রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এক বিতর্কিত পদক্ষেপে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি এবং জালিয়াতির সাথে জড়িত ঋণ অ্যাকাউন্টগুলোকে তাদের বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আপসে নিষ্পত্তির অনুমতি দিয়েছে। ব্যাংকারদের একাংশ বলছেন যে আরবিআইয়ের সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এবং আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, এই ধরনের ঋণখেলাপি, প্রতারকদের অন্যায় কাজগুলো এভাবে ক্ষমা করা হচ্ছে। আর, সাধারণ নাগরিকদের, বিশেষ করে আমানতকারীদের কাঁধে সেই ঋণখেলাপিদের অপকর্মের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আপস নিষ্পত্তি কী?
এই ব্যবস্থায় ঋণগ্রহীতা ব্যাংককে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, সে যে পরিমাণ ঋণ ব্যাংকের থেকে নিয়েছে, তা শোধ দিতে পারবে না। বদলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেবে। তা, ঋণ নেওয়া অর্থের থেকে বেশ কম। সেই অর্থ শোধ করার বদলে, ব্যাংকগুলো তাঁদের ঋণ মকুব করে দেবেন। ব্যাংক সেই প্রস্তাবে সম্মত হলে, ঋণগ্রহীতারা কথামতো অর্থ ব্যাংকে জমা দেন। পরিবর্তে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণগ্রহীতাদের ঋণ মকুব করে দেন। এটা অবশ্য প্রথম নয়। গত দুই দশকে ব্যাংকগুলো বেশ কিছু আপস মীমাংসা অনুমোদন করেছে। সেই কাহিনি প্রথম ইউপিএ জমানা থেকেই শুরু হয়েছিল। মোদী সরকারের আমলেও চলছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর বেজায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ গ্রাহকদের। অর্থাৎ যাঁরা আমানতে টাকা রেখে ব্যাংকের সুদের বিনিময়ে সংসার চালান, সেই সব ব্যক্তিদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন- ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সম্পর্কে রয়েছে নানা কাহিনি, বাস্তব চিত্রটা ঠিক কীরকম?
রিজার্ভ ব্যাংক কী বলছে?
কোনও ঋণখেলাপির সঙ্গে আপস নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর ১২ মাস বা একবছর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকের থেকে নতুন করে কোনও ঋণ নিতে পারবেন না। কিন্তু, তারপর ঋণ নিতে পারবেন। বিশেষজ্ঞরা বরাবর আরবিআইয়ের এই ফ্রেমওয়ার্ক ফর কম্প্রোমাইজ সেটেলমেন্ট বা টেকনিক্যাল রিট-অফকে ক্ষতিকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেন। তাঁরা মনে করেন, আরবিআইয়ের এই সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে দেবে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টার ক্ষতি করবে। এই ব্যবস্থা অসাধু ঋণগ্রহীতাদের পুরষ্কৃত করে। যার ফলে সৎ ঋণগ্রহীতাদের প্রতি অবিচার করা হয়।