Covid-19 Antibody Test: কোভিডের ভ্যাকসিন তো নিয়েছি, তাতে কি একে প্রতিরোধের শক্তি তৈরি হয়েছে রক্তে? রক্তে কি করোনার অ্যান্টিবডি আছে? এই প্রশ্ন ঘুরছে ঘরে ঘরে। আর প্রশ্নের ধাক্কায় অনেকে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাচ্ছেন। বুঝে নিতে চাইছেন, কোভিডের বিরুদ্ধে তিনি আদৌ লড়াকু কি না? দেশ এখন নতুন করে খুলে যাওয়ার দিকে এগচ্ছে, সাধারণ মানুষের এই নিশ্চিন্তি প্রয়োজন। চৌকাঠ পেরনোর আগে তাঁরা করোনাক্ষম কি না জেনে নিতে চাইছেন। অনেক দেশ প্রতিষেধক-নেওয়া পর্যটকদের অ্যান্টিবডি টেস্ট করানো বাধ্যমূলক করে দিয়েছে। অনেক অফিসও কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার আগে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার রিপোর্ট দেখতে মরিয়া।
কিন্তু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই পরীক্ষা কি সত্যিই করোনা সংক্রমণের প্রতিরোধশক্তির নির্দেশক হয়ে উঠতে পারে?
অ্যান্টি-কথা
দেহের প্রতিরোধ শক্তি বা ইমিউন সিস্টেমের অংশ হচ্ছে অ্যান্টিবডি। ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে অ্যান্টিবডির দল। এরা প্রোটিন দিয়ে তৈরি। জীবাণু শরীরে হামলা চালালে এরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। যদি সেই জীবাণুর অ্যান্টিবডি আপনার শরীরে না থাকে, তা হলে তার হামলার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তার জন্য একটা সময় লাগে। তাতেই জল (অসুখ) বিপদসীমার উপরে চলে যেতে পারে। ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলে সেই অসুখের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, শরীর আগে থেকেই প্রস্তুত। ফলে সেই জীবাণু শরীরে ঢুকলেই, তাকে চিনতে পেরে অ্যান্টিবডি চলে আসে, শুরুতেই রোগের বিনাশ। সাধারণত আপনার রক্তে থাকা কোনও একটি রোগের অ্যান্টিবডি আরেকটির জীবাণুর চেহারা চিনতে পারে না।
আরও পড়ুন, তৃতীয় তরঙ্গ এলে, শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবে, এই ভবিষ্যদ্বাণী অবাস্তব, অনুমান নির্ভর, অবৈজ্ঞানিক
অ্যান্টিবডির গতিপ্রকৃতি
কোনও জীবাণুর সংক্রমণে সেটির পাঁচ ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় এর মধ্যে তিনটির ব্যাপারে জানা যায়। এই তিনটি হল: ইমিউনোগ্লোবুলিনস-এ (immunoglobulins A) বা IgA, ইমিউনোগ্লোবুলিনস-এম (IgM) এবং ইমিউনোগ্লোবুলিনস-জি (IgG)। রোগের আক্রমণ ঘটলে রক্তের শ্বেত কণিকা, মূলত বি লিম্ফোসাইটস (B lymphocytes), প্রথমে তৈরি করে IgM অ্যান্টিবডি, এর পর সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জন্মায় IgG অথবা IgA। IgG রক্তে সহজেই মেলে, ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এদেরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা। IgA অ্যান্টিবডি মেলে স্যালাইভার মতো বডি সিক্রেশন থেকে। সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, কোভিড নাইন্টিনের IgM ও IgG অ্যান্টিবডি জন্ম নেয় এর সংক্রমণের দুই ও তিন সপ্তাহের মধ্যে। কিন্তু এখনও জানা যাচ্ছে না, কত দিন এরা রক্তে সক্রিয় থাকে। এ ছাড়াও কতগুলি জটিলতা রয়েছে। কেউ যদি অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় পজিটিভ আসেন, তা হলে সাধারণ ভাবে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি তাঁর রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। অনেকের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফল পজিটিভ হলেও, তাদের আসলে প্রতিরোধ শক্তি নেই দেখা যাচ্ছে। তিনি আসলে ফলস অ্যান্টিবডি পজিটিভ। আবার দেখা গেল, অ্যান্টিবডি পজিটিভ হওয়ার বেশ কিছু দিন পর কারওর করোনা হল, তিনি চিন্তায় পড়লেন, আসলে একটি নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পর তাঁর রক্ত থেকে অ্যান্টিবডিগুলি উধাও হয়ে গিয়েছে।
অ্যান্টি-সমীক্ষা
আন্তর্জাতিক ব্রিটিশ সংস্থা ককরেন (Cochrane)-এর সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, মাত্র ৩৮ শতাংশ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফল ঠিকঠাক। চারটি দেশে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই এটি খতিয়ে দেখে IgG/IgM অ্যান্টিবডির হাল কী। দেখা যায়, করোনায় উপসর্গ থাকার প্রথম সপ্তাহে এর সংবেদনশীলতার মাত্রা (সেনসিভিটি) থাকে ৩০.১%, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৭২.২%, তৃতীয় সপ্তাহে-- শীর্ষে, পৌঁছয় ৯১.৪ %-এ। এই সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ হল, কোভিড সংক্রমণের ১৫ কিংবা তার চেয়ে বেশি দিন পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করলে এর কার্যকারিতা স্পষ্ট বোঝা যায়। ২০২০ সালে সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সি (SAGE)-র জন্য একটি সমীক্ষা করে সায়েন্টিফিক প্যান্ডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা গ্রুফ অন বিহেভিয়ার্স (SPI-B)। রিপোর্টে বলা হয়, যদি জনসংখ্যার ৫ % কোভিড সংক্রমিত হয়ে থাকে, তা হলে করোনা সংক্রমিত হননি এমন ২৮ %-এর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা পজিটিভ আসতে পারে।
আরও পড়ুন, সর্দি হলে করোনা কাবু করতে পারবে না, এমনই তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়! জানুন কী ভাবে সর্দি কামাল করছে
আমি পজিটিভ, আমি সুরক্ষিত?
কিছু অসুখের ক্ষেত্রে শরীরে একবার অ্যান্টিবডির জন্ম হলেই হল, সারা জীবন সেই রোগটি আপনাকে ধরতে পারবে না। আবার কিছু অসুখে অ্যান্টিবডি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়, প্রতিরক্ষাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। গবেষকরা মনে করেন, করোনাভাইরাসের কিছু অ্যান্টিবডি সার্স কোভ টু-র বড়সড় কামড় থেকে রক্ষা করে দীর্ঘ সময়। অ্যান্টিবডি থাকা এবং আগামীতে করোনা সংক্রমণ থেকে কত দিনের জন্য সুরক্ষা মিলবে, তা নিয়ে অবশ্য আরও গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে।
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অবশ্য মনে করে, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা গুরুত্বহীন। কারণ, করোনা থেকে কতটা সুরক্ষা পাওয়া যায়, তা এর মাধ্যমে স্থির করা যায় না, বা সেটা অনুচিতও। এ ছাড়া ভুল (ফলস) ফলাফল আসার সম্ভাবনাও বেশ ভালই রয়েছে, তা-ও চিন্তার বটে। এখন যদি কারওর ফলস পজিটিভ রেজাল্ট আসে, তা হলে তিনি কোভিড বিধি মানায় শিথিল হয়ে উঠতে পারেন। এতে সংক্রমিত হয়ে পড়তে পারেন ওই ব্যক্তি। আবার এমনও হতে পারে, অ্যান্টিবডি পজিটিভ আসার পর তিনি সংক্রমিত হলেন, কিন্তু উপসর্গহীন, তাতে করে অজান্তেই বহু মানুষের কোভিডের কারণ হয়ে উঠলেন। তার মধ্যে কারওর প্রাণও যে যাবে না, বলা যায় না। অনেকে বলছেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করালে করান, কিন্তু ফলাফল পজিটিভ এলে তাকে চূড়ান্ত বলে ধরবেন না, মনের কোনায় রাখবেন না তাকে। মনে করবেন যেন এমন কোনও পরীক্ষাই হয়নি আপনার। কোনও রকম শিথিলতা দেখালে করোনা হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে সরবেন না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন