প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার টুইট করে সমস্ত সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ছেড়ে দেবার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এই রবিবার, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের সমস্ত সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ছেড়ে দেব ভাবছিলাম। আপনাদের জানাব। মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার আগে থেকেই সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে আসছেন। এমনকি তিনি সারা পৃথিবীর যেসব নেতারা সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে এ ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে রহস্যভেদ করেছেন তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। মোদী জানিয়েছেন, "আমার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট সেইসব মহিলাদের ছেড়ে দেব যাঁদের জীবন ও কার্যাবলী আমাদের উৎসাহ জোগায়। এর ফলে তাঁরা লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে অনুপ্রেরণার সঞ্চার ঘটাতে পারবেন।"
মূলধারার রাজনীতিবিদদের মধ্যে সোশাল মিডিয়ার গুরুত্ব যাঁরা অনুধাবন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী তাঁদের অন্যতম। ২০০৯ সালে তিনি ফেসবুক ও টুইটারে সক্রিয় হন। ২০০৭ সালেই তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ছিল। এখন তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলের ফলোয়ার প্রায় ৫ কোটি ৩৩লক্ষ । এ ব্যাপারে তাঁর আগে রয়েছেন মাত্র দুজন। একজন বারাক ওবামা, তাঁর ফলোয়ার ১১ কোটি ৩৩ লক্ষ ও দ্বিতীয়জন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর ফলোয়ার ৭ কোটি ৩৩ লক্ষ। ইনস্টাগ্রামে কিন্তু তিনিই নেতাদের মধ্যে সবার আগে। বারাক ওবামার ইনস্টা ফলোয়ার মোদির চেয়ে ২ কোটি ৬৯ লক্ষ কম। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের ফলোয়ার ৪৫ লক্ষ ১০ হাজার। টুইটারে ভারতীয়দের মধ্যে তিনি অতীব আকর্ষণীয়, যাঁদের মধ্যে অনেকেই নরেন্দ্র মোদী তাঁদের ফলোয়ার বলে সগর্বে উল্লেখ করে থাকেন।
কিন্তু সব সোশাল মিডিয়া কি ছাড়া সম্ভব?
নিশ্চিত সম্ভব। ফেসবুক থেকে টুইটার বা ইনস্টাগ্রাম সব প্ল্যাটফরেমেই সম্পূর্ণ ভাবে অ্যাকাউন্ট মুছে দেবার ও নিষ্ক্রিয় করবার সুযোগ দেওয়া রয়েছে। নিষ্ক্রিয় করা মানে অ্যাকাউন্ট ডিলিট না করেও নিষ্ক্রিয় রাখা, যতদিন না পর্যন্ত ব্যবহারকারী ফের সেটি চালু করার ব্যাপারে মনস্থ না করছেন। আপনি যদি অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করেন, তাহলে পাসওয়ার্ড ও সংশ্লিষ্ট ইমেল অ্যাকাউন্ট নিরাপদে রাখবেন, কারণ ফের ওই প্ল্যাটফর্মে ফেরার জন্য সেগুলির প্রয়োজন পড়বে।
This Women's Day, I will give away my social media accounts to women whose life & work inspire us. This will help them ignite motivation in millions.
Are you such a woman or do you know such inspiring women? Share such stories using #SheInspiresUs. pic.twitter.com/CnuvmFAKEu
— Narendra Modi (@narendramodi) March 3, 2020
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব আপনি অস্থায়ীভাবে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে পারেন। অপোক্ষাকৃত নতুন সোশাল মিডিয়া টিকটকে ব্যবহারকারীরা তাঁদের অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ ডিলিট করতে পারেন। টুইটারে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করবার সুযোগ রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে আপনি অ্যাকউন্ট সম্পূর্ণ ডিলিট করতে পারেন।
২০১৮ সালের পিউ রিসার্চে দেখানো হয়েছে আমেরিকার ৫৯ শতাংশ সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা মনে করেন এসব প্ল্যাটফর্ম ছাড়া খুব শক্ত নয়। ৪০ শতাংশ মনে করেন, ছাড়ায় সমস্যা রয়েছে। এই দ্বিতীয় দলের পরিমাণ ২০১৪ সালের সার্ভের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে।
ফেসবুক ছাড়া বা ডিঅ্যাক্টিভেট করার মানে কী?
ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করবার বা পুরোপুরি মুছে দেবার সুযোগ রয়েছে। অ্যাকাউন্ট মুছে দিলে বা ডিলিট করবে আর তা সক্রিয় করা যাবে না, সমস্ত পোস্ট, ফোটো, ভিডিও চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে। তার আগে ফেসবুকের সমস্ত ডেটা ডাউনলোড করে নেবার সুযোগ রয়েছে এবং ফেসবুক তেমনটা করতেও বলে। মনে রাখতে হবে ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করার মানে এই নয় যে আপনার যে ফোটো অন্যরা পোস্ট করেছে সেগুলিও উড়ে যাবে। আপনি যে কনটেন্ট আপলোড করেছেন, সেগুলিই কেবল মুছে যাবে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলে ফেসবুকের মেসেঞ্জারের অ্যাকসেসও চলে যাবে। তবে আপনার পাঠানো মেসেজ প্রাপকরা দেখতে পাবেন।
অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলে অন্য কোনও অ্যাপে ফেসবুক লগ ইনও আর করা যাবে না। ফলে কোনও একটি অ্যাপে যদি সোশাল মিডিয়া দিয়ে সাইন আপ করে থাকেন, তাহলে সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিলিট করার আগে ওই অ্যাপের জন্য নতুন অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
তবে ফেসবুক ৩০ দিনের একটা সময়সীমা দিয়ে থাকে ডিলিট করার সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য। তারা ৩০ দিন পর থেকে মুছে দেবার প্রক্রিয়া শুরু করে। তারা জানিয়েছে প্রায় ৯০ দিন সময় লাগে সমস্ত ডেটা মুছে ফেলতে। তবে এই সময়ের মধ্যে ওই ডেটা অন্য কারও অ্যাকসেসের মধ্যে থাকে না।
ফেসবুক ডিঅ্যাক্টিভেট করলে প্রোফাইল গোপনে চলে যায়, কিন্তু পোস্ট, ফোটো বা ভিডিও মুছে যায় না। ফেসবুক মেসেঞ্জারও চালু থাকে, সেখানে কথা বলার সময়ে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকটাই দৃশ্যমান থাকে। আপনার নাম দিয়ে ফেসবুকে সার্চও করতে পারেন অন্যরা।
থার্ড পার্টি অ্যাপে ফেসবুক লগইনও জারি থাকে। চাইলেই ফেসবুক প্রোফাইল সক্রিয়ও করে তোলা যায়।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অস্থায়ীভাবে ডিঅ্যাক্টিভেট করা যায় কীভাবে
ফেসবুক সেটিংসে যান, সেখান থেকে ফেসবুক ইনফর্মেশনে।
নিষ্ক্রিয় করা বা মুছে দেওয়ার উপর ক্লিক করুন।
অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করার চুজ করুন, তারপর ক্লিক করুন অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেশনের উপর।
অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করতে গেলে পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
ফের অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করতে হলে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে যে ইমেল, মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতেন, তার প্রয়োজন পড়বে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে ডিলিট করতে গেলে কী করতে হবে?
প্রথমে লগিন করুন এবং আপনার ফেসবুক ইনফরমেশন ডাউনলোড করে নিন।
ইনফর্মেশন ডাউনলোড করা হয়ে গেলে ডিঅ্যাক্টিভেশন ও ডিলিশনের উপর ক্লিক করুন।
ডিলিট অ্যাকাউন্ট চুজ করার পর, অ্যাকাউন্ট ডিলিশনের উপর ক্লিক করুন। পাসওয়ার্ড দিতে হবে। একবার পাসওয়ার্ড দেওয়া হলে অ্যাকাউন্ট ডিলিটের প্রক্রিয়া চালু হবে।
ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ডিলিট বা ডিঅ্যাক্টিভেট করলে কী হয়!
অ্যাকাউন্ট ডিসেবল বা ডিঅ্যাক্টিভেট করার বা সম্পূর্ণ ডিলিট করার অপশন দেয় ইনস্টাগ্রাম। ডিঅ্যাক্টিভেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর প্রোফাইল, ফোটো, কমেন্ট এবং লাইক সবই গোপন হয়ে যায়। কিন্তু কোনও ডেটাই মুছে যায় না।
অ্যাকাউন্ট ফের লগ ইন করলে সেসব লুক্কায়িত ডেটা ফিরে আসে। আপনার যদি অনেক ফলোয়ার থাকে, তাহলে তারা আপনার অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাবেন না, ফোটো দেখতে পাবেন না।
ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলে কিন্তু অ্যাকাইন্ট, প্রোফাইল, ফোটো, ভিডিও, কমেন্ট, লাইক, ফলোয়ার সবই চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে। একবার ইনস্টা অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলে ওই ইউজারনেম দিয়ে আর অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না, বা অন্য কোনও অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও ওই ইউজারনেম যুক্ত করা যাবে না। ইনস্টাগ্রামে ডিলিটেড অ্যাকাউন্ট ফের সক্রিয় করার কোনও উপায় নেই।
ইনস্টাগ্রামে কেবলমাত্র ওয়েব ব্রাউজারে অ্যাকাউন্ট ডিলিট বা ডিঅ্যাক্টিভেট করা যায়। আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের এই সেটিং নেই।
টুইটার অ্যাকাউন্ট কি ডিলিট করা যায়? করলে কী হবে?
টুইটারে কেবল অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করা যায়। পুরোপুরি অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলবার সুযোগ টুইটারে নেই। টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করলে ডিসপ্লে নেম, ইউজারনেম, পাবলিক প্রোফাইল আর টুইটারের ওয়েবসাইটে দেখা যায় না, দেখা যায় না আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে।
ডিঅ্যাক্টিভেশনের বোতামে চাপ দেবার আগেই কিন্তু নিজস্ব সব ডেটা ডাউনলোড করে নিতে হবে।
নিষ্ক্রিয় করবার সময়ে ফের সক্রিয় করবার সময়ও বেছে নেওয়া যায়। এখন সেটিংয়ের পেজে দুটি অপশন রয়েছে, ৩০ দিন ও ১২ মাস। টুইটার যেহেতু পাবলিক প্ল্যাটফর্ম, ফলে অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করার পরেও অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত কিছু তথ্য গুগল বা বিংয়ের মত সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া যাবে।