scorecardresearch

Explained: ঘুমন্ত চার জওয়ান খুন, নৃশংসতার সাক্ষী ভাতিন্দা সেনা ছাউনি কীভাবে তৈরি হল?

দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী এই শহরের দুর্গ।

Bathinda military station

ভাতিন্দা সেনা ছাউনি। বুধবার এখানেই চার জন সেনা জওয়ানকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। এই সেনা ছাউনি দেশের বৃহত্তম সেনা ছাউনিগুলোর অন্যতম। ৫০ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে এই সেনা ছাউনি বিস্তৃত। জাতীয় মহাসড়ক ভাতিন্দাকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

সেনার ১০ কোরের সদর দফতর, চেতক কর্পস নামে পরিচিত। এই সেনা ছাউনিটি দক্ষিণ পঞ্জাব এবং পার্শ্ববর্তী রাজস্থানের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা সেনা ছাউনিগুলোর অন্যতম। এখান থেকেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সেনার কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। পাশাপাশি, সেনাবাহিনীর অস্ত্র-সহ সরঞ্জামের ঘাঁটিও এই ছাউনি।

মূলত, যে এলাকাটি এখন ১০ কর্পসের অধীনে, আগে তা ছিল ১১ কর্পসের দায়িত্বে। এই ১১ কর্পসের সদর দফতর জলন্ধরে। কিন্তু, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরের বছরগুলোয় সেনার সম্পদ বণ্টনের পর ভাতিন্দায় সেনার একটি নতুন কর্পসের সদর দফতর তৈরি হয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল এমএল তুলি ছিলেন এই নতুন কর্পসের প্রথম জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি)। তিনিই ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে কর্পসের সদর দফতরের উদ্বোধন করেছিলেন।

কয়েক বছর আগে সেনা ছাউনি আকারে বড় হয়েছে। কর্পসের সদর দফতর এবং অ্যাটেনডেন্ট ইউনিটগুলোর সেট-আপ ছাড়াও, পদাতিক, সাঁজোয়া, আর্টিলারি, আর্মি এভিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার, সিগন্যাল এবং অন্যান্য ডিভিশনের অনেকগুলো ইউনিট এখানে আছে। সব মিলিয়ে এক বিশাল এলাকাজুড়ে এই ছাউনি। সব মিলিয়ে ভারতীয় সেনার একটি অংশ, সরঞ্জামের বিরাট কার্যালয় এখানে রয়েছে।

একটি অত্যাবশ্যক গোলাবারুদের ভাণ্ডারও ভাতিন্দা সেনা ছাউনির অংশ। শহর থেকে দূরে বলেই এই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর ছাউনি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে শহরটি ছড়িয়ে পড়ায় এই সেনাছাউনি বর্তমানে অসামরিক এলাকা দিয়ে ঘেরা। ভাতিন্দার সামরিক ইতিহাস অনেক বেশি পুরোনো। পশ্চিম থেকে আক্রমণকারীদের কাছে এই জায়গা ছিল সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের কেন্দ্রে একটি ঐতিহাসিক দুর্গ সেসব ইতিহাসের প্রতীক হয়ে আজও সাক্ষ্য দেয়। একসময় আক্রমণকারী হুনদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য ষোড়শ শতকে ওই দুর্গ ‘কিলা মুবারক’ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। পরবর্তী শাসকরা এতে বেশ কিছু সংযোজন ও পরিবর্তন করেছিলেন।

ব্রিটিশ শাসনকালে ভাতিন্দা এবং এর আশেপাশের এলাকা ব্রিটিশ পতাকার অধীনে ছিল। আর, মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের এবং খালসা রাজের হাতের বাইরে ছিল। ১৯০০-এর দশকের গোড়ার দিকেই, ব্রিটিশরা ভাতিন্দায় তাদের সামরিক পদচিহ্ন প্রসারিত করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, এই কিলা মুবারক একটি গুরুত্বপূর্ণ সেনা নিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছিল। যা হাজার হাজার যুবককে ব্রিটিশ সেনায় যুক্ত করে। ধীরে ধীরে, অবিভক্ত ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সামরিক বাহিনীর জন্য ভাতিন্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন- প্রযুক্তির হাত ধরেই ‘ভ্রমণ বিপ্লব’, বন্দে ভারতে উপত্যকায় ‘অর্থনীতির ভোলবদল’

সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, ভাতিন্দা সেনা ছাউনিতে দ্রুত আধুনিকীকরণ ঘটেছে। বিবাহিত অফিসার এবং জওয়ানদের জন্য নতুন আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সেনা ছাউনির অভ্যন্তরে বিগত কয়েক দশক ধরে ব্যাপক নির্মাণকাজ হয়েছে। তারপরও এখানকার বিস্তীর্ণ জমি আজও জনবসতিহীন। আর বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। ছাউনির যে এলাকায় সেনার ইউনিটগুলো রয়েছে, সেই জায়গাগুলো অবশ্য ঝাঁ চকচকে। শপিংমল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, পার্ক এবং গ্রিন বেল্টের মতো বেশ কয়েকটি নাগরিক সুবিধা সেনাছাউনির অভ্যন্তরে রয়েছে। যা এই সেনাছাউনিকে শহরের বাকি অংশের চেয়ে একদমই আলাদা বলে বুঝিয়ে দেয়।

একটি জাতীয় সড়ক এই সেনা ছাউনিকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবসময়ই কঠোর ছিল। বিভিন্ন চেকপয়েন্ট, সেনাবাহিনীর কর্মী এবং মিলিটারি পুলিশ দ্বারা পরিচালিত। জাতীয় সড়ক এবং ভাতিন্দা স্টেশনে যাওয়ার পথেও তা চোখে পড়ে।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Explained news download Indian Express Bengali App.

Web Title: How the bathinda military station came into being