যাদের অনেকেই প্রাক্তন সেনা বা অসম রেজিমেন্ট ব্যাটালিয়নের প্রাক্তন কর্মী, যাদের শৃঙ্খলার অভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
সরকারের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অবস্থানগুলো পুনর্দখলের জন্য স্থলপথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার (পরে মেজর জেনারেল) রুস্তম জাল কাবরাজি। তিনি আগরতলায় অবস্থিত ৬১ মাউন্টেন ব্রিগেডের নেতৃত্বে ছিলেন। মেজর জেনারেল কাবরাজি, কর্পস অফ সিগনালের একজন অফিসার। তিনিই প্রথম সিগনাল অফিসার যিনি একটি পর্বত ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন। বিদ্রোহীরা আইজলে প্রবেশ করার সময় তাঁর ব্রিগেডকে মিজো পাহাড়ে সরানো হয়।
অস্ত্র এবং অর্থ লুঠ
মিজো বিদ্রোহীরা ১ নম্বর অসম রাইফেলসের সদর দফতর ঘেরাও করেছিল। সেই দফতরে ডেপুটি কমিশনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিদ্রোহীরা স্থানীয় কারাগার থেকে সমস্ত বন্দিদের মুক্তি দিয়েছিল। সরকারি কোষাগার থেকে অস্ত্র ও নগদ অর্থ লুঠ করেছিল। 'স্বাধীনতা' ঘোষণা করা হয়েছিল এবং অসম রাইফেলসকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল। পালটা হিসেবে, অসম রাইফেলস ব্যাটালিয়নকে হেলিকপ্টার দিয়ে জওয়ান এবং রসদ সরবরাহ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, মিজো বিদ্রোহীরা কপ্টারগুলোতে গুলি চালায়।
ব্রিগেডিয়ার কাবরাজি বিদ্রোহীদের কঠোর প্রতিরোধের মুখে স্থলপথে অভিযান পরিচালনা করেন। আইজলে পৌঁছতে তাঁর বাহিনীর বেশ কয়েক দিন সময় লেগেছিল। পাশাপাশি, অন্যান্য ব্যাটালিয়নগুলো এই বিদ্রোহ দমন অভিযানে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর দিকে অগ্রসর হয়েছিল।
আরও পড়ুন- দেশজুড়ে ১০ হাজার ই-বাস চালুর সিদ্ধান্ত, রেলের ৭টি-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে সায় মন্ত্রিসভার
বায়ুসেনার ভূমিকা কী ছিল?
সেনাবাহিনী যখন বিদ্রোহীদের বিতাড়ন করার জন্য স্থলপথে লড়াই চালাচ্ছিল। সেই সময় ডাক পড়েছিল বিমান বাহিনীরও। লাগাতার বিমান হামলা সেনাবাহিনীকে 'স্বাধীন' বলে ঘোষণা করা বিশাল এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল। একমাসের মধ্যেই বিমান অভিযানের সাহায্যে, ব্রিগেডিয়ার কাবরাজির ব্রিগেড মিজোরামের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছিল।