দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানচিত্র। (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক)
ঠিক ৫২ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৩০ ডিসেম্বর, উত্তর-পূর্ব এলাকা (পুনর্গঠন) আইন এবং উত্তর-পূর্ব কাউন্সিল আইন- সংসদে তৈরি হয়েছিল। যার সঙ্গে জন্ম নিয়েছিল, উত্তর-পূর্ব ভারত নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ধারণা। যার মধ্যে অসমও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এমনটাই দ্য প্রবলেম অফ চেঞ্জ: এ স্টাডি অফ নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া (১৯৯৭)-এ লিখেছেন বিপি সিং। তিনি একজন প্রাক্তন আমলা। ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত সিকিমের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আজ, 'উত্তরপূর্ব ভারত', বা শুধু 'উত্তর-পূর্ব' বলতে, ভারতীয়রা সাধারণত বৈচিত্র্যময় অঞ্চলকে বোঝান। যে অঞ্চলের বাসিন্দারা 'উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়' বলে পরিচিত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শব্দটির সৃষ্ট হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। যার সঙ্গে মিশে আছে উত্তর-পূর্ব ভারত 'আবিষ্কার'-এর গল্প।
Advertisment
উত্তর-পূর্বাঞ্চল উত্তর-পূর্ব ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে আটটি রাজ্য নিয়ে গঠিত - অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং ত্রিপুরা। যা উত্তর-পূর্ব কাউন্সিলের একটি অংশ। এই উত্তর-পূর্ব কাউন্সিল একটি বিধিবদ্ধ উপদেষ্টা সংস্থা। যা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করে। প্রাক-স্বাধীনতা সময়ে এই আটটি রাজ্যের পাঁচটি (অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম) ঔপনিবেশিক অসমের অংশ ছিল। মণিপুর এবং ত্রিপুরায় ছিল রাজতন্ত্র। সেখানে বসবাসকারী ব্রিটিশ অফিসাররা অসমের গভর্নরকে রিপোর্ট করতেন। সিকিম, এই আটটি অঞ্চলের মধ্যে ছিল সবচেয়ে অনন্য। আইনগতভাবে স্বাধীন কিন্তু ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীনে ছিল এই অঞ্চল। এটি ১৯৪৭ সালে একটি স্বাধীন দেশ হয়ে যায়। তারপর ১৯৭৫ সালে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০১ সালে সিকিমকে উত্তর-পূর্ব কাউন্সিলের সদস্য করা হয়। যার মাধ্যমে সিকিম আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অংশ হয়ে ওঠে।
ব্রিটিশ আমলে 'সীমান্ত' প্রদেশ অসম ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি 'সীমান্ত প্রদেশ'। অনেকটা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বা আজকের পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার মত। যেখানে রাজনৈতিক এবং আইনি ব্যবস্থা বাকি দেশের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল। প্রত্যক্ষ শাসন সীমাবদ্ধ ছিল প্রশাসনিক সীমানার পিছনের অঞ্চলগুলোয়। যা অসমের 'সেটেল্ড ডিস্ট্রিক্ট' নামে পরিচিত ছিল। সেগুলো বর্তমানে অসম রাজ্য এবং বাংলাদেশের সিলেটের অধিকাংশ অঞ্চল। এই জেলাগুলো ঊনবিংশ শতাব্দীতে উদ্ভূত চা, কয়লা এবং তেল শিল্পের সমৃদ্ধির কারণে ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই জেলাগুলো গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থল ছিল। আর, এখনও তাই রয়েছে। এই জেলাগুলির বাইরে 'পার্বত্য এলাকা' বিভিন্ন উপজাতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেখানে ব্রিটিশ শাসন নামমাত্র চলত। সেই সময় এই জনবসতি কম পার্বত্য জেলাগুলো আন্তর্জাতিক সীমান্তের বাফার জোন বলে ধরা হত। তার নাম ছিল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ট্র্যাক্টস (আধুনিক অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ড)। এই অঞ্চলকে ১৯১৪ সালে নথিভুক্ত করা হয়। আর, অসমের এই পার্বত্য অঞ্চলের লাগোয়া ছিল তিব্বত এবং বার্মার আন্তর্জাতিক সীমান্ত।