কোভিড-১৯ ভাইরাস বায়ুবাহিত এ তথ্য সম্প্রতি পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু জলেও কি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে? এ ব্যাপারে বিশদে কিছু জানতে পারা না গেলেও সুইমিং পুলে আপাতত বিধি নিষেধ জারি রাখছে কর্তৃপক্ষ। এতদিন মনে করা হত সুইমিং পুলের ক্লোরিন জল হয়তো করোনাকে দূরে রাখতে সক্ষম হবে। কিন্তু নিয়মের ফাঁস বলছে আশঙ্কা আছে সেখানেও।
সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা কি তবে নিরাপদ?
সমীক্ষা বলছে ক্লোরিন জলে ডুবে থাকলে এর চেয়ে সুরক্ষিত আর কিছুই নেই। আশেপাশে ঘেঁষতে পারবে না করোনা। কিন্তু সমস্যা হল এক সুইমিং পুলে কতজন সাঁতারু নামছেন। পুলে যদি জনসমাগম বেশি হয় তাহলে সামাজিক দূরত্ব বিধি শিকেয় উঠবে। আরেকজনের হাঁচি কিংবা কাশি কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠতেই পারে। সেখানে বায়ুবাহিতই হবে কোভিড-১৯ ভাইরাস। তাই সাঁতারে গেলেও হাত স্যানিটাইজ করা, সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলাই কাম্য, এমনটাই মনে করছেন এইমস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কমিউনিটি রোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডা: চন্দ্রকান্ত পান্ডব।
তিনি এও বলেন, এই জীবাণু জলে সংক্রামিত হতে পারে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু নাকের সঙ্গে জলের সংস্পর্শ হচ্ছে। সেখান থেকে যে এই ভাইরাস অপরজনের দেহে যাবে না সেটা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। আর কোথাও কখনই ১০০ শতাংশ নিয়মবিধি মানা সম্ভব নয়। এই সীমাবদ্ধতাগুলি আমাদের সবসময়ই মাথায় রাখাতে হবে। তাই এই আবহে আমাদের কোনও রিস্ক নেওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুন, ভাইরাসে ‘করোনা’ নেই! বিশ্বকে অবাক করে নয়া রূপ নিল কোভিড
সুইমিং পুলকে কতটা সুরক্ষিত রাখে ক্লোরিন জল?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বলা হয়েছে সাঁতারের ক্ষেত্রে ক্লোরিনেটেড পুল একদম নিরাপদ। কিন্তু তা যথাযথ হতে হবে। মার্কিন মুলুকে সুইমিং পুলকে নিরাপদ রাখতে জলে দেওয়া হয় ২.০ পিপিএম ক্লোরিন। এই পরিমাণের ক্লোরিন জলে থাকলে তা ভাইরাসকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। কিন্তু ক্লোরিন ব্যবহারে মনে রাখতে হবে তা যেন কখনই ৩ পিপিএম-এর সীমা পেরিয়ে না যায়। তাহলে চামড়া এবং চোখের জন্য তা ভয়ঙ্কর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এমনকী সেই জল পাকস্থলীতে পৌঁছলে আলসার পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। তবে চিকিৎসকদের মতে ভাইরাস আটকানো গেলেও করোনার মত সংক্রমিত ভাইরাস আটকানো যাবে কি না সে বিষয়ে তাঁরা নিজেরাও এখনও নিশ্চিত নন।
তবে অন্যান্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
সাঁতার যদি কাটতেই হয় তবে বেশ কিছু নিয়ম মানতেই হবে। সুইমিং পুলে কমপক্ষে দূরত্ব বিধি মানতে হবে। ছোটো পুলে একসঙ্গে একাধিক সাঁতারু নামবে না কোনওভাবেই। বড় পুলে দূরত্ব বিধি মেনে সংখ্যা বিচার করতে হবে। এমনকী সাঁতার কাটার সময় যেন কেউ একে অপরের কাছাকাছি না আসে তা লক্ষ্য রাখতে হবে। হাত স্যানিটাইজেশন থেকে কাপড় বদলানোর ঘর পরিস্কার রাখার দিকে যথাযথ নজর দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
ভারতের সুইমিং পুলগুলিতে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে?
করোনা আবহে সাঁতারুদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে সাঁতার প্রশিক্ষণগুলি তা নজরে রাখছে স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই)। তবে এ ব্যাপারে আইন মেনেই শেষ কথা বলার অধিকার রয়েছে রাজ্য সরকারের। প্রখ্যাত সাঁতারুরা অনশ্য এখনই জলে নামতে চাইছেন না করোনা সংক্রমণের ভয়ে। এমতাবস্থায় বেতন সমস্যায় পড়েছেন কোচ, ক্লিনার্স, লাইফগার্ডসরা। সমস্ত প্রক্রিয়া লকডাউনে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক ঘাটতিতে সুইমিং পুল যথাযথ রাখার কাজ করাও সমস্যা হয়েছে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন