Advertisment

Explained: ইন্ডিয়া আর ভারত! ব্রিটিশরাজের অবসানে কীভাবে বাছা হয়েছিল দেশের নাম?

গণপরিষদে আম্বেদকর-সহ অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
India

গণপরিষদের সভায় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং অন্যান্য নেতারা। (ফাইল ছবি)

'ইন্ডিয়া, অর্থাৎ ভারত হবে রাজ্যগুলির একটি সংঘ।'- সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম কী হবে, ভারতের সংবিধানের ১ম অনুচ্ছেদ কী হবে, তা নিয়ে গণপরিষদে আবেগঘন বিতর্ক হয়েছিল। সেই সময় উপস্থিত প্রতিনিধিরা কে কী বলেছিলেন? কীভাবেই বা ধারাটি গৃহীত হয়েছিল?

Advertisment

‘ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারত’ নিয়ে নানা যুক্তি

অনুচ্ছেদ ১এ নিয়ে প্রথম বিতর্ক ১৯৪৮ সালের ১৭ নভেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে, গোবিন্দবল্লভ পন্থের পরামর্শে, নামটির আলোচনা পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, ডক্টর বিআর আম্বেদকর আইনের চূড়ান্ত সংস্করণ সভায় উপস্থাপন করেছিলেন। যাতে, 'ইন্ডিয়া' এবং 'ভারত' উভয়ই অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেশ কয়েকজন সদস্য ‘ইন্ডিয়া’ নাম ব্যবহারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, তাঁরা ‘ইন্ডিয়া’ নামটিকে ঔপনিবেশিক স্মৃতির স্মারক হিসেবে দেখেছিলেন।

শেঠ গোবিন্দ দাসের যুক্তি

জব্বলপুরের শেঠ গোবিন্দ দাস ভারতকে ইন্ডিয়ার আগে স্থান দিতে চেয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন সদস্যের দাবি ছিল যে ভারত-এর বিকল্প হিসেবে 'ইংরেজি ভাষায়' ইন্ডিয়া নামটি চালু থাকুক। আবার একদলের বক্তব্য ছিল, 'ইন্ডিয়া, যা হল ভারত' এই কথাটা ঠিক গ্রহণযোগ্য নয়। শেঠ গোবিন্দ দাস বলেছিলেন, 'ভারতের বাইরেও ভারত নামের পরিচিতি থাকুক'।

হরিবিষ্ণু কামাথের যুক্তি

সেই সময় হরিবিষ্ণু কামাথ আইরিশ সংবিধানের উদাহরণ ব্যবহার করে যুক্তি দিয়েছিলেন যে 'ইন্ডিয়া' শব্দটি ভারত-এর অনুবাদ মাত্র। তিনি বলেন, 'যদি সভার সম্মানিত সহকর্মীরা ১৯৩৭ সালে পাস করা আইরিশ সংবিধানের দিকে একটু নজর দেন, তাঁরা দেখতে পাবেন যে আইরিশ ফ্রি স্টেট আধুনিক বিশ্বের কয়েকটি দেশগুলির মধ্যে একটি, যা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তার নাম পরিবর্তন করেছে এবং এর সংবিধানের চতুর্থ অনুচ্ছেদে নাম পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। স্বাধীন আইরিশ রাষ্ট্রের সংবিধানে লেখা আছে, দেশের নাম ইয়ার, ইংরেজি ভাষায় আয়ারল্যান্ড।'

হরগোবিন্দ পন্থের যুক্তি

গণপরিষদে হরগোবিন্দ পন্থ সংযুক্ত প্রদেশের পার্বত্য জেলাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।, তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে উত্তর ভারতের জনগণ, 'ভারতবর্ষ চায় এবং অন্য কিছু নয়।' পন্থ বলেন, 'ইন্ডিয়া নামটি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। আর, কেন নামটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, তার কারণ বুঝতে ব্যর্থ।' পন্থ বলেন, 'আমাদের অবশ্যই জানা উচিত যে এই নামটি আমাদের দেশকে বিদেশিরা দিয়েছিল। যারা এই দেশের সম্পদের কথা শুনে এই দেশের প্রতি প্রলুব্ধ হয়েছিল এবং আমাদের দেশের সম্পদ অর্জনের জন্য আমাদের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। তারপরও যদি আমরা ভারত শব্দটিকে আঁকড়ে থাকি, তাহলে এটি কেবল দেখাবে যে বিদেশি শাসকদের দ্বারা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই অপমানজনক শব্দটি নিয়ে আমরা মোটেও লজ্জিত নই।'

প্রাচীন সূত্রের উদাহরণ

শেঠ গোবিন্দ দাস যুক্তি দিয়েছিলেন যে বিষ্ণু পুরাণ এবং ব্রহ্ম পুরাণে 'ভারত' শব্দের উল্লেখ আছে। অন্যরা বলেন যে সপ্তম শতাব্দীর চিনা পর্যটক হিউয়েন সাং দেশটিকে ভারত বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই ব্যাপারে শেঠ গোবিন্দ দাসের বক্তব্য ছিল, 'দেশের নাম ভারত রেখে আমরা এমন কিছু করছি না যা আমাদের এগিয়ে যেতে বাধা দেবে। আমাদের অবশ্যই আমাদের দেশের এমন একটি নাম দেওয়া উচিত, যা আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের সংস্কৃতির জন্য উপযুক্ত।'

'ইন্ডিয়া' নামের পিছনে যুক্তি

এই প্রসঙ্গে শেঠ গোবিন্দ দাস একটি পুস্তিকারও উল্লেখ করেছিলেন। ওই পুস্তিকার ওপর ভিত্তি করে তিনি বলেছিলেন যে ইন্ডিয়া শব্দটি ভারত-এর চেয়েও বেশি পুরোনো। তিনি বলেন যে, 'আমি চাই, এটি নথিতে থাকা উচিত যে ইন্ডিয়া শব্দটি ভারতের চেয়েও পুরোনো। 'ইদয়ম' এবং 'ইদে'-র অর্থ আগুন। 'আইদেনিয়া' আগুনের বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং 'ইদা'-র অর্থ স্বর।

'ভারত' নামের পিছনে যুক্তি

কামাথ এর প্রেক্ষিতে ধর্মগ্রন্থ থেকে নেওয়া ভারত বা ভারতবর্ষ বা ভারতভূমি- সম্ভাব্য নাম হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। কামাথ বলেছিলেন, 'ইতিহাসবিদ এবং দার্শনিকরা এই দেশের নামের ব্যাপারে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছেন। বিশেষ করে এই ভারত নামের উৎপত্তির ব্যাপারে। ভারত নামের উৎপত্তি সম্পর্কে সকলেই একমত নন। কেউ কেউ এই নামের কারণ হিসেবে বলেন, দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার পুত্রের থেকে এই নাম এসেছে। রাজা ভরত ছিলেন 'সর্বদামন' বা সর্ব-বিজেতা নামেও পরিচিত। তিনি এই প্রাচীন দেশে তাঁর আধিপত্য এবং রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর পর থেকে এই জমিটি ভারত নামে পরিচিত হয়েছিল।'

আরও পড়ুন- ‘ভারত’ নাম নিয়ে এত বিতর্ক! এই নামের আদৌ কোনও ভিত্তি আছে?

আম্বেদকরের বিরতি

ড. আম্বেদকর সভাকে বেশ কয়েকবার মনে করিয়ে দেন যে সভ্যতা সংক্রান্ত বিতর্ক অপ্রয়োজনীয়। যেহেতু সদস্যরা ভারত নামের বিরোধিতা করেননি। কামাথের বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলে আম্বেদকর জবাবে বলেন, 'আমরা এখন শুধু আলোচনা করছি যে 'ভারত' শব্দটি 'ইন্ডিয়া' শব্দের পরে আসা উচিত কি না।' কিশোরীমোহন ত্রিপাঠী যখন তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় বলার চেষ্টা করেন যে ভারত শব্দটি সকলকে এদেশের অতীত গৌরব মনে করিয়ে দেয়, আম্বেদকর পালটা প্রশ্ন করেন যে এসব বলা প্রয়োজনীয় কি না! প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, 'অনেক কাজ করতে হবে।'

Constituition of India Ambedkar Modi Government Bharat
Advertisment