Ramayana-Outside India: রামায়ণ ভারতে সহস্রাব্দ ধরে জনপ্রিয়। সংস্কৃত এবং আঞ্চলিক ভাষায় লেখা রামায়ণ বইয়ের আকারে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও লোকনাট্য, পুতুল নাটক হিসেবে রামায়ণের কাহিনি বারবার উঠে এসেছে জনসাধারণের কাছে। তবে, শুধু ভারতই নয়। ভারতের বাইরেও এই মহাকাব্যের ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
রামায়ণের এই বিস্তার সাক্ষ্য দেয় যে অতীতে কীভাবে ভারতীয়রা বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেছেন। অর্থাৎ, সমৃদ্ধ ব্যবসায়ী হিসেবে, প্রচারক হিসেবে এবং শ্রমিক হিসেবে ভারতীয়রা বাকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। গবেষকরা মনে করছেন, প্রথম কয়েক শতাব্দীতেই রামায়ণ ছড়িয়ে পড়েছিল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, চিন, তিব্বতের মত বিভিন্ন দেশে। আর ১৯ শতকে এটি আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ওশিয়ানিয়ার কিছু অংশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
রামায়ণ কীভাবে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল?
নিউ ইয়র্কের সেন্ট জনস ইউনিভার্সিটির এশিয়ান হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিয়নের তৎকালীন সহকারি অধ্যাপক সন্তোষ এন দেশাই ১৯৬৯ সালে লিখেছেন, রামায়ণ তিনটি পথ ধরে 'খ্রিস্টীয় যুগের প্রথম শতাব্দী'তে ভারত থেকে এশিয়ার বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল। স্থলপথে তা ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তরের পথ ধরে পঞ্জাব এবং কাশ্মীর থেকে চিন, তিব্বত, পূর্ব তুর্কিস্তানে। সমুদ্রপথে, দক্ষিণ পথটি গুজরাত এবং দক্ষিণ ভারত থেকে জাভা, সুমাত্রা এবং মালয় পর্যন্ত ছড়িয়েছিল। স্থলপথে পূর্ব পথ ধরে বাংলা থেকে বার্মা, থাইল্যান্ড এবং লাওসে পৌঁছেছিল রামায়ণ মহাকাব্য। ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া তাদের রামায়ণের গল্পগুলো আংশিকভাবে জাভা থেকে এবং আংশিকভাবে ভারতের পূর্ব পথ থেকেই পেয়েছিল। আর, এতেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন ভারতীয়রা 'খ্রিস্টীয় যুগের প্রথম শতাব্দীতে' এই অঞ্চলে ভ্রমণ করতেন? সেই উত্তরটা হল- প্রধানত বাণিজ্যের জন্য তাঁরা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। বিশেষ করে মশলা, সোনা এবং সুগন্ধি কাঠের ব্যবসা করতেন ভারতীয়রা। তাঁদের অনেকে সেখানেই থেকে যান। তাঁরা স্থানীয় নারীদের বিয়ে করেন। অথবা চাকরি পেয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করেন।
ইতিহাসবিদের দৃষ্টিতে
ইতিহাসবিদ কর্মবীর সিং, 'ভারত-থাইল্যান্ড সম্পর্কের সাংস্কৃতিক মাত্রা: একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ' (২০২২) শিরোনামে একটি গবেষণাপত্রে লিখেছেন যে ব্যবসায়ীরা তাঁদের সঙ্গে 'ভারতীয় ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং দর্শন' নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, 'ওই সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্রাহ্মণ পুরোহিত, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, পণ্ডিত এবং অভিযাত্রীরাও ছিলেন। তাঁরা সকলেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয়দের কাছে ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।'
বিভিন্ন দেশে রামায়ণ
সময়ের সঙ্গে, রামায়ণ বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। থাইল্যান্ডের আয়ুথায়া রাজ্য (১৩৫১ থেকে ৭৬৭ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দ) রামায়ণের অযোধ্যার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। আয়ুথায়া শহরের ওপর ইউনেস্কোর একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, 'যখন পুনরুদ্ধার করা রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়, সেই সময় ব্যাংককে একটি নতুন শহর তৈরি হয়। যা তৈরির সময় আয়ুথায়ার শহুরে ধাঁচ এবং স্থাপত্যকে অনুকরণ করার একটি সচেতন চেষ্টা দেখা গিয়েছিল। যা ছিল অযোধ্যার পৌরাণিক শহরের পরিপূর্ণতা।' কম্বোডিয়ায়, ১২ শতকে নির্মিত আঙ্কোরভাট মন্দির কমপ্লেক্সেও রামায়ণের ছবি আছে। এটি মূলত বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা একটি মন্দির।
আরও পড়ুন- রামজন্মভূমি আন্দোলন কংগ্রেস ছাড়া অসম্পূর্ণ, গুরুত্ব পায়নি নেহরুর মতামতও